শফিকুল ইসলাম টিটু
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
গাজীপুর অফিস: উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। অনিয়ম আর দুর্নীতির ভাড়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি প্রায় অকার্যকর ও স্থবির হয়ে পড়েছে। এ কারনেই সারা দেশের চার লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর ভাগ্যও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।
প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে অনিয়ম আর দুর্নীতি চলতে থাকলে যা হওয়ার কথা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। দীর্ঘদিন এ ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোন প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির যে অকার্যকর দশা, এর অধিকাংশ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাজ না করার যে প্রবণতার কথাও প্রকাশ পেয়েছে, এটাই তার মূল কারণ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রায় প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থীরা এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। কোন জেলাতেই নেই সনদ বিতরনের নিয়ম। বিভাগীয় ভাবেও নেই এ সনদ বিতরনের কোন কার্যালয়। একারনে রাঙ্গামাটি, রংপুর, দিনাজপুর ও যশোরসহ দেশের সকল জেলার লোক জনই এসে হতাশা নিয়ে ফেরত যেতে হয় গাজীপুরে অবস্থিত উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০০৫-৬ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্র অভিযোগ করে বলেন, এত বছর হয়ে গেল সে পাশ করেছে তার মুল সনদ সে এখনো পায়নি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিভাগের দিলরুবা খানম নামের এ বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার কারনেই সনদ আটকে আছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা তার দপ্তরে সনদ নেয়ার জন্য আসলে সে যা ইচ্ছে তাই দুর্ব্যবহার করেন বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। টাকা দিলেই সনদ মিলে অন্যথায় বছরের পর বছর ঘুরে বেড়াতে হয় তাদের। এছাড়াও এ সরকারের আমলে যাতে কোন শিক্ষার্থী কোন সেক্টরে কাজ করতে না পারে তারই জন্য এসব সনদ দেয়া হয়না। এখানে বিএনপি পন্থী কর্মকর্তারাই বেশী তাই এ ঘটনা ঘটছে বলেও জানান এ শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করেছে। তদন্ত প্রতিবেদনও বলা হয়েছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়ও উঠে এসেছে তদন্ত প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এ ব্যাপারে অধিকতর তদন্তের পরামর্শও দিয়েছে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কমিটি।
এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের জিওলজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ করীর উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনিও দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এসব কথা বলে আর আমাদের ছোট না করাই ভাল। আমরা লজ্জিত এসব বিষয়ে। তিনি আরও বলেন, সে নিজেও তার স্বজনদের কয়েকজনের বিষয়ে তদবির করতে গেলে একজন শিক্ষক হিসেবেও তিনি নাজেহাল হয়েছেন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বিভাগের কাছে। শুধু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন বিভাগের দিলরুবা খানম ই নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে অনেকেই। এ সমস্ত অভিযোগ থেকে পরিত্রান পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ব্যপারে অধিকতর তদন্ত হওয়া উচিত এবং যাঁরাই অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত হবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পদ-পদবি বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদায় নেওয়ার কারণেও যেন কেউ ছাড় না পায়, সেটাও নিশ্চিত করা উচিৎ। তবেই এর প্রতিকার সম্ভব।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম আর দুর্নীতি যেন ওপেন সিক্রেট। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে আরও আগেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। সরকার এখনি তা কঠোর হাতে না দমন করতে পারলে কতৃপক্ষের ব্যর্থতাই প্রমান পবে। প্রতিষ্ঠানটিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় চার লক্ষ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত।