কাশিমপুর কারাগারে মারজানের স্ত্রী সন্তান প্রসব করেছেন

Slider নারী ও শিশু

48010_f5

 

পাবনা; আমার ছাওয়াল অপরাধী, অপরাধ করব্যার য্যায়ে গুলি খায়ে মরিছে, তার শাস্তি সে পাইছে। তার লাশ নিয়ে আসার মতো ক্ষমতা আমাগ্যারে নাই। আমি গরিব মানুষ। যদি সরকার লাশটা পাবনা পর্যন্ত আন্যেদেয় তাইলে আমরা দাফন করত্যাম। জানালেন  নিহত জঙ্গি মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন। গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী নুরুল ইসলাম মারজান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে  বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। গত রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারজান ও তার সহকারী নিহত হয়।
মারজানের বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া গ্রামে। ১০ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় মারজান। পড়ালেখা করত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে। গেলো বছরের জানুয়ারিতে পাবনায় গ্রামের বাড়িতে এসে খালাতো বোনো প্রিয়তিকে বিয়ে করে চলে যায় চট্টগ্রামে। তারপর থেকে যোগাযোগ ছিল না পরিবারের সঙ্গে। এর মাঝে গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গি হামলায় সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনায় আসে মারজানের নাম। গত আগস্ট মাসে তার ছবি প্রকাশ করে নাম পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য জানতে চায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে মারজানকে নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার হিসেবে দাবি করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এরপর ১৫ আগস্ট তার নাম পরিচয় উদঘাটন করে পাবনার গণমাধ্যমকর্মীরা।
শুক্রবার সকাল দশটার দিকে মারজানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ মানুষের ভিড়। কেউ আসছেন, কেউ ফিরছেন। শোকাচ্ছন্ন স্বজনরা। মারজানের মা সালমা খাতুনকে দেখা গেলো ঘরে বসে কাঁদছেন। প্রতিবেশী মহিলারা মারজানের মাকে ঘিরে বসে আছেন। তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশিরা। বাড়িতে ঢুকতেই প্রতিবেশী ও মারজানের ছোট ভাই বনেরা এসে ঘিরে ধরলেন। সবার মধ্যেই এক অজানা আতঙ্ক।
শোকে বিহ্বল মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন। সকালে টেলিভিশনে মারজানের নিহতের খবর জানতে পারেন এলাকাবাসীসহ স্বজনরা। মারজানের মৃত্যুতে খুশি তার গ্রামের সাধারণ মানুষ। পাবনার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের আফুরিয়া পাটকিয়াবাড়ি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুর রহমান, কলেজ ছাত্র সাগর হোসেনসহ বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, মারজানের মৃত্যুতে আমরা খুশি, তার মৃত্যুর মধ্য আমাদের গ্রামসহ গোটা পাবনা কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এলাকাবাসী আরো জানায়, মারজান এলাকায় থাকার সময় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু কীভাবে সে জঙ্গির পথে পা বাড়িয়েছে তা কেউ বুঝতে পারেনি। তবে সে যেহেতু সন্ত্রাসের পথে ছিল, তাই তার মৃত্যুতে খুশি তারা। এলাকাবাসীর দাবি, আর যেন কেউ এভাবে জঙ্গি সন্ত্রাসের পথে পা না বাড়ায়। সরকার জঙ্গি উৎখাতের মাধ্যমে দেশে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তারা।
মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন আরো জানান, সকাল আটটার দিকে প্রতিবেশীদের মাধ্যমে ছেলের নিহতের খবর জানতে পারি। এখন মারজান যদি অপরাধী হয় তাহলে সরকার তার বিচার করছে। তবে ছেলের মুখ থেকে শুনতে পারলাম না সে কীভাবে জঙ্গি হলো, কারা তাকে জঙ্গি বানালো। সে কি সত্যি জঙ্গির সাথে জড়িত কিনা। এখন সরকার যদি আমার ছেলের লাশ বাড়িতে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করে তাহলে দাফনের ব্যবস্থা করবো। আর না দিলে আমার সামর্থ্য নেই যে ঢাকায় গিয়ে ছেলের লাশ নিয়ে আসবো।
মারজানের মা সালমা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলের মতো ছেলে এলাকায় নেই, আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন। তবে আমার ছেলে অপরাধ করছে, তাই তার শাস্তি হইছে, আমার কিছু বলার নাই। আমার কোনো দাবি বা চাওয়া পাওয়া কিছু নাই। আমিতো আগেই বলেছিলাম, মারজান যদি অপরাধী হয় তাহলে তার সাজা হোক। মারজানের মা সালমা খাতুন আরো বললেন, আমরা গরিব মানুষ। ছেলের লাশ আনার মতো টাকা নেই। সরকার যদি আমার ছেলের লাশটি বাড়িতে পৌঁছে দেয় তাহলে শেষ বারের মতো একবার দেখতাম। কে বা কারা তার ছেলেকে এই পথে নিল তিনি কিছুই জানতেন না। এদিকে মারজানের পরিবার দাবি করেন মারজানের স্ত্রী প্রিয়তি কাশিমপুর কারাগারে বন্দি আছে। গত ২২শে ডিসেম্বর সে কারাগারে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়। মারজানের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি পাওয়ায় পরিবারের লোকজন খুশি হলেও তার এক মাস বয়সী শিশু কন্যা ও স্ত্রীকে ফেরত দেবার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *