নারায়ণগঞ্জ; কে হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের মেয়র? আওয়ামী লীগের আইভী নাকি বিএনপি’র সাখাওয়াত? প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা এখন নারায়ণগঞ্জের অলিগলি ছাড়িয়ে রাজধানীর দলীয় প্রধান কার্যালয়গুলোতেও। চলছে নানা হিসাবনিকাশ। বাড়ছে কৌতূহল। ভোটারদের নিয়ে ক্যালকুলেটরে অঙ্ক কষছেন অনেকে। হিসাব মেলাতে ব্যস্ত নিজ নিজ দলের কাণ্ডারিরা।
প্রথমবারের মতো ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে দলের মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিগত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল মাথায় রেখেই রাজধানী ঢাকার পাশের এই সিটিতে জয়ের ব্যাপারে ছাড় দিতে নারাজ ক্ষমতাসীন দলটি। লক্ষ্য একটাই ২২শে ডিসেম্বর নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আইভীকে জনগণের রায়ের মাধ্যমে বিজয়ী করা। দলের ক্যালকুলেটরে আইভী জিতবেন বলে ধারণা দলের শীর্ষ নেতাদের। দলীয় প্রতীক নৌকা ও আইভীর ব্যক্তিগত ইমেজ নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে সহায়ক হবে বলে মন্তব্য তাদের। তবে দলটির একাধিক নেতা মনে করছেন, নির্বাচনে আইভীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারেন স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান। যদিও দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে তিনি আইভীর পক্ষে কাজ করছেন বলে প্রচারণা রয়েছে। আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আপাতত কোনো সংশয় নেই। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার ২২শে ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে সেই ধরনের পরিবেশই থাকবে। এটাকে অনেকটা টেস্ট কেস হিসেবেও দেখছে ক্ষমতাসীন দলটি। আর মাত্র ২ বছর পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য উদাহরণ হতে পারে বলে জানান দলটির বেশ কয়েক নেতা। আবার কয়েক নেতা জানান, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনের সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এমনকি এর ফলাফলও তাতে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সজাগ দৃষ্টি থাকবে সবার। এ নিয়ে দলটি কোনো ধরনের বিতর্কে জড়াতে চায় না। এ বিষয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান দলটির শীর্ষ নেতারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন মানবজমিনকে বলেন, দেশ এখন চলছে গণতান্ত্রিকভাবে। এ পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়াটাই ভালো। যদি নির্বাচনটি সুষ্ঠু না হয় তাহলে মনে করবো এই নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ। আইভীর জয়ের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইভীর জয়ের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। কারণ তার নির্বাচনী এলাকায় ৫২ শতাংশ ভোটার হচ্ছেন মহিলা। এসব ভোটার যদি আইভীকে ভোট দেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে যে কারও জয়ী হওয়া কঠিন। বেশির ভাগ ভোটার যদি পুরুষ হতো তাহলে ভয়ের বিষয় ছিল। এক্ষেত্রে শামীম ওসমানের সঙ্গে আইভীর শীতল সম্পর্ক নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি বলেন, অতীতে শামীম ওসমান গণ্ডগোল করার চেষ্টা করেছিলো, লাভ হয়নি। এবারও কিছুই হবে না। আমার ক্যালকুলেশনে নির্বাচনে আইভী জিতবে। যেহেতু তিনি মহিলা আর মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৫২ শতাংশ। মহিলা মহিলাদের দুঃখ বুঝবে। পাশাপাশি তার কোনো বদনাম নেই। সবচেয়ে বড় কথা সে গরিবের জন্য যে কাজ করেছে অতীতে আর কেউ করেনি। এদিকে নাসিক নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী করতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে আওয়ামী লীগ। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, কৃষক লীগসহ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন নিয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমার হিসাবে দুটি কারণে আইভীর পেছনে ভোটাররা কাতারবদ্ধ হয়েছেন। একটি হলো তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী, আরেকটি বিগত ৫ বছরে তার সর্বজনীন চরিত্র। সবকিছু মিলে নারায়ণগঞ্জের মানুষ সেলিনা হায়াৎ আইভীকে বিজয়ী করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। নির্বাচনের পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। নির্বাচনী পরিবেশটা এখন অত্যন্ত উৎসবমুখর, আমেজমুখর। শামীম ওসমান প্রসঙ্গে তিনি জানান, আামাদের জানা মতে দলের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত শামীম ওসমান কোনো অবস্থানে নেননি। কারণ প্রার্থী হচ্ছেন শেখ হাসিনার। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে নিজেদের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন। শুধু দলের নেতাকর্মীরাই নন, ব্যবসায়ী, শিল্পী-সাহিত্যিক- শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও জনপ্রিয় ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ ও প্রচারকাজে অংশ নেন। তারা সিটির বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময়, পথসভা, উঠান বৈঠক, বাড়ি বাড়ি ভোট প্রার্থনা করেছেন।