শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড এ বাহিনীর ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। সে সময় সরকার গঠনের পরপরই বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের মতো ন্যক্কারজনক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদের মোকাবিলা করতে হয়।’ বাহিনীর সব সদস্যের সহযোগিতায় সেই সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বাহিনীকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০ আমরা পাস করেছি। এই বাহিনীকে একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা ব্যাপক সংস্কার ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বিজিবি তার ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা লাভ করবে।’
বিজিবিতে নারী সদস্য নিয়োগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজিবিতে ৮৮তম ব্যাচে প্রথমবারের মতো ৯৭ নারী সৈনিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সফলভাবে তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে ইউনিটে যোগদান করেছে। বিজিবিতে নারী সৈনিক নিয়োগের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে আমরা আরও একধাপ এগিয়ে গেলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অরক্ষিত সীমান্ত ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার লক্ষ্যে বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে একটি স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃজনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং এ বছরের ৫ জুন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় এয়ার উইংয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।
স্বাধীনতাসংগ্রামে বিজিবি সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআরের বেতারকর্মীরা এই পিলখানা থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সারা দেশে প্রচার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়্যারলেসে প্রচারের জন্য ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তিনজনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২২১ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ বাহিনীর দুজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দুর রউফসহ আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের মোকাবিলা করতে গিয়ে এ বাহিনীর ৮১৭ জন সদস্য শাহাদত বরণ করেন। আমি তাঁদের মহান আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
বিজিবি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ দরবারেও যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরের বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন এবং একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, তিন বাহিনী প্রধান, বিদেশি কূটনীতিক এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৫৯ জন বিজিবি সদস্যের মধ্যে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি পদক প্রদান করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী চিত্তাকর্ষক ‘ট্রিক ড্রিল’ ও ‘ডগ স্কোয়াড ডিসপ্লে’ উপভোগ করেন।