ঢাকা; রক্তস্নাত বিজয়ের ৪৫ বছর। ৩০ লাখ শহীদ আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকে দেশ। নানা চড়াই-উৎরাই আর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজ অদম্য এক বাংলাদেশ। স্বাধীনতা অর্জনের পর শূন্য থেকে শুরু করা একটি দেশ সাড়ে চার দশকে অর্জন, উৎপাদন আর সক্ষমতায় রীতিমতো বিস্ময়কর এক উদাহরণ। নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে এই সময়ে। সাড়ে সাত কোটি জনসংখ্যা নিয়ে স্বাধীন দেশের যাত্রা হলেও তা এখন ঠেকেছে দ্বিগুণেরও বেশি। বর্ধিত জনগোষ্ঠীর খাদ্য যোগানে বিস্ময় জাগানিয়া অর্জন উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য বড় এক উদাহরণ। রাজনৈতিক টানাপড়েন, হত্যা, ক্যু’র ষড়যন্ত্রে বার বার পথ হারিয়েছে দেশ। কিন্তু থেমে থাকেনি অদম্য মানুষের সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। দেশে, প্রবাসে, ঘরে-বাইরে দেশের মানুষের কর্মমুখর চেষ্টা এনে দিয়েছে একের পর এক অর্জন। প্রবাসে শ্রম, ঘাম আর মেধায় বিশ্বজুড়ে নিজেদের অবস্থানের সঙ্গে প্রিয় দেশটিকে গর্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছেন কোটি মানুষ। অবহেলিত জনগোষ্ঠীর পরিশ্রমের ফসল পোশাক শিল্প এখন বিশ্বজুড়ে ব্রান্ড বাংলাদেশ। এই সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে ধারাবাহিক উন্নতি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়েছে উজ্জ্বল এক সম্ভাবনা হিসেবে। স্বাধীনতা পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে পেশ করা স্বাধীন দেশের প্রথম বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৪৫ বছরে বার্ষিক বাজেটের আকার এখন প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম তিন বছর প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ৭৫। আর এখন সাত পেরিয়েছে প্রবৃদ্ধি। টানা কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধি হার অনেকটা বিস্ময়কর। প্রায় ৮৮ ভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী নিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন দেখছে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার। ২০৫০ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে নাম লেখাতে যে চেষ্টা আর উদ্যম ছোট্ট এই ভূখণ্ডে তাকে বড় কোনো স্বপ্ন নয় বলেই মনে করছেন বিশ্ব অর্থনীতির বিশ্লেষকরা। স্বাধীনতা পরবর্তী বছরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৩৪৮.৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাট, পাটজাত পণ্য আর চামড়ায় সীমাবদ্ধ ছিল এই রপ্তানি বাজার। আর এখন তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর ভর করে এ বাজার এখন ২৭৬৩৭.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের। রপ্তানি বাজারে একের পর এক যুক্ত হয়েছে নতুন পণ্য। শূন্য থেকে শুরু হওয়া দেশের রিজার্ভ এখন ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স আসছে বছরে ১৪৯৩১ মিলিয়ন ডলার। জীবন মান উন্নত হওয়ায় মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০.৭-এ। দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এখন ১০ কোটি ৬৫ লাখ। যা মোট জনগোষ্ঠীর ৬৬ শতাংশ। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন স্বর্ণযুগে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে এখন বয়স্ক লোকের সংখ্যা বাড়ছে। কমছে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিত্র ঠিক উল্টো। বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী বিশেষ করে যুবশক্তিকে সঠিক শিক্ষা, উন্নত প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিলে সামনে উন্নয়ন আর অগ্রগতির আরো বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিস্ময়কর অর্জন এসেছে নানা ক্ষেত্রে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অসম্ভব প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর কর্মোদ্যম মানুষের চেষ্টায় দেশ এগোলেও সেভাবে এগোয়নি দেশের রাজনীতি। বিরোধপূর্ণ ও হিংসাপ্রবণ রাজনীতি বরাবরই পেছন টেনে রেখেছে অগ্রযাত্রার গতি। স্বাধীনতা পরবর্তী স্বাধীন ভূখণ্ডের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল স্বপ্নের পথে যাত্রা। সে যাত্রায় ছেদ পড়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। ঘাতকরা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে নতুন এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে। এর পর থেকে একের পর এক ঘটনাচক্র দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে যোগ করেছে আরো কালো অধ্যায়। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার শুরু হলেও তা মাঝপথে ছেদ পড়ে জরুরি জমানায়।
তবে এই সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং দণ্ড কার্যকর দেশের রাজনীতির বড় অর্জন হিসেবেই দেখছেন অনেকে। বিদেশি সাহায্য ছাড়াই দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ঢাকার পথে মেট্রোরেলের স্বপ্ন এখন বাস্তবের পথে। যোগাযোগ আর প্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে বিগত সময়ে। পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে চার লেনের বেশ কয়েকটি মহাসড়ক নির্মাণ আর এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণের। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সবক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আর সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠলে অমিত সম্ভাবনার এই দেশ সামনে হয়ে উঠতে পারে উন্নয়ন আর অগ্রগতির অনন্য এক উদাহরণ।
বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকী আজ: স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিন আজ। বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকী। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বহু প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে এদিনে বাঙালি ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের পর এদিন আত্মসমর্পণ করে মুক্তিকামী মানুষের কাছে। আজ পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় পুরো জাতি স্মরণ করবে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী লাখো শহীদকে। যাদের জীবন উৎসর্গে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। উচ্চারিত হবে সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর পালন করবে বিজয় দিবসের কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বাণী দিয়েছেন। প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে সারা দেশের সকল সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকালে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ। এতে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। এর মধ্যে আছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ তিনদিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিজয় দিবসে সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে সকাল সাড়ে ১০টায় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র্যালি করবে আওয়ামী লীগ। বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকাল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়াও আগামী ১৮ই ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ রবীন্দ্র সরোবরে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনের জন্য দেশের সকল শাখা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকেও বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলোকে সাজানো হয়েছে জাতীয় ও রঙ-বেরঙের পতাকা দিয়ে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির ও গির্জা-প্যাগোডায় অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা। এতিমখানা, হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনাটিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গড়ে তোলা হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ঘিরে। স্মৃতিসৌধে নিরাপদে শ্রদ্ধা নিবেদনের স্বার্থে ওই এলাকার কয়েকটি সড়কে সাময়িক সময়ের জন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
তবে এই সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং দণ্ড কার্যকর দেশের রাজনীতির বড় অর্জন হিসেবেই দেখছেন অনেকে। বিদেশি সাহায্য ছাড়াই দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। ঢাকার পথে মেট্রোরেলের স্বপ্ন এখন বাস্তবের পথে। যোগাযোগ আর প্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে বিগত সময়ে। পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে চার লেনের বেশ কয়েকটি মহাসড়ক নির্মাণ আর এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণের। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সবক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আর সুষ্ঠু ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠলে অমিত সম্ভাবনার এই দেশ সামনে হয়ে উঠতে পারে উন্নয়ন আর অগ্রগতির অনন্য এক উদাহরণ।
বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকী আজ: স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের দিন আজ। বিজয়ের ৪৫তম বার্ষিকী। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বহু প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে এদিনে বাঙালি ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের পর এদিন আত্মসমর্পণ করে মুক্তিকামী মানুষের কাছে। আজ পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় পুরো জাতি স্মরণ করবে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী লাখো শহীদকে। যাদের জীবন উৎসর্গে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। উচ্চারিত হবে সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর পালন করবে বিজয় দিবসের কর্মসূচি। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বাণী দিয়েছেন। প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসটির সূচনা হবে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে সারা দেশের সকল সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পালিত হবে নানা কর্মসূচি। সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সকালে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হবে বিজয় দিবস কুচকাওয়াজ। এতে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ রাজধানীর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে। এর মধ্যে আছে সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ তিনদিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিজয় দিবসে সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে সকাল সাড়ে ১০টায় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় র্যালি করবে আওয়ামী লীগ। বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার বিকাল ৩টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়াও আগামী ১৮ই ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ রবীন্দ্র সরোবরে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপনের জন্য দেশের সকল শাখা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকেও বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলোকে সাজানো হয়েছে জাতীয় ও রঙ-বেরঙের পতাকা দিয়ে। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মসজিদ, মন্দির ও গির্জা-প্যাগোডায় অনুষ্ঠিত হবে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা। এতিমখানা, হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনাটিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গড়ে তোলা হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ঘিরে। স্মৃতিসৌধে নিরাপদে শ্রদ্ধা নিবেদনের স্বার্থে ওই এলাকার কয়েকটি সড়কে সাময়িক সময়ের জন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।