ঢাকা; মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ভিআইপিদের নিরাপত্তায় আসছে গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দীর্ঘ ভ্রমণের সময় পুলিশের এ প্রস্তাবিত ইউনিট নিরবচ্ছিন্নভাবে সুরক্ষা দেবে। এ ইউনিটের গার্ড ব্যাটালিয়ন ভিআইপিদের হাউজগার্ডের নিরাপত্তা দেবে। কেন্দ্রীয়ভাবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নিরাপত্তা দিলে জেলা ও থানা পর্যায়ে খণ্ডে খণ্ডে দেয়া সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকবে না। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে ‘গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ’ গঠনের একটি প্রস্তাব গত ১লা জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এআইজি ফারুক আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রস্তাবে গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশের জন্য তিন হাজার ১৮৮ জনের পদ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ২৬০টি যানবাহন টিওএন্ডইভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব জনবল ও যানবাহনের জন্য বছরে ব্যয় হবে ১৬০ কোটি এক লাখ ২১ হাজার ৯৮৮ টাকা। পুলিশের প্রস্তাবিত এ ইউনিটের প্রধান হবেন একজন ডিআইজি। তার নেতৃত্বে চার পুলিশ সুপার, ছয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৩৮ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ৪০ জন ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), ৯৬ জন ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র), ৪৩ জন এসআই (নিরস্ত্র), ৯৮ জন এসআই (সশস্ত্র), ৯ জন এএসআই (নিরস্ত্র), ৪১৬ জন এএসআই (সশস্ত্র), ৩২৬ জন নায়েক, ১৮৭১ জন কনস্টেবল, একজন প্রধান সহকারী, তিনজন কম্পিউটার অপারেটর, পাঁচজন স্টেনোগ্রাফার, চার জন উচ্চমান সহকারী, ছয় জন অফিস সহকারী, একজন কার্পেন্টার, একজন বুট মেকার, একজন টেইলার, চার জন মেস ওয়েটার, দুই জন মালী, একজন প্লাম্বার, একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান, ৩২ জন এনসিই, ১০৮ জন বাবুর্চি এবং ৭০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করবেন। এসব জনবলের বিপরীতে ১৫টি জিপ, ৮০টি পিকআপ, বড় বাস পাঁচটি, মিনিবাস পাঁচটি, ৫০টি মাইক্রোবাস, ৫/৩ টন ওজনের পাঁচটি ট্রাক এবং শতাধিক মোটরসাইকেল টিওএন্ডইভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২০শে জুলাই ‘গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ’ গঠনের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরকে নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী ভিআইপিদের সব ধরনের নিরাপত্তা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ গঠন সংক্রান্ত পুলিশ সদর দপ্তরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দীর্ঘ ভ্রমণের সময় জেলা/থানা পুলিশ কর্তৃক প্রটেকশন দিলে সংশ্লিষ্ট জেলা/ থানার স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে। একই সঙ্গে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হাউজগার্ড অ্যান্ড সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার জন্যও আলাদাভাবে ইউনিট গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনেক দিন ধরে অনুভূত হচ্ছে। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে প্রস্তাবিত গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশ গঠন করা হলে ভিআইপিদের দীর্ঘ ভ্রমণের সময় প্রটেকশন, তাদের হাউজগার্ড এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা দেয়ার কার্যক্রম কেন্দ্রীয়ভাবে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। ফলে এ জাতীয় কাজে বিভিন্ন জেলা/ থানা পুলিশের উপর বাড়তি প্রভাব পড়বে না। এ কারণে জেলা/থানা পুলিশের পক্ষে তাদের অধিক্ষেত্র এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। তাই এসব পদগুলো সৃষ্টি করা একান্ত প্রয়োজন। নতুন গার্ড অ্যান্ড প্রটেকশন পুলিশের ‘প্রশাসন ও অপারেশন্স’, ‘প্রটেকশন ব্যাটালিয়ান’, ‘গার্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ান’ ও ‘কেপিআই ব্যাটালিয়ন’ শাখা থাকবে। চার শাখার কার্যক্রম সম্পর্কে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চার শাখার নেতৃত্বে থাকবেন একজন করে পুলিশ সুপার। এর মধ্যে প্রশাসন ও অপারেশন্স শাখা মঞ্জুরিকৃত জনবলের প্রশাসনিক ও অপারেশনাল কার্যক্রম তদারকি ও পরিচালনা করবে। প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন ভিআইপিদের কেন্দ্রীয়ভাবে নিরাপত্তা ও প্রটেকশন দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এছাড়া ভিআইপিদের বাসস্থানের নিরাপত্তা দেবে গার্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন। কেপিআই ব্যাটালিয়ন সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ/ দপ্তর থেকে প্রায়ই চিঠিপত্র আদান-প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে স্থাপনা স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গেই নতুন জনবল সৃষ্টির মঞ্জুরি পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে নতুন জনবলের মঞ্জুরির বিষয়টি দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তাই কেপিআই ব্যাটালিয়নের জন্য মঞ্জুরিকৃত জনবল দিয়ে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে তদারকি ও পরিচালনা করা হবে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, প্রাথমিক প্রস্তাব পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এখন অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নেয়া হবে। এরপর অন্যান্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।