ঢাকা; নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ ঠেকাতেই ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী প্রচারণায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ৭২ ঘণ্টা আগে প্রচারণা বন্ধ করা অর্থাৎ বিভক্ত করা, বাইরে এবং ভেতরে- এটা আমরা আগে দেখিনি। প্রচারণার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয়ার কারণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও নজিরবিহীন। বিগত যে কোনো নির্বাচনে ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী এলাকার বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হতো। এটাই ছিল আইন, এটাই ছিল রেওয়াজ। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে অন্যায় অবৈধভাবে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে হয়রানি তো আছেই। তারপরও ভোটারদের দাবিতে উনি যেতে পারতেন, যেকোনো সময়েই উনি যেতে পারতেন। এটা বুঝতে পেরে তারা এই পরিপত্র জারি করেছে বলে আমাদের বিশ্বাস। রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের পরিপত্রে ‘বহিরাগত’ শব্দটি ‘আনপার্লামেন্টারিয়ান, অশোভন ও অরাজনৈতিক’। আমি বাংলাদেশের নাগরিক, যেকোনো জায়গায় যাওয়ার আমার অধিকার আছে। আমরা মনে করি, ওই বহিরাগত শব্দটা ব্যবহার করে নির্বাচন কমিশন পুরো জাতিকে অপমান করেছেন, এদেশের ভোটারদেরকে অপমান করেছেন। ৭২ ঘণ্টা আগে থেকে নির্বাচনী প্রচারণায় বিধিনিষেধ আরোপে ‘বহিরাগত’ শব্দ ব্যবহার করে যে পরিপত্র জারি করেছেন, এটাকে আমরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছি। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বলছিলেন, ১৯ অথবা ২০শে ডিসেম্বর খালেদা জিয়া নারায়ণগঞ্জে যাবেন। আর সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন এক বিবৃতিতে নারায়ণগঞ্জে ভোটের প্রচারে না যাওয়ার কারণ হিসেবে ‘মামলা মোকদ্দমার হাজিরা, শারীরিক অসুস্থতা এবং অন্যান্য ব্যস্ততা ও সমস্যার’ কথা বলেন। রিজভী আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের খবরে আমরা জানতে পেরেছি, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত তিন শতাধিক সন্ত্রাসী নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রস্তুতি চলছে। আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। ভোটারবিহীন সরকারের ইচ্ছা পূরণে ইলেকশন কমিশন কেন সেনা মোতায়েনে রাজি হয়নি, সেটাও স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। রিজভী বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আমি নাসিক নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, ভয়ভীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ, সকল ধরনের ভীতি, শঙ্কা, অস্বস্তি দূর করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। কারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ হলে সাধারণ ভোটাররা দলবেঁধে নির্বাচন কেন্দ্রে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এমনকি আমরা নিশ্চিত সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজমান হলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ ও আসাদুল করীম শাহিন উপস্থিত ছিলেন।