বিদায় ২০১৬ স্বাগত ২০১৭

Slider জাতীয়

47174_f4

 

ঢাকা; মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদায় নিয়েছে বহু ঘটন-অঘটনের বছর ২০১৬। ভোরের সূর্যোদয় ঘটেছে নতুন আরেকটি বর্ষপরিক্রমায়। স্বাগত ২০১৭। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দোলাচলে কালের আবর্তে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেলো আরো একটি বছর। নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে নতুন বছরের। বিশ্বজুড়ে এক অস্থির সময়কালে আগমন ঘটল নতুন বছরের। মানব সভ্যতার আলোকেই একদিন মানুষ এক সেকেন্ডকে সময়ের একক হিসেবে ধরে নিয়ে তারপর মিনিট, ঘণ্টা, দিন, মাস বর্ষ শতাব্দী ইত্যাদির গণনা শুরু করে। সময় হলো অখণ্ড এক চিরন্তন গতি। সময়ের ভিতরে পৃথিবীর সকল প্রাণীর জন্ম-মৃত্যু ক্রমাগতভাবে ছুটে চলছে। সময় এবং মানুষের জীবন অবিচ্ছেদ্য। কালের যে স্রোত আমরা প্রতিনিয়ত বয়ে নিয়ে বেড়াই তা জীবনেরই অংশ। আমাদের প্রতিটি অনুভবে চিন্তার যে অনুরণন, সময় তাকে পরিক্রমণ করে। সময় কারো পক্ষপাতিত্ব করে না। আমরা তাই উন্মুক্ত সময়ের মুক্ত মানুষ হয়ে কর্মফলকে বিশ্বাস করি। কথায় আছে যৎ কর্ম তৎ ফল। মানুষ মাত্রই নিরন্তর সন্ধান করে একটি নিরাপদ আশ্রয়ের। সময়ই তাকে আবর্তিত করে। সময় এবং মানুষের জীবনকে তাই কখনোই আলাদা করা যায় না।
পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নেয়াই মানুষের সহজাত ধর্ম। আবহমান কাল ধরে মানুষ পুরাতনকে শুকনো ঝরা পাতার মতো ত্যাগ করে নতুন কুঁড়ির উদগমন হৃদয়াঙ্গম করে। ইংরেজি নতুন বছর ২০১৭ কে জানাই সাদর সম্ভাষণ। অতীতের স্বীয় ব্যর্থতার গ্লানিকে পিছনে ঠেলে দিয়ে নতুন বছরের পথ পরিক্রমণে যাত্রাকালে চেনা এ পৃথিবীটার সবার জন্যে সুখ কামনায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এক বুক অনাবিল আনন্দ সিঞ্চনে স্বাগত জানাই নতুন বছরের নবীন প্রভাতের নবীন সূর্যকে। ৩১শে ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নানা উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নিয়েছে নতুন বছরকে। দিনটিতে সারা বিশ্বে উদযাপিত হচ্ছে ইংরেজি নববর্ষ।
অতীত সবসময়ই ইতিহাস। এ বছরের ভুলগুলো শুধরে সমস্ত ইতিহাস থেকে ভালো শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। অতীতের সফলতা-ব্যর্থতাকে বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য এখন আমাদের সামনে তাকানোর দিন, দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাওয়ার দিন। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা সীমিত। কল্পলোকে বিচরণের চেয়ে বাস্তবকে তারা গুরুত্ব দেয় সব সময়ই। বাংলাদেশ এক অদ্ভুত সম্ভবের দেশ। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করেই এ দেশের মানুষ শ’ শ’ বছর ধরে টিকে আছে। বিপদে দুর্যোগে উন্নত বিশ্বের মানুষ যখন প্রযুক্তির দিকে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা সেখানে নির্ভয়ে নেমে পড়ে অতল গহ্বরে। এ দেশের চাষি, কুলি, কামিন, মুটে মজুরেরা সোনার ফসল ঘরে তোলে। তাদের শ্রমঘামেই বাড়ছে বার্ষিক মাথাপিছু আয়। সুখবর যেমন আমাদের আন্দোলিত করে তেমন খারাপ খবরও করে তোলে ব্যথিত, বেদনার্ত। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে কয়েকটি ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তৎপরতাও ছিল ত্বরিৎ। রাজনীতি কোনদিকে যায় সেটি নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। তবে বছরের শেষপ্রান্তে একটি সুস্থিরতার আলোর রেখা তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে নেয়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের আলোচনার উদ্যোগ। নতুনের মধ্যেই নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সুযোগ করে দেবে নতুন বছর। আমাদের প্রত্যাশা হোক নতুন বছর বয়ে আনবে সমৃদ্ধির বার্তা, প্রতিহিংসামুক্ত গণতান্ত্রিক চেতনাসমৃদ্ধ সুস্থ পরিবেশ। আমরা সব সময় আশাবাদী। আমরা স্বপ্ন দেখি সামনের দিনগুলো সুন্দর হবে। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনকল্যাণের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে, বৈরিতার পরিবর্তে সৃষ্টি হবে সহযোগিতার পরিবেশ। দেশের মানুষ অস্থিতিশীল পরিবেশকে পেরিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকুক এই প্রত্যাশা করি। নতুন বছরে মর্মান্তিক কোনো সড়ক দুর্ঘটনা, ভয়াহত অগ্নিকাণ্ড, শিক্ষাঙ্গণে প্রাণহানি, লাখো-কোটি মানুষের ভাগ্য বিপর্যয়কারী অনিয়ম-দুর্নীতি আমরা দেখতে চাই না। নতুন বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় ও আয়ু বৃদ্ধি পাক। চিকিৎসা ক্ষেত্রে আরো উন্নত প্রযুক্তি আসুক। যোগাযোগ যাতায়াত ও শিক্ষার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। রাজনৈতিক সমঝোতা সহানুভূতি সহনশীলতার ক্ষেত্রে সবাইকে তাক লাগানোর মতো পরিবর্তন আসুক। হতাশার পরিবর্তে বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষের মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যাক। আসুন সবাই মিলে নতুন বছরে নতুন করে সুন্দরভাবে বাঁচতে ঐক্যবদ্ধ হই। সুখে-দুঃখে একে-অপরের পাশে দাঁড়াই। আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসামপ্রদায়িক, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আমরা এগিয়ে যাবো। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। আমরা পাবো সেই ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *