মিয়ানমারের গণহত্যা বিশ্ব বসে বসে দেখতে পারে না–মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

Slider নারী ও শিশু সারাবিশ্ব

43335_f5

 

ঢাকা;  ‘যথেষ্ট হয়েছে। বিশ্ব বসে বসে এই গণহত্যা দেখতে পারে না।’ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন নিয়ে এভাবেই সোচ্চার হয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। রোববার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। বক্তব্যে তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যা দেন। শান্তিতে নোবেল জয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সূচির নিষ্ক্রিয়তার তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারকে এই রক্তাক্ত অভিযান বন্ধ করতে হবে। ধর্ষণ, নির্যাতন আর হত্যার বিভীষিকা নিয়ে হাজারো রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘অং সান সূচির এই নোবেল দিয়ে কি হবে? আবেগতাড়িত জনতার উদ্দেশ্যে নাজিব বলেন, ‘আমরা সূচিকে বলতে চাই, যথেষ্ট হয়েছে। আমাদের অবশ্যই মুসলিম ও ইসলামকে সুরক্ষা করতে হবে। আর আমরা তা করবো।’ এ সময় উপস্থিত হাজার হাজার জনতা সমস্বরে আল্লাহু আকবার বলে ওঠেন। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা চাই ওআইসি (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) পদক্ষেপ নিক। দয়া করে কিছু করুন। জাতিসংঘ- আপনারা কিছু করুন। বিশ্ব বসে বসে এই গণহত্যা দেখতে পারে না। এটা আমাদের সমস্যা নয়- একথা বললে চলবে না। এটা আমাদেরও সমস্যা।’
বুধবার জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বার্তা সংস্থা এএফপিকে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গণধর্ষণ, নির্যাতন আর হত্যাযজ্ঞের বিভীষিকাময় ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে। নির্যাতনের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার। আবার আক্রান্ত এলাকায় বিদেশি সংবাদকর্মী ও স্বতন্ত্র তদন্তকারীদেরও তারা ঢুকতে দিচ্ছে না।
রাখাইনে উদ্ভূত সংকট মিয়ানমার যেভাবে মোকাবিলা করছে তা নিয়ে সোচ্চার হয়েছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ মালয়েশিয়া। দেশটি মিয়ানমারের কঠোর সমালোচনা করে যাচ্ছে। গত মাসে তারা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। ‘গণহত্যা’র নিন্দা জানিয়ে লেখা বিভিন্ন বার্তার ব্যানার হাতে ৫০০ মালয়েশিয়ান ও রোহিঙ্গা কুয়ালালামপুরস্থ মিয়ানমার দূতাবাস অভিমুখে মিছিল করে।
দেশটির জ্যেষ্ঠ এক মন্ত্রী আসিয়ানে মিয়ানমারের সদস্যপদ পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান। গেল শনিবার কঠোর ভাষায় বিবৃতি দেয় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ‘জাতিগতভাবে নিধন’ করছে বলে অভিযোগ করা হয় ওই বিবৃতিতে।
উল্লেখ্য, আসিয়ানভুক্ত কোনো দেশ অন্য সদস্য দেশের বিষয়ে নাক গলাতে পারে না- একথা বলে মালয়েশিয়াকে সতর্ক করেছিল মিয়ানমার। কিন্তু এই সমালোচনা গায়ে মাখছেন না মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। বরং রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে কড়া বার্তা দিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করে সমাবেশ করলেন। তিনিই উল্টো মিয়ানমারকে সতর্ক করে দিলেন। বললেন, গত বছর আসিয়ান নিজেকে একটি একক সম্প্রদায় হিসেবে ঘোষণা করেছে। এর সনদে বলা হয়েছে মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করতে। কিন্তু মিয়ানমারে কি তা হচ্ছে! অং সান সূচির নিষ্ক্রিয়তারও সমালোচনা করে নাজিব রাজাক বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি সরিয়ে রেখেছেন সূচি। তিনি সূচিকে প্রশ্ন রাখেন- কিভাবে এটি হতে পারে? আমাদের মধ্যে তো সব ইস্যুতে আলোচনা হওয়া উচিত। রোববারের সমাবেশটি আয়োজন করে নাজিব রাজাকের ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ও প্যান-মালয়েশিয়ান ইসলামিক পার্টি।
মালয়েশিয়ায় রোহিঙ্গা সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ফয়সাল ইসলাম মুহাম্মদ কাসিম সংকট সমাধানে মালয়েশিয়া যে ভূমিকা নিয়েছে তিনি তার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমরা চাই মালয়েশিয়া মুসলিম বিশ্ব ও পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে একটি বার্তা পাঠিয়ে দিক। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে হবে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় কয়েকশ’ মানুষকে হত্যা করা হয় রাখাইনে। তারপর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ রক্তপাত চলছে সেখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *