আজ ছান্দসিক কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদের জন্মদিন

Slider ফুলজান বিবির বাংলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

nurul-islam-kabbo-1

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর  : আজ ছান্দসিক কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদের ১০৮ তম জন্মদিন। রংপুর শহরের প্রসিদ্ধ বাবু খাঁ গ্রামে এক প্রাচীন সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯০৮ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম আলহাজ্ব মুহাম্মদ আজিবুল্লাহ এবং মায়ের নাম মজিদ উন-নেসা।

কাব্যবিনোদের প্রপিতামহ সওদাগর ওয়ালী মুহাম্মদ খাঁন ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দে ভারতের পাটনা থেকে ডিঙ্গী নৌকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতে রংপুরে আসেন এবং স্থায়ীভাবে রংপুরেই বসবাস শুরু করেন।

শৈশব থেকে তিনি ছিলেন অসাধারন মেধা শক্তির অধিকারী ও ধর্মপরায়ন। শৈশবেই তার কাব্যের হাতে খড়ি। তিনি যখন ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র তখনই তিনি একটি চমৎকার ছড়া লিখেন। ছড়াটি কলকাতা থেকে প্রকাশিত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদিত মাসিক ‘গল্পলহরী’র রবীন্দ্র সংখ্যায় ছাপা হয়। ছড়াটি প্রকাশের পর তাঁর সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। “আমার আশা” পাঠ করে বিখ্যাত সাহিত্যিক ও ভাষা গবেষক ডক্টর সুনীতি কুমার চট্টপাধ্যায় মন্তব্য করে কবিকে লিখেছিলেন, লেখকের ডাবল করে নোবেল নেয়ার আশা পূরন হওয়া সম্ভব হোক আর না হোক, সময়, সুযোগ এবং সহানূভূতি পেলে তিনি একদিন বাংলা সাহিত্যে অতি উঁচুস্থান অধিকার করতে পারবেন, এ বিষয়ে আমার অনুমাত্র সন্দেহ নেই। এই মন্তব্যটির প্রতিফলন পরবর্তীকালে বাস্তব হয়েছে।

সাহিত্যে তিনি অতি উঁচুস্থান দখল করেছেন এটি নিঃসন্দেহে বলা যায়। ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন সময়ে তিনি রচনা করেন ‘ছোটদের কাব্যে আমপারা’। কলকাতার ইতিকথা বুক ডিপো থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ ‘গুলশান’। যা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহে দ্রুত পঠন হিসেবে এক সময় মনোনিত হয়েছিল। তিনি গুলশান কাব্য গ্রন্থটি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গ করেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম গুলশান কাব্যগ্রন্থটি পড়ে কাব্যবিনোদকে চিঠি দিয়েছিলেন-“তোমার কাব্যগ্রন্থ গুলশান এক নিঃশ্বাসে দশবার পড়েছি। তবুও আমার তৃপ্তি হয়নি। মনে হয় আরো পড়ি।”

কাব্যবিনোদ প্রায়ই বলতেন, আমি চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াকালীন সময় হতে লিখছি। এমন কোন দিন নেই যে লিখিনি। আমার শত শত পান্ডুলিপি তেলাপোকা আর উইপোকায় খেয়ে ফেলেছে। এ পর্যন্ত কবির বেশ কটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-রুবাইয়েতে নূর, আঞ্চলিক ভাষায় হামার অমপুর, গুলশান (১৯৪৫), পেয়ারা (১৯৫০), শেফালী (১৯৫৮), ইকবাল, নজরুলনামা (১৯৬০) ইত্যাদি।

কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদ শুধু ছন্দের জাদুকর ছিলেন না। সাংবাদিক হিসেবেও এক সময় ছিলেন এ অঞ্চলের উজ্জলতম নক্ষত্র। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে এ.পি.পি (এসোশিয়েটস প্রেস অব পাকিস্তান) এর রংপুর জেলা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৪৭ সালে বৃহত্তর রংপুরের সাংবাদিকদের একত্রিত করে প্রতিষ্ঠা করেন রংপুর জেলা সাংবাদিক সমিতি। তিনি ছিলেন উক্ত সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক।

রুবাইয়াত ফার্সী কবিদের রচনা স্টাইল থেকে বাংলাদেশে কবি নূরুল ইসলাম কাব্যবিনোদই সর্ব প্রথম বাংলায় রুবাইয়াত প্রবর্তন করেছেন। অথচ উত্তরবঙ্গের কবি বলেই তাকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। তিনি কি রুবাইয়াতের ক্ষেত্রেও এ দেশের বরেণ্য কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারেন না? পেতে পারেন না একুশে পদক অথবা রাষ্ট্রীয় কোন মর্যাদা? আমার মনে হয় বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কি আদৌ জানেন বাংলা ভাষায় প্রথম রুবাইয়াত রচনা হয়েছে রংপুরের কবির কলম থেকে। তাঁর রচিত ‘রুবাইয়াত-ই-নূর’ গ্রন্থে উঠে এসেছে, দেশপ্রেম ধার্মিকতা, তৌহিদী চেতনা, সমাজের হতাশা বঞ্চন, প্রবঞ্চনা, শঠতা, মিথ্যা, ভাগ্যলিপি সহ অনেক কিছুই। তার পরে কেন এই কবির মূল্যায়ন হলো না। এ প্রশ্নের জবাব একদিন হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু সেদিন আমরা কবিকে পাবো না। তিনি হয়তো তখন পরপারে পাড়ি জমাবেন।

বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ, বিভাগীয় লেখক পরিষদ, রংপুর এর গুণী সাহিত্যিক সম্মাননাসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন কবি। ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি কবি আমাদের কাঁদিয়ে পরপারে চলে গেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *