গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসছে

Slider অর্থ ও বাণিজ্য ফুলজান বিবির বাংলা সারাদেশ

7cd3ec27464a4bb0eb63df9588330814-untitled-10

ঢাকা; সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা শিগগিরই আসছে। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এ বিষয়ে হিসাব চূড়ান্ত করেছে। সে অনুযায়ী আবাসিক খাতে ২ চুলার জন্য ১ হাজার এবং ১ চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হতে পারে। আর যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির দাম হতে পারে প্রতি ঘনমিটার ৪০ টাকা। বর্তমানে আবাসিকে ২ চুলার জন্য ৬৫০ ও ১ চুলার জন্য ৬০০ টাকা দিতে হয়।
এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, শিল্প, বাণিজ্যিক, চা-বাগান প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই গ্যাসের দাম বাড়ছে। তবে পেট্রোবাংলা এবং এর অধীনস্থ সংস্থাগুলো যে হারে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, তার তুলনায় বৃদ্ধির হার অনেকটাই কম হবে বলে বিইআরসির সূত্র জানায়।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. মাকসুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো দিন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। দাম যতটাই বাড়ানো হোক, তার প্রধান কারণ গ্যাসের দামের ওপর থেকে সরকারের শুল্ক ও কর সংগ্রহের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এস এম শামসুল আলম বলেন, ১৯৯৮ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে ৫৫ শতাংশ রাজস্ব (৪০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১৫ শতাংশ মূসক) না নিয়ে গ্যাস খাত পরিচালনায় তা ব্যয় করার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে এসআরও (২২৭ নম্বর) জারি করেছিল, এখন তার অন্যথা করা জনস্বার্থের অনুকূল নয়।

ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা আরও বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য বাড়তি যে অর্থ সংস্থাগুলোর প্রয়োজন, তার সংস্থান তাঁদের উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়েই করা সম্ভব। গ্যাস খাতের প্রতিটি কোম্পানির হাতে বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে, যা এ খাতের উন্নয়নের কোনো কাজে লাগছে না। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।

এদিকে সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিলেও বাসাবাড়িতে গ্যাস-সংকট দূর করতে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের সংকট তীব্র হচ্ছে। এই সংকট দূর করার ব্যাপারে তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কোনো আশার কথা শোনাতে পারেননি। তাঁরা বলেছেন, সমাধানের চেষ্টা করছেন। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের এই সংকটের মধ্যে বাড়তি পাওনা হতে চলেছে মূল্যবৃদ্ধি।

বিইআরসির সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলা প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছিল, গ্যাসের দাম গড়ে ৯০ শতাংশের বেশি বাড়ানোর। কিন্তু গণশুনানির সময় তা কমিয়ে ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর সংশোধিত প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাবের ওপর শুনানিতে অনেক বিষয় উঠে আসে, যাতে ৬৫ শতাংশ দাম বাড়ানোরও যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়নি। কাজেই ওই প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বাড়ছে না। তখন আবাসিকে ২ চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা, ১ চুলার জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা, আবাসিকে মিটারযুক্ত গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারের বর্তমান দাম ৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ৩২ শতাংশ, সারে প্রায় ৩৬ শতাংশ, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ১২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, শিল্পে প্রায় ৫৬ শতাংশ, বাণিজ্যে ৬৭ শতাংশ, চা-বাগানে ৬৮ শতাংশ ও সিএনজিতে ৪৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়।

এর আগে গত বছরের (২০১৫ সাল) ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন ২ চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ এবং ১ চুলার বিল ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। এ ছাড়া সব গ্রাহকশ্রেণির ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারি।

বিইআরসির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির আয়োজন করা হবে। এ বছরের শুরুর দিকেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডসহ (পিডিবি) এ খাতের সব সংস্থা বিইআরসির কাছে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির সংকট, শহরের প্রান্ত এলাকায় পানি সরবরাহে সমস্যার মধ্যে ঢাকা ওয়াসা চার মাসের মাথায় আবারও পানির দাম বাড়াল। আবাসিক ক্ষেত্রে দাম প্রতি ইউনিটে (এক হাজার লিটার) ১ টাকা ৫১ পয়সা এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ৩ টাকা ৭২ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *