ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার অপমানে জীবন দিলো আফরোজা

জাতীয়

 

file
ঢাকা; প্রেম করার অভিযোগে হাত বেঁধে গ্রাম ঘুরানো ও সালিশে মারধরের অপমান সইতে না পেরে কিশোরী আফরোজা আত্মহত্যা করেছে। আর তাদের বেঁধে গ্রাম ঘুরিয়ে ছিলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মাতব্বররা। শুক্রবার এ সালিশের ঘটনার পর শনিবার বিকালে ওই কিশোরী নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে কলারোয়া থানায় মামলা হয়েছে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম মনিরুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসএম মনিরুল ইসলাম সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সোনাবাড়িয়া গ্রামের ইসলামের ছেলে হাসান আলী (২৮), বাবু সরদারের ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৩০), চৌকিদার ইসমাইল হোসেন (৫৮), শওকত আলীর ছেলে হাকিম আলী (৫০), সাধন দাসের ছেলে জয়দেব দাস (২২) ও পলাশ (৩০)। আত্মহত্যাকারী কিশোরীর নাম আফরোজা খাতুন (১৫)। সে সোনাবাড়িয়া গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদের ছোট মেয়ে।
আফরোজার ভাই মামলার বাদী ইব্রাহীম খলিল জানান, তার বোন শুক্রবার জুমার নামাজের সময় সোনাবাড়িয়া বাজারে হাসানের দোকানে মোবাইলফোনে ফ্লাক্সিলোড দিতে যায়। সেখানে ওই দোকানের মধ্যে অন্য এলাকা থেকে আসা ট্রাকচালক পলাশ ছিল। এসময় দোকানদার হাসান নামাজ পড়তে পাশের মসজিদে যান। এ সময় সোনাবাড়িয়া গ্রামের বাবু সরদারের ছেলে হাফিজুর দোকান ঘর বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দিয়ে প্রচার করে আফরোজা ও পলাশ অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল। একথা জানতে পেরে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম চৌকিদার ইসমাইল হোসেনকে ঘটনাস্থলে পাঠান। ইসমাইল হোসেনসহ ৪/৫ জন দুইজনকে দড়ি দিয়ে একত্রে বেঁধে গ্রাম ঘুরিয়ে ইউপি কার্যালয়ে হাজির করেন। ইউপি চেয়ারম্যান শত শত মানুষের সামনে তাদের দুজনকে মারপিট করেন। এসময় পলাশকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। আর আফরোজাকে সতর্ক করে তার মা আনোয়ারা বেগমের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় অপমানে শনিবার বিকালে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলে আত্মহনন করে। পরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় খবর দেয়া হয়।
আনোয়ারা বেগম জানান, তার তিন সন্তান। আফরোজা সবার ছোট। ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের নির্দেশে চৌকিদার ইসমাইলসহ কয়েকজন তার মেয়েকে বিনা দোষে মারপিট করেছে। অন্য একটি যুবকের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে সোনাবাড়িয়া বাজারসহ গ্রাম ঘুরিয়েছে। সালিশ বৈঠকে একাকী একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটানো হয়েছে। আনোয়ারা বেগম দোষীদের শাস্তি দাবি করেন।
কলারোয়া থানার ওসি জানান, মেয়েটির আত্মহত্যার খবর পেয়ে অপমৃত্যু মামলা করতে যান। পরে নেপথ্য ঘটনা জানতে পারেন। কিশোরীর ভাই শনিবার রাতে থানায় এসে মামলা দায়ের করে। রাত ১১টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ইসমাইল চৌকিদার ও জয়দেব দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক জানান, অনৈতিকতার অভিযোগে তরুণ-তরুণীকে পরিষদে এনে তাদেরকে বেঁধে বাজারে ঘুরিয়েছেন চেয়ারম্যান। কিশোরী নির্যাতনের ওই ঘটনাটি আসামি জয়দেব দাস মোবাইল ফোনে ধারণ করে তার ফেসবুক পেজে ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় তরুণীর ভাই বাদী হয়ে সাত জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *