এমপি লিটনের দাফন সম্পন্ন

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

dsc_9555

গাইবান্ধা: সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার ২য় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ২য় দফা জানাযা শেষে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টরযোগে এমপি লিটনের মরদেহ সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা রেল স্টেশন সংলগ্ন একটি মাঠে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে নিয়ে আসা হয়।

হেলিকপ্টরটি বামনডাঙ্গা আব্দুল হক কলেজ মাঠে নামানোর কথা থাকলেও ওই মাঠে ল্যান্ড করা সম্ভব না হওয়ায় পরে কলেজ মাঠ থেকে হাফ কিলোমিটার দুরে রেল স্টেশনের পাশে একটি জমিতে নামানো হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে বামনডাঙ্গাস্থ শাহবাজ মাস্টারপাড়ায় এমপির মরদেহ তার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। লিটনের কফিনের সাথে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়াও সাথে ছিলেন তার শোকাহত স্ত্রী ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি, তার বড় বোন আফরোজা বুলবুল ও তৌহিদা বুলবুল এবং ভগ্নিপতি আব্দুল্যাহিল বারী।

কফিনে শ্রদ্ধা জানালেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের মানুষ: লিটনের বাড়িতে রাখা তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, ঢাকা থেকে আসা ডেপুটি স্পীকার অ্যাড. ফজলে রাব্বি মিয়া এমপি, হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জাতীয় সংসদের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি, জাতীয় সংসদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচ.এন. আশিকুর রহমান এমপি, অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এমপি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদকসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ, পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ কফিনে পুষ্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানান।

এরপর বাদ আছর বাড়ির সামনের চত্বরে ৩য় দফা নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন কাজ সম্পন্ন হয়। সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ এই জানাযা ও দাফনে অংশ গ্রহণ করে।

লিটনের মরদেহ বাড়ির উঠোনে তার প্রিয় গাবগাছ তলায় রাখা হলে সেখানে দলীয় নেতাকর্মীসহ হাজারো মানুষের ঢল নামে। মরদেহ নামানোর সময় উপস্থিত জনতাদের মধ্যে শোকের মাতম সৃষ্টি হয়। পরে বাড়ির সামনে এমপি লিটনকে শেষ বারের মতো এক নজর দেখার জন্য আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন সর্বস্তরের মানুষ।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে এমপি লিটনের কফিনে পুষ্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা জানানোর পর উপস্থিত সাংবাদিক ও শোকাহত জনগণকে উদ্দেশ্য করে এমপি নানক বলেন, শেখ হাসিনার উন্নয়নকে ব্যাহত ও দেশের স্বাভাবিক অবস্থা অস্থিতিশীল করতে নানা অপশক্তি কাজ করছে। এই এলাকায় মৌলবাদি শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল যার প্রতিবাদ করেছিলেন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সরকারকে সতর্ক করা হয়েছে। আমরা পরিস্কারভাবে বলতে চাই এই অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙ্গে দেয়া হবে।

এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় আরও ৯ জন আটক: এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় রোববার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত আরও ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। উল্লেখ্য, প্রথম দফায় আটক ১৮ জনের মধ্যে ১৫ জনকে লিটন হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত আসামি হিসেবে সোমবার আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকি ৩ জনকে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এ নিয়ে এই হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এ পর্যন্ত মোট ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হলো।

উল্লেখ্য, রোববার রাত সাড়ে ৮টায় লিটনের বোন ফাহমিদা বুলবুল কাকলী বাদি হয়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে ৫ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করলে রাত ১১টায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। হত্যার মূল মোটিভ উদ্ধার এবং হত্যাকারিদের গ্রেফতারে ইতোমধ্যে পুলিশ ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে।

সুন্দরগঞ্জে অর্ধ দিবস হরতাল পালিত: এমপি লিটনকে হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন সমূহ যৌথভাবে রোববার সকাল-সন্ধ্যা এবং সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস হরতাল পালন করে। হরতাল চলাকালে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ থাকে।

সোমবার সকাল ৭টায় লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামি লোকাল ট্রেনটিকে বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনে আটক করে রাখা হয়। লিটনের মরদেহ সুন্দরগঞ্জে আসার সাথে সাথেই হরতাল প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। হরতাল চলাকালে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সেখানে নেতাকর্মীরা বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদি জঙ্গি চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারণেই এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়েছে। তারা বলেন, ইতোপূর্বে জামায়াত নেতা দেলওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় দেয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গোটা সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় দু’দিনব্যাপী তান্ডব চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এসময় রেল লাইন উপড়ে ফেলা, সুন্দরগঞ্জ থানা ও বামনডাঙ্গা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে ৪ জন পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এছাড়া একজন রিক্সা চালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে হত্যা করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এসব সন্ত্রাসী তৎপরতার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় জঙ্গিবাদি সাম্প্রদায়িক চক্র অত্যান্ত পরিকল্পিতভাবে লিটনকে হত্যা করেছে বলে তারা দাবি করে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে আশংকাজনক অবস্থায় দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। রাত সাড়ে ৭টায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *