রংপুর: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে এম নূর-উন- নবীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে নির্ধারিত দুই দিনের তদন্ত কর্যক্রম শেষ হয়েছে।
তদন্তের দ্বিতীয় দিনে রংপুর আরডিআরএস ভবনে বেরোবি শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রমান গ্রহণ করেন তদন্ত কমিটি। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তদন্তের কার্যক্রম চলে।
সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময় বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হওয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রমান উপস্থাপন করেন।
বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান জানান, ‘আমরা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে যেসব অভিযোগ ইউজিসিতে প্রদান করেছিলাম তদন্ত কমিটি সেগুলোর পক্ষে প্রমান চায়। আমরা সবগুলো অভিযোগের প্রমান তদন্ত কমিটির সামনে উপস্থাপন করেছি।’
বেরোবি কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ.টি. জি. এম. গোলাম ফিরোজ বলেন, আমি তদন্ত কমিটির সামনে ব্যক্তিগত ও সংগঠনের পক্ষ থেকে উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ও প্রমান উপস্থাপন করেছি। ‘এগুলোর মধ্যে আমাকে পরিকল্পনা বিভাগের কাজে অবহেলা করা, ৭০জন কর্মকর্তার আপগ্রেডেশন আটকে রাখা, দীর্ঘদিন থেকে কারণ ছাড়াই ৫ কর্মকর্তার বেতনভাতা আটকে রাখা, নিয়ম না মেনে পছন্দের ব্যক্তিদের পদায়ন করার অভিযোগ ইত্যাদি’।
এর আগে শিক্ষক সমিতির অভিযোগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পর বেরোবি উপাচার্য ড. একে এম নুর উন নবীর অনিয়ম খতিয়ে দেখতে গত দুই আগষ্ট ইউজিসি গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি রবিবার বিকেলে রংপুরে এসে পৌঁছে। তদন্ত কমিটির তিন সদস্য হলেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর আখতার হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মিজানুর রহমান ও ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক ফখরুল ইসলাম। পরদিন ২৬ ডিসেম্বর সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তদন্ত কমিটি। সেখানে একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর, অর্থ দপ্তর ও পরিবহণপুলের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রথম দিনের তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে তদন্ত কমিটি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ মার্চ বেরোবি শিক্ষক সমিতি ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান এর কাছে বেরোবি ভিসির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দায়ের করেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আর এম হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধানের চার মাসের একটি স্প্যানের মধ্যে কমিটি শুধুমাত্র অভিযোগকারীদের সাক্ষাত্কার গ্রহণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ২২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়ার পর উপাচার্যের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় হয় ইউজিসি।
এর আগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতের ফলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অচলাবস্থা তৈরি হয়, ১৭ টি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত, পুলিশ দায়ের করা মিথ্যা মামলা দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী হয়রানি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরের অভিযোগ উঠে।
উপাচার্য়ের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সমুহের মাধ্যে ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষক হিসেবে ভুয়া সার্টিফিকেট ধারক নিয়োগ, অবৈধভাবে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়োগ, রেজিস্ট্রার পদে পরিবর্তন আনার সরাসরি অভিযোগ, ক্যাফেটেরিয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জন্য মসজিদ ও ছাত্রাবাসে খোলার বিলম্ব, সিনেট অকার্যকর, কর্মচারীদের বেতন ও ভাতা প্রদান ও অনিয়মের পোস্টিং ,নিয়ম বহির্ভুতভাবে উপার্জন উল্লেযোগ্য।