৩২টি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার পরিবর্তে এখন সংস্কারে পক্ষে সিসিক

Slider সিলেট

img_20161224_123811

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেট ৩২টি ভবনকে ভূমিকম্পে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে অভিযানে নেমেছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) তবে মাত্র দুটি ভবন ভাঙার পর অদৃশ্য কারণে থেমে গেছে এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনবিরোধী অভিযান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে সিটি করপোরেশন। বরং সংস্কারের মাধ্যমে ভবনগুলো টিকিয়ে রাখার পক্ষে সিসিক প্রকৌশলবিদরাও ভবনগুলো ভাঙার বদলে সংস্কারের পক্ষেই মত দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে সিটি কর্পোরেশন নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে প্রথম থেকেই, আর এ কারণের এ সকল ভবন ভেঙে অপসারণের বিকল্প পদ্ধতি বিবেচনা করছেন প্রকৌশলীরা।

তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা রেট্রোফিটিং পদ্ধতির মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার করলে আর ভাঙ্গতে হবে না বলে মত দিয়েছেন। বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। যদি রেট্রোফিটিং পদ্ধতি নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মেরামতে কার্যকর হয়, তাহলে আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার প্রয়োজন পড়ছে না।

জানা যায়, ভূমিকম্পের জন্য দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল সিলেটে গত দুই দশকে নীতিমালা না মেনেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য বহুতল ভবন। এছাড়া পুরনো ভবনগুলোতেও নেই ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থা। ফলে নগরীর বেশির ভাগ ভবনই রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।

সিসিক সূত্রে জানা গেছে, সিসিকের পক্ষ থেকে শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা করে মালিকপক্ষকে নোটিস দেয় সিসিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিসিকের একজন কর্মকর্তা জানান, উচ্চঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় সাতটি সরকারি অফিস, চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন, বাণিজ্যিক ভবন ছয়টি এবং বাকিগুলো আবাসিক বহুতল ভবন রয়েছে।

সিসিক সূত্রে জানা যায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে সম্প্রতি নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করা হয়। এসব ভবন ভেঙে দেয়ার জন্য মালিকপক্ষকে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়।

নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মালিকপক্ষ কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় গত ২১ এপ্রিল নগরীর তাঁতিপাড়ার একটি আবাসিক ভবন ভেঙে ফেলে সিটি করপোরেশন। এরপর ৮ এপ্রিল নগরীর শাহী ঈদগাহে এলাকার আরেকটি ভবন ভেঙে দেয়া হয়। গত ১০ মে সিসিকের মালিকানাধীন সিটি সুপার মার্কেটের আংশিক ভেঙে দেয়া হয়। তবে এরপর আরো ছয় মাস চলে গেলেও আর কোনো বহুতল ভবনের বিরুদ্ধেই অভিযানে নামেনি সিসিক। প্রথম দিকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর বিরুদ্ধে বেশ তোড়জোড় দেখালেও এখন তা প্রায় স্তিমিত হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, সিসিক অভিযান চালানোর পরই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মালিকরা আন্দোলনে নামেন। আদালতের শরণাপন্নও হন অনেকে। এছাড়া ভবন সংস্কারেও উদ্যোগী হয় কোনো কোনো ভবন কর্তৃপক্ষ। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিকদের চাপ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় সিটি করপোরেশন।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলার বদলে ‘রেট্রোফিটিং’য়ের মাধ্যমে সংস্কার করে এগুলো টিকিয়ে রাখার পক্ষে সিসিক
এ ব্যাপারে সিসিকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও পুরকৌশল বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, পুরাতন ও ঝুকিপূর্ণ ভবনকে পুনরায় নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করতে রেট্রোফিটিং এক আধুনিক কার্যকর পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একটি ভবনের ঝুকিপূর্ণ অংশ চিহ্নিত করে তার সঠিক পরিমাপের মাধ্যমে পুনস্থাপন করে ভবনটিকে রক্ষা করা হয়।

তিনি বলেন, নগরীর ঝুকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করার পর বিশেষায়িত কমিটি প্রথমে সেগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তবে পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে বিকল্প উপায় হিসেবে ভবনগুলো রেট্রোফিটিং পদ্ধতিরর মাধ্যমে না ভেঙে মেরামত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আপাতত ভবনগুলোর ঝুঁকির পরিমাণ ও রেট্রোফিটিং এর সম্ভাব্যতা পরীক্ষা চলছে, যদি তা সফল হয়, তবে সেগুলো রেট্রোফিট করা হবে।

জহির বিন আলম বলেন, ২০১৩ সালে সিসিক আমাদের নিয়ে কমিটি করলে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে ফেলার পক্ষে মত দিয়েছিলাম। তবে এখন এ পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। ভবনগুলো রক্ষা করে ঝুঁকি এড়ানো যায় কিনা, এ ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে।

উচ্চঝুঁকিপূর্ণর তালিকায় থাকা নগরীর রাজা ম্যানসনের ব্যবস্থাপক নানা মিয়া বলেন, এরই মধ্যে আমাদের ভবনে অনেক সংস্কারকাজ করেছি। এছাড়া সংস্কারের একটি নকশাও সিটি করপোরেশনে জমা দিয়েছি। আমরা এখন নগর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।

.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *