ঢাকা; রাজধানীর বেড়িবাঁধ এলাকায় বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গি সাদ্দাম হোসেনের পরিবার দাবি করেছে, ৯ মাস আগে তার শ^শুরবাড়ি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থেকে পুলিশ পরিচয়ে সাদ্দাম হোসেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল সাদ্দাম।
শুক্রবার দুপুরে রাজারহাট উপজেলার দুর্গম এলাকা চর বিদ্যানন্দে সাদ্দামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান তার বাড়ি। তখনও মৃত্যুর খবর পাননি পরিবারের সদস্যরা। সাদ্দামের পিতা তাজুল আলম মিয়া গেছেন ক্ষেতে কাজ করতে। আর বড় ভাই মিজানুর রহমান ঘরের বেড়া মেরামতে ব্যস্ত। তাদের সাথে সাদ্দামের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে তারা জানান, সাদ্দামের নামে ২টি মামলা রয়েছে। একটি জাপানী নাগরিক হত্যা, অন্যটি কাউনিয়ায় মাজারের খাদেম হত্যা। যার ওয়ারেন্ট এসেছে তাদের বাড়িতে। ২০১৬ সালের ১৪ই এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জের তার শ^শুরবাড়ি থেকে পুলিশ পরিচয়ে নিয়ে যাবার পর সন্ধান পাননি তারা। রাজারহাট থানায় গিয়েছিলেন সাদ্দামের খোঁজে। পুলিশ বলেছে তাকে আটক করা হয়নি। বাবা তাজুল আলম মিয়া বলেন, ‘জিডি করতে চাইছিলাম। কিন্তু পুলিশ জিডিও নেয়নি।’ কিছুক্ষণ পর বন্দুকযুদ্ধে তার নিহত হবার খবর দিলে তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। প্রকাশিত একটি ছবি দেখালে তারা প্রথমে চিনতে না পারলেও পরে চিনতে পারেন। এ সময় তার মা সুফিয়া বেগম আহাজারি শুরু করেন। পরে প্রতিবেশীরাও ছুটে আসেন। জানতে চান সাদ্দামের খবর। সাধারণ এক কৃষক পরিবারের সন্তান সাদ্দামের জঙ্গি হয়ে ওঠা বিষয়ে গ্রামবাসীরাও কিছুই জানেন না। প্রতিবেশী আনছার আলী ও কছিরন জানান, সাদাসিদে ও ভদ্র ছিলে ছিলো সাদ্দাম। সে কী করে জঙ্গি হলো বুঝতে পারছেন না তারা। স্থানীয় মেম্বার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সাদ্দামের কোন খবর পাচ্ছিনা। সাংবাদিকরা খালি ফোন করতেছে’। পরিবারের সদস্যরা জানান, সাদ্দাম লালমনিরহাট সরকারি কলেজে ইতিহাস বিভাগের ছাত্র ছিল। বিয়ের পর থেকে সে শ^শুরবাড়ি সুন্দরগঞ্জে ছিল। তবে পুলিশ পরিচয়ে সাদ্দাকে ধরে নিয়ে যাবার পর থেকে স্ত্রী ফারজানা ও তার একটি ছোট ছেলে সন্তান নিখোঁজ রয়েছে। তার বাবা জানান, জমি বিক্রি করে ভাইয়ারহাট বাজারে তাকে একটি সারের দোকান করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পুঁজি শেষ করার পর ব্যবসাও গোটাতে হয়। সাদ্দামের বাবা বলেন, ‘ছেলেকে যদি পুলিশ ধরেই নিয়া যায়; তাহলে বন্দুক যুদ্ধে মরে কেমনে।’ তিনি জানান, ছেলে তাদের অমতে প্রেম করে বিয়ে করার পর থেকে বাড়িতে থাকেন না সাদ্দাম। সেখানে গিয়ে কোন জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত ছিলেন কীনা তাদের জানা নেই। তারা আরো জানান, সাদ্দাম পাশর্^বর্তী কাউনিয়া উপজেলার চর তাম্বুলপুর দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও পাওটানা ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করার পর লালমনিরহাট সরকারি কলেজে ভর্তি হন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেম করে বিয়ে করেন ফারজানা নামের আর এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে। ধরে নিয়ে যাবার ৩ মাস পরে তার একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। বর্তমানে সাদ্দামের স্ত্রী ও সন্তান কোথায় আছে জানেন না তার পরিবারের সদস্যরা। কুড়িগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী জানান, কুড়িগ্রামের গাড়িয়ালপাড়ায় ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় ২ নং চার্জশীটভুক্ত আসামী ছিল সাদ্দাম। এই মামলায় মোট ১০ চার্জশীটভুক্ত আসামীর মধ্যে আটক আছে ৪জন। পলাতক ৩ জনের মধ্যে নিহত হলো সাদ্দাম। বাকী ৩ জন আগেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।