সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলাতে চলে আসছে জুয়ার মহোৎসব। দীর্ঘদিন ধরে এই খেলা চললেও এদের মূলহোতাদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছিল না।
ফলে সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গুলোর গন্ডি পেরিয়ে নগরীর পাড়া-মহল্লাতে ছড়িয়ে জুয়া ‘শিলংয়ের তীর’। আর এই জুয়ার আসরগুলো মূলত নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন বিভিন্ন পাড়ার প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও ছাত্রনেতারা।
শিলং তীর কি: ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে ‘তীর কাউন্টার’ নামক অনলাইন লটারিকে কেন্দ্র করে এটি স্থানীয়ভাবে ‘ভারতীয় তীর খেলা’ ও ‘ডিজিটাল লটারি’ হিসেবে পরিচিত।
‘শিলংয়ের তীর’ ঠেকাতে এবং এর মূলহোতাদের ধরতে এতোদিন ধরে মাঠে কাজ করছিল পুলিশ। পুলিশ সিলেট নগরী ছাড়াও জেলার সীমান্তবর্তী সবকটি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তীর খেলা বন্ধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে।
বিভিন্ন অভিযানে সফলতা দেখিয়েছেন মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা হয়েছেন। জুয়া খেলার সরঞ্জামাদী সহ আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।
আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে অনেক তথ্য। নাম প্রকাশও পেয়েছে সিন্ডিকেটের প্রধানসহ নগরীতে কারা এর নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করেন তাদের। সেসব তথ্য নিয়ে তীর সিন্ডিকেটের হোতাদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে সিলেটে ‘শিলংয়ের তীর’ ঠেকাতে এবার মাঠে নেমেছে র্যাব। সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) রাতে তীর খেলা তথা জুয়া খেলার দায়ে ১৬ যুবকের ছয় মাস করে কারাদন্ড দিয়েছে র্যাব-৯ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত।
র্যাব সূত্রে জানাগেছে- তীর খেলার খপ্পরে পড়ে অল্প দিনে লাখপতি হওয়ার আশায় শ্রমজীবি মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও যুব সমাজ এ খেলায় জড়িয়ে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে। এই ভারতীয় তীর (জুয়া) খেলা মহামারি আকার ধারন করেছে হাটবাজার থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
স্থানীয় কিছু এজেন্ট অনলাইনের মাধ্যমে এ খেলার সাথে সাধারণ জনগণকে যুক্ত করে। সাধারণ মানুষের নিকট থেকে টাকা নিয়ে প্রদত্ত টাকার চেয়ে অধিক হারে টাকা পাবে যদি এ খেলায় জিতে; এ ধরনের লোভ দেখায়।
মূলত এ খেলার আড়ালে হুন্ডির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে টাকা ভারতে স্থানান্তর করা হয় বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় এবং এর সাথে একটি বিশাল কুচক্রী মহল জড়িত। এই কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনের মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মূলত এ খেলা হয় বলে এ চক্রটি ধরা ছোঁয়ার বাহিরে ছিল। বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই তীর খেলার প্রতি বেশ কিছুদিন যাবৎ র্যাব-৯ এর গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় ০৫ ডিসেম্বর বিকাল ৪ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত র্যাব-৯, সিলেটের স্পেশাল কোম্পানীর একটি বিশেষ দল র্যাব সদর দপ্তরের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের সমন্বয়ে কাজিরবাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন।
অভিযানে পশ্চিম কাজিরবাজার এলাকা থেকে তীর খেলা চক্র থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা ও ভারতীয় তীর খেলার অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধারসহ ১৬ জনকে আটক করে।
আটককৃত ব্যক্তিদের নাম যথাক্রমে মো. মজনু মিয়া (৩৭), মো. শুভ (২০), শাহিন মিয়া (২২), রনি (১৯), জুয়েল রানা (১৯), হান্নান মিয়া (৪৫), মো. রকি (১৮), রিপন মিয়া (২৮), মো. সুমন (২৭), নুরুল মুন্না (২৪), মনসুর মিয়া (৩০), দুলাল মিয়া(৪০), মো. রুবেল (২৩), আতিকুর হুদা (২৮), মো. আলি মিয়া (৫০) সকলে সিলেট জেলার বাসিন্দা।
গ্রেফতারকৃতদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ ও উদ্ধারকৃত টাকা সরকারী কোষাগারে জমা প্রদান করা হয়েছে।
সূত্র অনুযায়ী, ২০ থেকে ২৫ বছর পূর্বে ভারতীয় ধনকুবেররা এ রকম খেলা আবিস্কার করে। এর নাম রাখে মেঘালয়ের আঞ্চলিক ভাষায় ‘তীর খেলা’।
ভারতের শিলং থেকে www.teercounter.com এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জুয়ার আসরটি (কথিত লটারি) পরিচালনা করা হয়।
প্রতিদিন বিকাল সোয়া ৪টায় ও সাড়ে ৫টায় দুবার ড্র হয়। ড্রর ফলাফল দেওয়া হয় অনলাইনে। লটারি বিজয়ী তার বাজির টাকার ৭০ গুণ বেশি পেয়ে থাকেন।
জানা যায়, লটারিতে ০ থেকে ৯৯ পর্যন্ত যে কোনো সংখ্যা কিনে নেওয়া যায়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা যায়। লটারিতে একটি নম্বরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
যারা লটারিতে অংশ নেন তাদের পছন্দের নম্বরটি অনলাইনে বুকিং দেওয়া হয়। বিজয়ীদের টাকার পরিমাণ কম হলে তা তত্ক্ষণাৎ পরিশোধ করা হয়, আর বেশি হলে ভারত থেকে এনে দেওয়া হয়।
এ ক্ষেত্রে সময় নেওয়া হয় তিন থেকে সাত দিন। জুয়ার টাকা ভারত ও বাংলাদেশে হুন্ডি ও সীমান্তের চোরাপথে লেনদেন হয়। তাই যুবসমাজকে রক্ষা ও হুন্ডির মাধ্যমে মানি লন্ডারিং বন্ধে কঠোর হচ্ছে যার্ব।
.