ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি বিলুপ্তির পথে

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

img_20161206_165907

হাফিজুল ইসলাম লস্কর, সিলেট : প্রবাহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন বিলুপ্ত প্রায়। কালের বিবর্তণে ঢেঁকি এখন যেন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি। আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আগের মত আর চোঁখে পড়ে না। এক সময় ছিল ঢেঁকি গ্রাম জনপদে চাল ও চালের গুড়া-আটা তৈরীর একমাত্র মাধ্যম।

বধূঁরা ঢেঁকিতে চাল ভাঙ্গতো গভীর রাঁত থেকে ভোর সকাল পয়র্ন্ত। এখন ঢেঁকির সেই ধুপধাপ শব্দ আর শুনা যায় না। বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় আবহমান বাংলার ঢেঁকি হারিয়ে গেছে, শুনা যায়না ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ।

শুনা যায়না গ্রাম্য বউ, ঝি ও কৃষাণীদের কণ্ঠে ‘ও বউ চাল ভাঙ্গে রে, ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, নতুন চাল ভাঙ্গে হেলিয়া দুলিয়া, ও বউ চাল ভাঙ্গে রে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া’ এ রকম গান আর শোনা যায় না। আগে অগ্রহায়ন-পৌষ মাসে কৃষক ধান কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে গৃহস্থ ও কৃষাণীদের ঘরে ঘরে ধানের নতুন চাল ভাঙ্গা বা চাল গুড়া করা, আর সে চাল দিয়ে পিঠা, পুলি, ফিরনি, পায়েশ তৈরী করার ধুম পড়ে যেত।

এখন ঢেঁকির সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে নবান্নের উৎসবও। এছাড়াও নবান্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পূজা’য় ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গে আটা তৈরীর সময় গ্রাম্যবধুঁরা গান গাইতে থাকেন। চারদিকে পড়ে যায় হৈ-চৈ।

দ্বিতীয় লন্ডন খ্যাত সিলেট জেলার উপজেলাগুলোর একসময়ের জনপ্রিয় ঢেঁকির ব্যবহার এখন আর নেই। ফলে বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ জনপদের কাঁঠের তৈরী ঢেঁকি। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যেখানে পৌঁছেনি বিদ্যুৎ আলো সেখানেও নেই ঢেঁকির ব্যবহার। তবুও গ্রামীণ ঐতিহ্যেকে ধরে রাখতে কেউ কেউ বাড়ীতে ঢেঁকি রাখলেও তারা তা ব্যবহার করছে না।

তবুও প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলে কেউ কেউ দরিদ্র নারীদের দিন মজুরী দিয়ে ঢেঁকিতে ধান-চাল বা আটা তৈরী করতে দেখা গেছে। তাই সেখানে একটু হলেও ধুপধাপ শব্দ শুনাযায়। ঢেঁকি শিল্প হলেও এ শিল্পকে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই।

একসময় ঢেঁকি শিল্পের বেশ কদর ছিল। যখন মানুষ ঢেঁকিতে ধান ও চাল ভেঙ্গে চিড়া-আটা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে কৃষকের ঘরে এখন আর ঢেঁকি চোঁখে পড়ে না। তেল-বিদ্যুৎ চালিত মেশিন দিয়ে ধান ও চাল ভাঙ্গার ফলে ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে।

সে সময়ে কবি সাহিত্যিকগন ঢেঁকি কে নিয়ে অনেক কবিতা ও গান লেখেছেন। আর ঢেঁকি ছাটা আউশ চালের পান্তা ভাত পুষ্টিমান ও খেতে খুব স্বাদ লাগতো। বর্তমান প্রজন্ম সে স্বাদ থেকে বঞ্চিত।

প্রাচীনকালে ঢেঁকির ব্যবহার বেশী হলেও বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে গ্রাম বাংলার ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে। সিলেট মহানগর সেচ্ছা সেবক লীগ নেতা কামাল উদ্দীন বলেন, ঢেঁকি কে নিয়ে বহু গান আমাদের এলাকার প্রবীনদের মুখে শুনেছি। এবং আমাদের মা চাচীদের ঢেঁকিতে ধান ভাংতে দেখেছি।

এখন ঢেঁকি নেই বহু গ্রামীণ গান আর শুনা যায় না। গোবিন্দ্র শ্রীর এক বৃদ্ধা জানান, আগে ধান ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে সে আটা’য় পিটা-পুলি ও পায়েশ তৈরী করে স্বামী’কে খাওয়াতাম। কিন্তু আজ কোথাও ঢেঁকি পাওয়া যায়না।

সাংবাদিক বাশারুল ইসলাম জানান, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে গ্রাম বাংলায় ঢেঁকি’র ব্যবহার কমে গেছে। তবে ঢেঁকি আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য।

তাই আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ ঢেঁকি শিল্প রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য সকলের সহযোগিতা ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এবং ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্প রক্ষায় সকলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *