ঢাকা; রাজধানীর দক্ষিণখানের পূর্ব আশকোনা এলাকার একটি বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আত্মসমর্পণের পর আটক করা হয়েছে দুই শিশুসহ দুই নারীকে।
শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল বিকাল পর্যন্ত চলা অভিযানে এক নারী আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মারা যান। আর অভিযানের সময় মারা যায় এক কিশোর। নিহত নারীর লাশ উদ্ধার করা হলেও ওই বাড়ির ভেতরে বিস্ফোরক থাকায় অন্যজনের লাশ রাতে উদ্ধার করা হয়নি। শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সেখানে অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ১৪ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর এই অভিযানে দুই নারী সদস্য তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে আত্মসমর্পণ করলেও অন্য দুজন বাড়ির ভেতরে থেকে আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশ অ্যাকশনে গেলে মারা যায় ওই কিশোর। পুলিশের ধারণা, তার নাম শহীদ কাদরি ওরফে আসিফ কাদরি। সে আজিমপুরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি নেতা তানভীর কাদরির ছেলে। এছাড়া আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত নারী জঙ্গি নেতা সুমনের স্ত্রী বলে ধারণা করছে পুলিশ। এ সময় আহত হয়েছে ৭ বছরের এক কন্যাশিশু। সে জঙ্গি দম্পতি ইকবাল-শাকিরার কন্যা। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আত্মসমর্পণকারী দুই নারী জঙ্গির একজন নিহত জঙ্গি নেতা বরখাস্তকৃত মেজর জাহিদের স্ত্রী এবং অপরজন পলাতক জঙ্গি নেতা মুসার স্ত্রী বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। ‘অপারেশন রিপল-২৪’ নামে চালানো শ্বাসরুদ্ধকর এই অভিযান শেষ হয় গতকাল বিকাল ৩টা ৪২ মিনিটে। অভিযান সমাপ্ত হলেও আস্তানাটি নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ জানায়, তাদের কাছে আগেই খবর ছিল পূর্ব আশকোনা হজ ক্যাম্পের অদূরে আল বাছির জামে মসজিদ রোডের তিন তলার ‘সূর্যভিলা’ নামের এই বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে। তারা জানতে পারেন জঙ্গি মুসাসহ তার সহযোগীরা সেখানে অবস্থান করছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে সেখানে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সে মোতাবেক রাত ১২টার দিকে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তিনটি গাড়িতে করে ৩০ থেকে ৩৫ জন ঘটনাস্থলে যান। এ সময় দাঙ্গা পুলিশের ছিলেন ৪০ জন। আর পুলিশের উত্তরা বিভাগের তিনটি গাড়িতে করে পুলিশ সদস্যরাও সেখানে যান। শুরুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ‘সূর্য ভিলা’ বাড়ির পাশের একটি বাড়িতে তল্লাশি চালান। এরপর তারা নিশ্চিত হন, ‘সূর্য ভিলা’ বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা আছে।
শুরুতে রাত ১২টা ২৪ মিনিট গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল ওই বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় ভেতর থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করে জঙ্গিরা। ডিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির একপর্যায়ে জঙ্গিদের শক্তিশালী অবস্থান বুঝতে পেরে কৌশলগত কারণে পিছু হটে ডিবি সদস্যরা। এর পরপরই সোয়াতের একটি দল বাসাটি ঘিরে ফেলে। এ সময় বারবার জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ করেনি। পরে গতকাল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে জঙ্গি নেতা মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নেসা শিলা ও পলাতক অপর জঙ্গি নেতা মুসার স্ত্রী তৃষা তাদের দুই সন্তানসহ হাত উঁচু করে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে গুলি ও চাকু উদ্ধার করা হয়। শিলার মেয়ের বয়স ৪ বছর এবং তৃষার মেয়ের বয়স ৩ বছর বলে ধারণা করছে পুলিশ। বাকি তিনজনকেও আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ না করে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ভেতর থেকে পরপর ২টি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে শফি আহম্মেদ নামে বোম্ব ডিসপোজাল দলের এক সদস্য আহত হন। পুলিশ নিশ্চিত হন যে, তখন ওই আস্তানায় এক নারী, এক কিশোর ও এক শিশু রয়েছে। এরা হলো- জঙ্গি নেতা সুমনের স্ত্রী, সাবিনা নামের ৭ বছরের এক শিশু। শিশুটি ইকবাল-শাকিরা দম্পতির বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অপর কিশোর জঙ্গি তানভীর কাদরির ছেলে শহীদ কাদরি ওরফে আফিফ কাদরি বলে ধারণা করা হয়। তবে পুলিশের দায়িত্বশীল কেউ তা নিশ্চিত করেননি। এদিকে এই গ্রেনেড বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ পরেই সুমনের স্ত্রী দরজা খুলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য এগোতে থাকেন। তিনি আত্মসমর্পণ করছেন বলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ধারণা করে। তাকে হাত উঁচু করতে বলা হলে তিনি তা করেননি। এসময় পুলিশ বুঝতে পারে তার কোমরে ‘সুইসাইডাল ভেস্ট’ বাঁধা রয়েছে। তাকে সেটি খুলে আসতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা না শুনে দ্রুত গতিতে সামনের দিকে আসেন এবং কোমরে ভেল্টের বিস্ফোরণ ঘটান। এতে ঘটনাস্থলে তিনি পড়ে যান। দীর্ঘক্ষণ তার নিস্তেজ দেহ পড়ে থাকে। তার সঙ্গে একটি শিশুও ছিল। বিস্ফোরণে সেও আহত হয়। পরে ওই নারী জঙ্গির মৃত্যু নিশ্চিত জেনে শিশুটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর জীবিত কিশোরকে আত্মসমর্পণের জন্য বলা হয়। কিন্তু সে ওই সময় গ্রেনেড চার্জ করে। এ সময় পুলিশ পেছনের দিকে সরে আসে। এরপর ঘরের বন্ধ জানালা স্ক্র দিয়ে ফুটো করা হয়। তাকে গ্রেনেড নিয়ে বসে থাকতে দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাইরে থেকে তারা টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। কিন্তু সে আত্মসমর্পণ না করে উল্টো পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে সে মারা যায়। পরবর্তীকালে ওই আস্তানায় জীবিত কেউ নেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বেলা ৩টা ৪২ মিনিটের দিকে অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
মা ও ভাইয়ের ডাকে মেজর জাহিদের স্ত্রীর আত্মসমর্পণ: এদিকে বারবার মা ও ভাইয়ের আহ্বানের পরই আত্মসমর্পণে রাজি হন নিহত জঙ্গি মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা। নিজের সন্তান এবং আরেক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষা ও তার সন্তানকে নিয়ে আশকোনার ওই বাড়ি থেকে তিনি বের হয়ে আসেন। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমপর্ণ করতে বলা হয়। প্রথমে তারা আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় সোয়াত টিম অভিযান শুরু করে। এরই মধ্যে জেবুন্নাহার শিলার মা ও ভাইকে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। শিলার মা হ্যান্ড মাইকে তাকে ডাকতে থাকেন। বারবার আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানানোর পরই তারা বাইরে আসে। তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা: এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেলা সোয়া তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে যান। পরে বিকাল পৌনে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে তিনি সংবাদ ব্রিফিং করে বলেন, আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় চালানো অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এই অভিযানে চারজন আত্মসমর্পণ করেছেন। নিহত হয়েছেন দুজন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন নারী জঙ্গি সুমনের স্ত্রী। আহত অবস্থায় একটি শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। ওই বাসার ভেতরে অসংখ্য তাজা গ্রেনেড, বোমা পড়ে আছে। অভিযান পরিসমাপ্ত হলেও ভেতর থেকে এগুলো পরিষ্কার করার ও আলামত সংগ্রহের কাজ চলবে। ওই জঙ্গি আস্তানার ভেতর থেকে আলামত সংগ্রহ ও বিপজ্জনক বস্তু সরানোর কাজটি বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে স্থগিত করা হয়। আজ আবার তা শুরু হবে বলে জানান কাউন্টার টেরোরিজমের দুই উপকমিশনার (ডিসি) মইদুল ইসলাম খান ও প্রলয় কুমার জোয়ার্দার। তারা বলেন, ভেতরে এক কিশোরের লাশ পড়ে আছে। ভেতর থেকে গ্যাসের গন্ধ বের হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। ভেতরে বিস্ফোরক থাকায় অন্ধকারে কাজ চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। তারা আরও বলেন, বাড়িটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে। বাইরে পড়ে থাকা দুটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে সেখানে যান স্থানীয় এমপি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। সেখানে তিনি বলেন, এই এলাকা শান্তিপূর্ণ। আগে এখানে কোনো জঙ্গি অভিযান হয়নি। এটাই প্রথম। আমি এলাকাবাসীকে আরও সতর্ক হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আর কারো গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলেই সঙ্গে সঙ্গে তা স্থানীয় থানায় জানানোর জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
ওই বাড়ির পাশের ৩০৮ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন জানান, রাত দুটা থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘুম ভাঙে। এরপর বাইরে বের হয়ে দেখি রাস্তায় প্রচুর পুলিশ। তাদের কাছে জানতে পারি ওই বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলছে। পুরো এলাকায় সারা রাত আতঙ্ক বিরাজ করে।
পুলিশ জানায়, তাদের কাছে আগেই খবর ছিল পূর্ব আশকোনা হজ ক্যাম্পের অদূরে আল বাছির জামে মসজিদ রোডের তিন তলার ‘সূর্যভিলা’ নামের এই বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে। তারা জানতে পারেন জঙ্গি মুসাসহ তার সহযোগীরা সেখানে অবস্থান করছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতে সেখানে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সে মোতাবেক রাত ১২টার দিকে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তিনটি গাড়িতে করে ৩০ থেকে ৩৫ জন ঘটনাস্থলে যান। এ সময় দাঙ্গা পুলিশের ছিলেন ৪০ জন। আর পুলিশের উত্তরা বিভাগের তিনটি গাড়িতে করে পুলিশ সদস্যরাও সেখানে যান। শুরুতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ‘সূর্য ভিলা’ বাড়ির পাশের একটি বাড়িতে তল্লাশি চালান। এরপর তারা নিশ্চিত হন, ‘সূর্য ভিলা’ বাড়িতে জঙ্গি আস্তানা আছে।
শুরুতে রাত ১২টা ২৪ মিনিট গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল ওই বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় ভেতর থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করে জঙ্গিরা। ডিবিও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির একপর্যায়ে জঙ্গিদের শক্তিশালী অবস্থান বুঝতে পেরে কৌশলগত কারণে পিছু হটে ডিবি সদস্যরা। এর পরপরই সোয়াতের একটি দল বাসাটি ঘিরে ফেলে। এ সময় বারবার জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ করেনি। পরে গতকাল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে জঙ্গি নেতা মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নেসা শিলা ও পলাতক অপর জঙ্গি নেতা মুসার স্ত্রী তৃষা তাদের দুই সন্তানসহ হাত উঁচু করে বাসা থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে গুলি ও চাকু উদ্ধার করা হয়। শিলার মেয়ের বয়স ৪ বছর এবং তৃষার মেয়ের বয়স ৩ বছর বলে ধারণা করছে পুলিশ। বাকি তিনজনকেও আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ না করে বেলা পৌনে ১১টার দিকে ভেতর থেকে পরপর ২টি গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে শফি আহম্মেদ নামে বোম্ব ডিসপোজাল দলের এক সদস্য আহত হন। পুলিশ নিশ্চিত হন যে, তখন ওই আস্তানায় এক নারী, এক কিশোর ও এক শিশু রয়েছে। এরা হলো- জঙ্গি নেতা সুমনের স্ত্রী, সাবিনা নামের ৭ বছরের এক শিশু। শিশুটি ইকবাল-শাকিরা দম্পতির বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। অপর কিশোর জঙ্গি তানভীর কাদরির ছেলে শহীদ কাদরি ওরফে আফিফ কাদরি বলে ধারণা করা হয়। তবে পুলিশের দায়িত্বশীল কেউ তা নিশ্চিত করেননি। এদিকে এই গ্রেনেড বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ পরেই সুমনের স্ত্রী দরজা খুলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য এগোতে থাকেন। তিনি আত্মসমর্পণ করছেন বলে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ধারণা করে। তাকে হাত উঁচু করতে বলা হলে তিনি তা করেননি। এসময় পুলিশ বুঝতে পারে তার কোমরে ‘সুইসাইডাল ভেস্ট’ বাঁধা রয়েছে। তাকে সেটি খুলে আসতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা না শুনে দ্রুত গতিতে সামনের দিকে আসেন এবং কোমরে ভেল্টের বিস্ফোরণ ঘটান। এতে ঘটনাস্থলে তিনি পড়ে যান। দীর্ঘক্ষণ তার নিস্তেজ দেহ পড়ে থাকে। তার সঙ্গে একটি শিশুও ছিল। বিস্ফোরণে সেও আহত হয়। পরে ওই নারী জঙ্গির মৃত্যু নিশ্চিত জেনে শিশুটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর জীবিত কিশোরকে আত্মসমর্পণের জন্য বলা হয়। কিন্তু সে ওই সময় গ্রেনেড চার্জ করে। এ সময় পুলিশ পেছনের দিকে সরে আসে। এরপর ঘরের বন্ধ জানালা স্ক্র দিয়ে ফুটো করা হয়। তাকে গ্রেনেড নিয়ে বসে থাকতে দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বাইরে থেকে তারা টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। কিন্তু সে আত্মসমর্পণ না করে উল্টো পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে সে মারা যায়। পরবর্তীকালে ওই আস্তানায় জীবিত কেউ নেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে বেলা ৩টা ৪২ মিনিটের দিকে অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
মা ও ভাইয়ের ডাকে মেজর জাহিদের স্ত্রীর আত্মসমর্পণ: এদিকে বারবার মা ও ভাইয়ের আহ্বানের পরই আত্মসমর্পণে রাজি হন নিহত জঙ্গি মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা। নিজের সন্তান এবং আরেক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষা ও তার সন্তানকে নিয়ে আশকোনার ওই বাড়ি থেকে তিনি বের হয়ে আসেন। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, বাড়ির ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমপর্ণ করতে বলা হয়। প্রথমে তারা আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় সোয়াত টিম অভিযান শুরু করে। এরই মধ্যে জেবুন্নাহার শিলার মা ও ভাইকে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। শিলার মা হ্যান্ড মাইকে তাকে ডাকতে থাকেন। বারবার আত্মসমর্পণের অনুরোধ জানানোর পরই তারা বাইরে আসে। তাদের কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে।
অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা: এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেলা সোয়া তিনটার দিকে ঘটনাস্থলে যান। পরে বিকাল পৌনে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে তিনি সংবাদ ব্রিফিং করে বলেন, আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় চালানো অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এই অভিযানে চারজন আত্মসমর্পণ করেছেন। নিহত হয়েছেন দুজন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন নারী জঙ্গি সুমনের স্ত্রী। আহত অবস্থায় একটি শিশু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। ওই বাসার ভেতরে অসংখ্য তাজা গ্রেনেড, বোমা পড়ে আছে। অভিযান পরিসমাপ্ত হলেও ভেতর থেকে এগুলো পরিষ্কার করার ও আলামত সংগ্রহের কাজ চলবে। ওই জঙ্গি আস্তানার ভেতর থেকে আলামত সংগ্রহ ও বিপজ্জনক বস্তু সরানোর কাজটি বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে স্থগিত করা হয়। আজ আবার তা শুরু হবে বলে জানান কাউন্টার টেরোরিজমের দুই উপকমিশনার (ডিসি) মইদুল ইসলাম খান ও প্রলয় কুমার জোয়ার্দার। তারা বলেন, ভেতরে এক কিশোরের লাশ পড়ে আছে। ভেতর থেকে গ্যাসের গন্ধ বের হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই। ভেতরে বিস্ফোরক থাকায় অন্ধকারে কাজ চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। তারা আরও বলেন, বাড়িটি পুলিশ ঘিরে রেখেছে। বাইরে পড়ে থাকা দুটি বোমা নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে সেখানে যান স্থানীয় এমপি ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। সেখানে তিনি বলেন, এই এলাকা শান্তিপূর্ণ। আগে এখানে কোনো জঙ্গি অভিযান হয়নি। এটাই প্রথম। আমি এলাকাবাসীকে আরও সতর্ক হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আর কারো গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলেই সঙ্গে সঙ্গে তা স্থানীয় থানায় জানানোর জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
ওই বাড়ির পাশের ৩০৮ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন জানান, রাত দুটা থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনে ঘুম ভাঙে। এরপর বাইরে বের হয়ে দেখি রাস্তায় প্রচুর পুলিশ। তাদের কাছে জানতে পারি ওই বাড়িতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলছে। পুরো এলাকায় সারা রাত আতঙ্ক বিরাজ করে।