ঝিনাইদহ সংবাদ

Slider বাংলার মুখোমুখি

pic-1-jhenaidah

 

 

 

 

 

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ ঝিনাইদহে কৃষি ব্যাংকের কয়েকটি শাখায় ঘুষ ছাড়া কৃষকরা ঋন পাচ্ছেন না। ঘুষের টাকা না দিলে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস। কৃষি ব্যাংকের ঝিনাইদহ সদর ও হলিধানী শাখার কয়েকজন আইওর বিরুদ্ধে এই ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি ব্যাংকের ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিসের ডিজিএমকে জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাননি কৃষকরা।

কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হলিধানী কৃষি ব্যাংকের আওতাধীন সাধুহাটী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে যান সাংবাদিকরা। ওই গ্রামে ২৪ জনের বেশি কৃষককে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ঋন দেওয়া হয়েছে। টাকা দেননি বলে গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম ও মোজাম ঋন পাননি।

গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক মসলেম মন্ডল অভিযোগ করেন, তিনি এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছেন হলিধানী কৃষি ব্যাংক থেকে। তাকে এই ঋন নিতে আইও বিশ্বেশর বিশ্বাসকে ৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। মসলেম বলেন, আমি নামাজ রোজা করা মানুষ। বয়স হয়েছে। এই শেষ বয়সে ঘুষ দিতে চায় নি। কিন্তু আইও বিশ্বেশর জোর করে তার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।

একই গ্রামের মৃত বাহাদুরের ছেলে কৃষক রবজেল জানান, তিনি এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছেন। তাকে ঘুষ দিতে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম, মিঠু মালিথা, জাকির মাস্টার, শাহার আলী মালিথা, মোয়াজ্জেদসহ প্রায় ২৪ জন কৃষক ঋন নিতে আইও বিশ্বেশর বিশ্বাসকে ঘুষ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

একই গ্রামের সুন্নত আলী জানান, তিনি ১০৮ শতক জমি দিয়ে ৯০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছেন। তার কাছ থেকে আইও সাড়ে ৯ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, গোবিন্দপুর গ্রামের শের আলী মোল্লার ছেলে হায়দার আলী আইও বিশ্বেশ্বর বিশ্বাসের নিয়োজিত দালাল। তার মাধ্যমেই ঘুষের টাকা লেনদেন হয় বলে এলাকার কৃষকরা দাবী করেন।

গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি ঘুষের টাকা দিতে রাজি হননি বলে আইও বিশ্বেশর তাকে ঋন দেন নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময়কার হলিধানী ব্যাংকের ম্যানেজার প্রণব রঞ্জন বিশ্বাসকে কিষয়টি অবহিত করা হলেও তিনি কোন রকম ব্যবস্থা না নিয়েই ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিসে বদলী হয়ে আসেন। ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিসের সদ্য অবসরে যাওয়া ডিজিএম রহমত উল্লাহর কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি কৃষকরা।

এদিকে ঝিনাইদহ কৃষি ব্যাংকের প্রধান শাখার দুই আইও মতিয়ার রহমান ও মসলেম উদ্দীনের বিরুদ্ধেও ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহ অগ্রনী চত্বর এলাকার এক কম্পিউটার ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, তিনি ঋন নিতে সদরের প্রধান শাখার আইওকে ঘুষ দিয়েছেন। গান্না এলাকার কৃষক আলীম মুন্সি অভিযোগ করেন তাদের এলাকার অনেক কৃষককে ঋন নিতে ভোগান্তির স্বিকার হতে হয়। গান্নার দায়িত্বে থাকা ব্যাংকের আইও ঘুষ ছাড়া ঋন দেন না। সঠিক কাগজপত্র থাকার পরও টাকার জন্য ভুলত্রুটি ধরে ঘোরানো হয়। এদিকে সিসি লোনধারীরাও আইওদের বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা গ্রহনের অভিযোগ করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে হলিধানী ব্যাংকের আইও বিশ্বেশর বিশ্বাস জানান, বিষয়টি নিয়ে তো আগেই আমরা সাংবাদিকদের সাথে দফা করে ফেলেছি। তিনি ঘুষ গ্রহনে কথা স্বীকার বা অস্বীকারে করেন নি। ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিসের বর্তমান ডিজিএম গোর দাস ঘোষ জানান, কৃষকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ঋন দেওয়ার কোন বিধান নেই। তিনি অভিযোগকারী কৃষকের নাম ঠিকানা নিয়ে তদন্ত করবেন বলে জানান।

হলিধানী কৃষি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক রেজাউদৌল্লা খান জানান, আমি নতুন এসেছি। আগে কি হয়েছে তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, এখন ঋন কার্যক্রম তেমন একটা নেই। তবে আইও বিশ্বেশর বিশ্বাস কি করেছেন তার অজানা বলেও জানান।

ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিস সুত্রে জানা গেছে, তাদের অধীনে ১৫টি শাখা আছে। তারা ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৬৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ঋন বিতরণ করেছে। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১৫৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত তারা ৩৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার ঋন বিতরণ করেছে।

অন্যদিকে আদায় হয়েছে ৪০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। বিতরণ ও আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ আদায় হয়েছে বলে ঝিনাইদহ মুখ্য আঞ্চলিক অফিস থেকে জানানো হয়েছে।

ঝিনাইদহের জোনাব আলী ৪৫ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেনি !
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
জোনাব আলী যুদ্ধ করেছিলেন ঝিনাইদহের বিষয়খালী এলাকায়। রনাঙ্গনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাকে তাড়া করে ফেরে। কিন্তু রনাঙ্গনের এই যোদ্ধার এখন সার্টিফিকেটই ভরসা। ভারতের মাজদিয়া যুব ক্যাম্পের প্রশিক্ষন নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম তালিকায় ওঠেনি। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়েছে। কত বিতর্কিত ব্যক্তির নাম তালিকায় উঠেছে। কিন্তু জোনাব আলীর ভাগ্য টলেনি। তার নাম তালিকায় নেই।

তালিকায় নাম ওঠাতে বিভিন্ন সময় টাকা দাবী করার কারণে সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করা এই বীর নীরবে নিভৃত্বে জীবন যাপন করছেন। জোনাব আলী ১৯৫৭ সালের ২০ ফেব্রয়ারী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গাগান্না গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবার নাম মৃত ইশারত আলী মন্ডল। যুবক বয়সে ডাক আসে যুদ্ধে যাওয়ার। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি অস্ত্র হাতে ঝাপিয়ে পরেন যুদ্ধে। চোখের সামনে অনেক সহযোদ্ধাকে অকাতরে জীবন দিতে দেখেছেন তিনি।

জোনাব আলী জানান, জেবা মুন্স নামে এক কমান্ডারের অধীন তিনি বিষয়খালী ফ্রন্টে যুদ্ধ করেছেন। তিনি হতদরিদ্র হওয়ায় মাজদিয়া যুব ক্যাম্পের প্রশিক্ষন সনদ ছাড়া তার কাছে আর কিছুই নেই। তার সাথে যুদ্ধ করেছিলেন সদর উপজেলার সাহেব নগর গ্রামের ফজলুর রহমান, একই গ্রামের ইসাহাক আলী ও আবুল কাশেম। তাদের নাম তালিকায় উঠলেও তিনি বছরের পর বছর ঘুরে হয়রান হচ্ছেন।

মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান, ইসাহাক আলী ও আবুল কাশেমও জানালেন জোনাব আলী প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদের দাবী জোনাব আলীর নাম তালিকাভুক্ত করার। জোনাব আলী জানান, তিনি এ পর্যন্ত বহুবার ফরম পুরণ করে দিয়েছেন, কিন্তু গেজেটে তার নাম আসেনি। স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন রনাঙ্গনের এই যোদ্ধা।

স্টেন গানের গুলিতে পাক বাহিনীকে পরাস্ত করলেও অভাবের কাছে তিনি এখন এক পরাজিত সৈনিক। এটা তার জন্য লজ্জাকর। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিসে যোগাযোগ করা হলে জোনাব আলীর বিষয়ে কোন তারা তথ্য দিতে পারেনি।

ঝিনাইদহ মহেশপুরে টুটুলের ব্যতিক্রমী লাইব্রেরি !
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
শ্যামলছায়ায় ঢাকা পাখির কাকলিতে মুখর নিভৃত এক পল্লী গ্রামের কাঁচা রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি টিনশেড ঘর। লোহার খুঁটিতে ঘরের সামনে টাঙানো সাইনবোর্ড। দূর থেকেই সেটি যে কারো দৃষ্টি কাড়বে। টিনশেড ও চারপাশে টিনের বেড়ায় ঘেরা ঘরটির ভেতর কোন জ্ঞানপিপাসু ঢুকলে তাঁর অবাক না হয়ে উপায় নেই।

লাইব্রেরী ঘরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো- বই দিয়ে ঠাসা ৭/৮টি আলমারি। আরও অনেক বই আলমারি/র‌্যাকের অভাবে সযতেœ গোছানো আছে দু’একটি টেবিলের উপরে। লক্ষ্যনীয় বিয়য় হচ্ছে- ঘরভর্তি পাঠক, অথচ পিনপতন নিরবতা। লম্বা টেবিলে সারিবদ্ধভাবে বসে বই পড়ছেন বেশ কয়জন পাঠক। কেউবা চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন দৈনিক পত্রিকার পাতায়। এলাকার মানুষের বক্তব্য অনুযায়ী- এ হচ্ছে মাতৃভাষা গণগ্রন্থাগারের সুন্দরতম এক নৈমিত্তিক দৃশ্য।

উদ্যমী স্বপ্নবাজ এক তরুণের একক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে এই লাইব্রেরী। অজপাড়া গাঁয়ের মানুষ এখন লাইব্রেরীর কল্যাণে বই পড়তে পারেন। চোখ বোলাতে পারেন অনেক গুলো দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায়। ওই তরুণের নাম এম. কে. টুটুল। সে জানালেন- বায়ান্ন তাঁর চেতনা, একাত্তর তাঁর প্রেরনা। মা মাটি মানুষ মুক্তিযুদ্ধ তার সমান প্রিয়। তাই তো তাঁর প্রতিষ্ঠিত লাইব্রেরীর নাম রেখেছেন মাতৃভাষা গনগ্রন্থগার। স্বল্প পরিসরে হলেও নিজ বিভায় ক্রমে ক্রমে বিকশিত হয়ে উঠছে লাইব্রেরীটি।

ঝিনাইদহ মহেশপুর উপজেলার অজপাড়াগাঁ কালুহুদায় ২০০১ সালে এম. কে. টুটুল নামের মুক্তমনের অধিকারী, পরপোকারী ও সমাজ সচেতন তরুণের নিরলস প্রতিষ্ঠার আধুনিক সুযোগরবঞ্চিত এমন এক অখ্যাত পল্লীতেই গড়ে ওঠে লাইব্রেরীটি। মাত্র ১৬ বছরের ব্যবধানে ছোট্ট পরিসরের সেই লাইব্রেরীর কার্যক্রম ধীরে ধীরে বিস্তৃতি লাভ করেছে, আশপাশের প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতেও এর প্রভাব পড়েছে। টুটুল এখন শিক্ষার আলো দিয়ে আলোকিত করছে পুরো অঞ্চলকে। মাতৃভাষা গনগ্রন্থগার বদলে দিচ্ছে এসব এলাকার শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক পরিবেশ।

দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক ও ফরম পূরণের অর্থ সরবরাহ ও জামানত কিংবা চাঁদা ছাড়া এ লাইব্রেরীতে বই ও পত্রিকা পড়ার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত। এলাকার সবার মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি লাইব্রেরীর উদ্যোগে নিয়মিত গরীব মানুষের বসত বাড়িতে বৃক্ষরোপন, জাতীয় দিবস পালন, কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে।

এছাড়াও গণসচেতনা সৃষ্টি করতে মাল্টিমিডিয়া প্রজক্টর মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, মাদক, যৌতুক, ইভটিজিং-এর বিরুদ্ধে প্রচারনা চালানো এছাড়াও তরুণ প্রজন্মকে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাথা ইতিহাস জানানোর লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনি সে সাথে গ্রামে গ্রামে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করতে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। আর এ কাজকে আরো গতিশীল করতে সম্প্রতি লাইব্রের তে কেনা হয়েছে একটি হ্যান্ডমাইক।

এসব কারণে কালুহুদাসহ আশপাশের সব গ্রামের জ্ঞানপিপাসু মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী এ লাইব্রেরীর কার্যক্রম। ডাঃ সাইফুল ইসলাম ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী আবু হাসান দৈনিক ৩ কিলোমিটার ঁেহটে এ লাইব্রেরীতে পড়তে আসেন। লাইব্রেরীর কল্যাণে তিনি এসএসসিতে ভালো ফল করতে পেরেছেন। আলাপকালে আবু হাসান বলেন, আমার লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তক এবং সহপাঠ্য বই কেনার সামর্থ ছিল না এ লাইব্রেরী আমার সেই অভাব মিটিয়েছে।

একই ধরণের কথা বলেন, পাশের হাবাশপুর গ্রামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোঃ শিপন হোসেন, জোকা গ্রামের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেলোয়ার হোসেন, শংকরহুদা গ্রামের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুন ও কালুহুদা গ্রামের চৌগাছা ডিগ্রী কলেজের ছাত্র হাসানুর রহমান।

কালুহুদা গ্রামের ৬২ বছর বয়সী মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, দারিদ্র পীড়িত এ এলাকার মানুষ স্বাভাবিক কারণেই লেখাপড়া বিমুখ ছিল। স্কুলশিক্ষা শুধু বিত্তবানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন দিনমজুরের মেয়েছেলেরাও স্কুলে যায়। লাইব্রেরীর কল্যাণেই এ পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।

এসব এলাকার শিক্ষার্থী-কৃষক-যুবকসহ বেশিরভাগ মানুষ এখন লাইব্রেরী মুখে। লুৎফর রহমান খুব গর্ব অনুভব করেন এ জন্য যে, উপজেলা শহর থেকে জ্ঞানপিপাসু মানুষের ¯্রােত এখন উল্টে কালুহুদা গ্রামের দিকে। তিনি বলেন, মহেশপুর থেকে এখন কবি সাহিত্যিক গবেষকরা বই পড়তে আমাদের গ্রামে চলে আসে। আমাদের খুব ভাল লাগে।

টুটুলের অক্লান্ত পরিশ্রম, তার মায়ের ¯েœহ ছায়া আর হাজার মানুষের ভালবাসায় ভিজে ভিজে এগিয়ে যাচ্ছে মাতৃভাষা গনগ্রন্থগার। টুটুল যখন বই সংগ্রহ করতে ঢাকা বা অন্য কোথাও যায়, পত্রিকা সংগ্রহ বা লাইব্রেরী সংক্রান্ত কাজে উপজেলা বা জেলা সদরে যায় তখন এই গ্রন্থগারটি বুক দিয়ে আগলে রাখেন তার মা। তার অনুপস্থিতিতে পাঠককে বই সরবরাহ করেন মা। ’মা-ই আমার সব। তার প্রশয় ছাড়া আমি এমন একটি কাজে এগিয়ে আসতে পারতাম না।’ বিনয়ী হাসি দিয়ে বললেন টুটুল।

টুটুলের মা শুকতারা বেগম বলেন, ‘টিউশনির আয়, বাড়ির গাছের ফল বিক্রি করা, এমনকি আমার সংসারের বাজার কিংবা ঔষধ কেনা টাকা থেকেও লাইব্রেরী পেছনে ব্যয় করে টুটুল। টিনশেডের নড়বড়ে ঘর হওয়ায় ঝড়বৃষ্টি এলে তার অস্থিরতা দেখলে খুবই কষ্ট লাগে। আমারও সামর্থ্য নাই পাকা ঘর তৈরী করে দেয়ার। লেখাপড়া শেষ হবার পর পরিবার থেকে চাকরির জন্য চাপ দিয়েছি।

কিন্তু সে তার প্রানের লাইব্রেরী ছেড়ে যেতে নারাজ। এখন আমি সমাজ দেশ ও জাতির কল্যাণে শহীদ রুমীর মতো টুটুলকেও…।’ তার কণ্ঠ বাস্পরুদ্ধ হয়ে আসে। লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা এম. কে. টুটুল বলেন, ‘১৯৯৫ সালে ৮ম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বড় অসময় বাবা মিজানুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন। বিধবা মায়ের অসচ্ছল সংসার থেকে লেখাপড়া করতে অনেক কষ্ট হয়েছে।

এ ছাড়াও ২০০০ সালের আকস্মিক বন্যায় এলাকায় ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। দরিদ্র পিতামাতা তাদের সন্তানদের নতুন বইখাতা কিনে দিতে পারছে না। এই অবস্থা থেকে আমার মাথায় লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠার ভাবনা আসে। এরপর নিজের বাড়ির এক কোণে টিন-বাঁশের ঘর তৈরী করি। মামা শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবলের লেখা ‘ধূসর সীমান্ত’ সহ মাত্র ৫০টি বই নিয়ে লাইব্রেরির যাত্রা শুরু করি। এখন বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। পাঠ্যপুস্তক, কৃষি, মুক্তিযুদ্ধ বিষযক বই- মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত চলচ্চিত্র ও প্রামান্য চিত্র, গল্প-উপন্যাস, কবিতা-প্রবন্ধ সহ সাহিত্যের ও সব ধরণের বই আছে এ লাইব্রেরীতে।

অমর একুশে বইমেলা, প্রকাশক, লেখক ও খ্যাতিমান মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে এসব বই সংগ্রহ করেছি। এছাড়া প্রতিদিন ৮ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে উপজেলা সদর থেকে সংগ্রহ করে আনি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা।’

টুটুলের সব স্বপ্ন এ এলাকার মানুষের বাতিঘর খ্যাত মাতৃভাষা গনগ্রন্থগারকে ঘিরে। তার ইচ্ছা সেখানে শিশুদের জন্য পৃথক কর্ণার ও তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের। তথ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এ অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে। আর শিশুকর্ণারে অবুঝ শিশুরা নিজেদের মতো করে হেসে খেলে বেড়াবে। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ভালো মানের ভবনসহ আধুনিক প্রযুক্তির অভাব। গ্রন্থগারের জরার্জীণ টিনের চালা আজও বিদ্যমান।

গ্রন্থগারের ভবিষ্যৎ ভেবে সুহৃদয় প্রাক্তন ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক জনাব শফিকুল ইসলাম, বর্তমান জেলা প্রশাসক জনাব মাহবুব আলম তালুকদার, প্রাক্তন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব নাছিমা খাতুন, বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব আশাফুর রহমান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ড.আব্দুল মালেক গাজী মহোদয়দের মহানুভবতায় (৩৭.২৯ বর্গফুট আয়তন বিশিষ্ট) নতুন ভবনের কাজ নির্মাণাধীন। ভবনটি নির্মাণে আনুমানিক খরচ হবে ১৫ লক্ষ টাকা। যদিও গ্রন্থগারের নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। তারপরও আশাবাদী টুটুল। মানুষের ভালবাসাকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে চান আরো বহুদূর।

ইবিতে এবার মুক্তিযোদ্ধার সনদে জালিয়াতি করে ভর্তি: অবশেষে বহিস্কার সাকিব !
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) মুক্তিযোদ্ধার সদন জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়ার দায়ে সাকিব আহম্মেদ নামের এক শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিস্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তার নামে মুক্তিযোদ্ধার সদন জালিয়াতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার অভিযোগ পাওয়ায় কতৃৃপক্ষ তাকে বহিস্কার করে। অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে গত ২৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে ও উপচার্যের বিশেষ ক্ষমতা বলে রোববার বিকালে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার এস এম আব্দুল লতিফ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে সাকিব আহম্মেদ নামে এক শিক্ষার্থী তার পিতা এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমানের নামের সাথে মিল রেখে মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের জাল মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায় মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান ঝিনাইদহ জেলার খাজুরা গ্রামের মৃত্যু আরিফ হোসেন বিশ্বাসের ছেলে। অন্যদিকে সাকিব আহম্মেদের পিতা এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ড থানার, মাকিমপুর গ্রামের শামসুদ্দিন লস্করের ছেলে। ওই শিক্ষার্থীর পিতার নাম ঠিক থাকলেও দাদার নাম অমিল পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

এছাড়া ভর্তি কাগজ পত্রে ঐ শিক্ষার্থী তার স্থায়ী ঠিকানা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম লিখেছেন কোন স্থানে মাকিমপুর, ঝিনাইদহ আবার কোনো স্থানে গ্রাম খাজুরা, উপজেলা হরিনাকুন্ড, জেলা ঝিনাইদহ। মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতি করে ভতি হওয়ার এ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ উঠলে এর পরিপেক্ষিতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল হক ও একাডেমিক শাখার প্রধান উপ রেজিষ্টার এ টি এম এমদাদুল আলম।

তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান ও যাচাই বাছাই শেষে রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর রশিদ আসকারির নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনের নির্ভরযোগ্যতার তথ্যের উপর ভিত্তি করে এবং উপচার্যের বিশেষ ক্ষমতা বলে সাকিব আহম্মেদকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে স্থায়ী ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রেজিষ্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ। তার বহিস্কারের বিষয়টি আগামী সিন্ডিকেটে রিপোর্ট করা হয়েছে বলে তিনি জানান। সিন্ডিকেট বৈঠকের সিদ্ধান্তের পর তার এ বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হবে। তবে এখন থেকে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করতে পারবে না।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে কৃষি উপকরন বিতরণ হল ৭২ জন কৃষকদের মধ্যে !
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সোমবার দুপুরে ৭২ জন কৃষকের মধ্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ করেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছাদেকুর রহমান প্রধান অতিথি থেকে এসব কৃষকের মধ্যে কৃশি উপকরণ তুলে দেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ঝিনাইদহ জেলা কৃষি প্রশিক্ষন কর্মকর্তা নাজমূল আহসান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহিদুল করিম, মৎস অফিসার আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাইদুর রহমান রেজা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খন্দকার শরিফা আক্তার, সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিবুপদ বিশ্বাস প্রমুখ। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে রাজস্ব বাজেটের আওতায় ফসলের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য ৭২ জন কৃষকের মধ্যে ৫৬ জনকে ভুট্রা ১০ জনকে সরিষা, ৪ জনকে পিয়াজ ও ২ জন বিটি বেগুন প্রদর্শন প্লট করার জন্য এসব কৃষি উপকরণ প্রদান করা হয়।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহিদুল করিম বলেন, ৫৬ জন ভুট্রা চাষীর প্রত্যেককে ডিএপি ৩০ কেজি, এমওপি ১৫ কেজি, বরিক এ্যাসিড দেড় কেজি, দস্তা ২ কেজি, ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ১০ কেজি। ১০ জন সরিষা চাষীরকে ইউরিয়া ৪০ কেজি, পটাশ ১৭ কেজি, টিএসপি ৩৫ কেজি, জীপ সার ৩০ কেজি, বরিক এ্যাসিড ২ কেজি, দস্তা সার দেড় কেজি। ২ জন বিটি বেগুন চাষীর ইউরিয়া ৪০ কেজি, পটাশ ২৭ কেজি, টিএসপি ১৩ কেজি। ৪ জন পিয়াজ চাষীর ইউরিয়া ৫০ কেজি, পটাশ ৩০ কেজি, টিএসপি ৫০ কেজি, জীপসার ২০ কেজি করে প্রদান করা হয়।

শৈলকুপায় নিখোঁজের ৪ দিন পর ট্রাক হেলপারের মৃতদেহ নর্দোমা থেকে উদ্ধার !
ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নর্দোমা থেকে সঞ্জয় কুমার সাহা (২৮) নামের এক ট্রাক হেলপারের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে পৌর এলাকার মধ্যপাড়া ললিত মোহন ভূইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের একটি নর্দোমা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। সে ঐ এলাকার মৃত নারায়ন কুমার সাহার ছেলে।

জানা যায়, কয়েকদিন যাবৎ ড্রাক হেলপার সঞ্জয় নিখোজ ছিলো। অনেক খোজাখুজির পরও তাকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তার ভাই টনি এ মর্মে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। অবশেষে সোমবার দুপুরে সঞ্জয়ের নিজ ঘরের পেছনের দিকের নর্দোমায় তার মৃতদেহ ভেসে উঠতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে মৃতদেহটি উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

তাকে হত্যা শেষে মৃতদেহ নর্দোমায় ফেলে দেয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারনা। শৈলকুপা থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, নর্দোমা থেকে ট্রাক হেলপারের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে মৃত্যুর সঠিক কারন জানা যাবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *