গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশের পুলিশের ব্যবহারে অস্ত্র বিক্রি করতে রাজি নয় যুক্তরাজ্য। সম্প্রতি মানবাধিকার প্রশ্নে এ দেশের পুলিশের জন্য গোলাবারুদ রপ্তানিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তারা। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-ভুক্ত কয়েকটি দেশও জারি করেছে একই ধরনের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তর। বাধ্য হয়ে গোলাবারুদ কেনার বিকল্প বাজারের সন্ধানে নেমেছে সরকার। তবে ওই সব দেশের মতো মানসম্মত গোলাবারুদ সরবরাহকারী দেশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে বিষয়গুলো সুরাহার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ জন্য গত মাসের শেষদিকে পররাষ্ট্র সচিবের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই চিঠিতে পুলিশ অধিদপ্তরের গত ৪ঠা আগস্টের ইকুইপমেন্ট/৪৪.০১.০০০০.২২.০২.০১১.১৩ (অংশ-১)/১২০২৮ নং পত্রের মর্মানুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই কমিশনের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। এখনও চিঠি’র কোন জবাব পায়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান মানবজমিনকে বলেন, আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না। জেনে তারপর বলতে পারবো। পুলিশের আইজি হাছান মাহমুদ খন্দকার বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ)-র সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ফাইল না দেখে কিছু বলা যাবে না। আপনি অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ)-র সঙ্গে কথা বলেন। তিনি আপনাকে এ বিষয়ে তথ্য দিতে পারবেন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০০টি বুলেটপ্রুফ হেলমেটের সঙ্গে বুলেটপ্রুফ ভিসর এবং ১০০০টি বুলেট প্রুফ হেলমেটের সঙ্গে রায়ট ভিসর কেনার জন্য ‘ইউনাইটেড শিল্ড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে গত অর্থবছরের শেষদিকে চুক্তি করে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে এ সব জিনিস বাংলাদেশে রপ্তানি করতে ‘রপ্তানি লাইসেন্স’-এর জন্য আবেদন করে। যুক্তরাজ্য সরকারের ‘এক্সপোর্ট কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন, ডিপার্টমেন্ট ফর বিজনেস ইনোভেশন অ্যান্ড স্কিলস গভর্নড বাই দ্য বৃটিশ গভর্নমেন্ট’ রপ্তানি লাইসেন্স ইস্যুর বিষয়ে অসম্মতি জানিয়ে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে তারা বলেছে, ‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মৌলিক স্বাধীনতা একটি দেশের চূড়ান্ত গন্তব্য হওয়া উচিত।’ যুক্তরাজ্য সরকারের এমন বক্তব্য সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপটেনস টেস্ট (ফ্যাট) কার্যক্রমে অংশ নিতে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য সরকারি আদেশ (জিও) জারি করে। কিন্তু সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইউনাইটেড শিল্ড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’-এর কাছ থেকে রপ্তানি আদেশ ইস্যু না করার খবরটি জানার পর চুপসে যায় পুলিশ সদর দপ্তর। তারা নানা মাধ্যমে চেষ্টা করে। কিন্তু সব কিছুই ভেস্তে যায়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে গত জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাঁচটি চিঠি দেয় পুলিশ সদর দপ্তর। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মূল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পুলিশের দু’টি আইটেম সরবরাহে পুনরায় এক্সপোর্ট লাইসেন্স চেয়েছে। এর আগেই লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশন এবং ঢাকাস্থ বৃটিশ হাই কমিশনকে অবহিত করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওদিকে মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসার পর পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, বুলেটপ্রুফ হেলমেটের সঙ্গে বুলেটপ্রুফ ভিসর এবং বুলেটপ্রুফ হেলমেটের সঙ্গে রায়ট ভিসর পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার যন্ত্রপাতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের জন্য জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশনস-এর ফর্মড পুলিশ ইউনিট’স স্ট্যান্ডার্ড ফোর্স রিকোয়ারমেন্ট অনুসারে আইটেম দু’টির প্রাধিকার ও চাহিদা রয়েছে। এসব আইটেম দেশের অভ্যন্তরে জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাসহ অন্যান্য অপারেশনাল কাজে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তি নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হবে। এ কারণে এক্সপোর্ট লাইসেন্স পাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। ওদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ পুলিশে গোলাবারুদ রপ্তানির জন্য এক্সপোর্ট লাইসেন্স দিচ্ছে না। ইইউভুক্ত দেশগুলো তাদের আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলছে, বাংলাদেশে রপ্তানিকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ মানবতাবিরোধী কাজে ব্যবহার করা হবে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুলিশ সদর দপ্তরকে বিষয়গুলো জানানোর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়গুলো জানাচ্ছেন তারা। ওদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)কে দায়মুক্তি না দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এবিষয়ে গত মাসের শেষে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।