নারায়ণগঞ্জ; জনতার মুখোমুখি প্রার্থীরা। মুখোমুখি ভোটারদের নানা প্রশ্নের। সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়েন জনতা। উত্তর দেন প্রার্থীরা। নির্বাচিত হলে কী করবেন? কীভাবে করবেন? তার জবাব দেন ৭ মেয়র প্রার্থী। স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে কিছুটা উত্তাপও ছড়ায় প্রার্থীদের বক্তব্য ও উত্তরে।
শনিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের কনভেনশন হলে সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীদেরকে জনতার মুখোমুখি করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। এতে বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। পাকিস্তানীরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে হয়েছিল। আমরা এখন উন্নয়ন, সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। গণতন্ত্র সাংবিধানিক চার মূলনীতির অন্যতম। এই নির্বাচন স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রার্থী কয়েকজন হলেও একজনই জিতবেন। তাই সবাইকে মিলেমিশে নির্বাচন করতে হবে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
সুজনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি আয়োজিত জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে একই কমিটির সভাপতি আবদুর রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মেয়রপ্রার্থীরা সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন। জনগণের জন্য কে কী করতে চান তা তুলে ধরেন। তুলে ধরেন নিজেদের উন্নয়ন পরিকল্পনা। উঠে আসে নাগরিক সমস্যা ও সমাধানের উপায়। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমি যেহেতু আগে কাজ করেছি। তাই আমার কাজের কিছু ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। যে কাজ করেনি তার কোনো ভুল নেই। কদমরসুল ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাকে আমি একেবারে অনুন্নত ও ভগ্নদশায় পেয়েছি। তারপরও কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শতভাগ কাজ আমি করতে পারিনি। ৭০ ভাগ শেষ করেছি। ৩০ ভাগ এখনও বাকি। আমি নির্বাচিত হলে বাকি কাজগুলো এগিয়ে নেয়া হবে। আবার কিছু কাজ স্থানীয় সরকারের আওতাভূক্ত নয়। যানজট ও গ্যাস-পানির সমস্যা কেউ করে ফেলবে বললেই করা যায়না। তাই ঢাকার সাবেক সফল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ সিটি গভর্মেন্ট চেয়েছিলেন। তা গঠিত হলেই স্থানীয় সব কাজ মেয়ররা করতে পারতো। তবে আমি যে কাজ করেছি তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য সবার সহযোগিতা চাই।
একই ভাবে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. সাখাওয়াত হোসেন খানও প্রথমে নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও পরিকল্পনা তুলে ধরেন। বলেন, ২২ ডিসেম্বরের নির্বাচন নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাতে আমি নির্বাচিত হলে প্রথমেই সব শ্রেণী-পেশার বিশেষজ্ঞ নাগরিকদের নিয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করবো। তাদের পরামর্শ ও মতামতের ভিত্তিতে নারায়গঞ্জের উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করবো। এরপর সে অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন করা হবে। অবৈধ দখলে থাকা খালগুলো উদ্ধার করে গ্রীণ সিটি করা হবে। ধুলাবালি ও আবর্জনামুক্ত নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলা হবে। মাদক ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে গড়ে তোলা হবে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সমস্যা দুর করা হবে। সচেতনতা বৃদ্ধি করে দল-মত নির্বিশেষে নারায়ণগঞ্জবাসীর উন্নয়নে কাজ করা হবে।
মুখোমুখি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি যানজট, শব্দ, বায়ু, নদী দুষণের বাস অযোগ্য জলাবদ্ধতার শহর। একটাকে কোনো ভাবেই আধুনিক শহর বলা যায় না। আগের মেয়র অনেক কাজ করেছেন। তবে তা যথেস্ট নয়। আমি নির্বাচিত হলে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করবো। নারায়ণগঞ্জের প্রধান সম্পদ শীতলক্ষা নদীতে একসময় ডলফিন বিচরণ করতো। এখন নাকে রুমাল দিতে হয়। তা দুষণমুক্ত করা হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাসুম বিল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, প্রাচ্যের ড্যান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য সবার আগে প্রয়োজন দুর্নীতি দুর করা। এজন্য চাই সৎ ও যোগ্য প্রার্থী। আমি নির্বাচিত হলে একটি দুর্নীতিমুক্ত নারায়ণগঞ্জ উপহার দেব। হকারদের পুনর্বাসন করে রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেব।