ঢাকা; হলফ করে বলা কঠিন। তবে আবহাওয়া বার্তা স্পষ্ট। ভোট এখনো বহুদূরে। পাক্কা দুই বছর। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবারও বলেছেন, দুই বছর বেশি সময় নয়। নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা বলেছেন তিনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও একাধিকবার দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেমন হবে আগামী নির্বাচন। নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখাইবা কি হবে? ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন। নির্বাচনকালীন সরকারে যোগদানের আমন্ত্রণও সেসময় ছিল বিএনপির সামনে। প্রধানমন্ত্রীর ফোনে সাড়া না দেয়া খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভুল ছিল বলে অনেক পর্যবেক্ষকই এখন মনে করেন। অবশ্য এ ব্যাপারে খালেদা জিয়ার কাছে ভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ শীতকাল চলছে। যদিও নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়ে বিএনপি নেত্রীর প্রস্তাব শীতের রাজনীতিতে খানিকটা উত্তাপ তৈরি করেছে। ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া টকশোগুলোও আলোচনার খোরাক পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবেই খালেদা জিয়ার প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে। এ নিয়ে চলছে বাত কি বাত। নির্বাচন কমিশন নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাটও। দলনিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চাওয়ার কথা স্পষ্ট করেছেন তিনি। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়। তবে অনেক পর্যবেক্ষকই বলছেন, ব্রেক্সিট এবং ট্রাম্প দুনিয়ায় আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো ক্রমশই নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এসব বক্তব্য কতটা গুরুত্ব বহন করে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সামনের বছরের শুরুর দিকেই নতুন নির্বাচন কমিশন দেখতে পাওয়া যাবে। নবগঠিত কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। মিরাকল কিছু হলে সে কথা আলাদা। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নির্বাচন কমিশন কাদের নিয়ে গঠিত হয়, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায় কি-না। এমনকি কখনও কখনও নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগের স্বাধীনতা পান না- এমন কথাও শোনা যায়। বর্তমানে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একমাত্র ফেভারিট। বিরোধী দলের একমাত্র কার্যক্রম, নয়া পল্টন কার্যালয়ে এসে চোতা পাঠ করা। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী নির্বাচনের সময়, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সেটা প্রায় পুরোটাই সরকারি দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন মৃত। সে সরকার ফেরার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনকি বিএনপিও দৃশ্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পরিত্যাগ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে এখন তারা চাইছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। এ সরকারের রূপরেখা সামনের দিনগুলোতে হাজির করার কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। একটি বিষয় নিশ্চিত আগামী নির্বাচনকালীন সরকারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই গঠিত হবে। এখন সে সরকার শুধু, মহাজোটের আদলে বর্তমান সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো নিয়ে হবে, না বিএনপিরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে তা হয়তো সময়ই বলতে পারবে। তবে যেকোনো পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৬
পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি নেতৃত্ব এখন দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। এর অবশ্য বিকল্পও খোলা নেই দলটির সামনে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, আগামী নির্বাচনও ৫ই জানুয়ারির আদলেই হবে। সোমবার রাতে এক টিভি আলোচনায় তিনি আলোকপাত করেন, বর্তমান পরিস্থিতি বহাল থাকলে ৫ই জানুয়ারির মতোই, হয়তোবা একটু এদিক-সেদিক করে আরেকটি নির্বাচন হবে।
এদিকে, আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার তা জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি ‘সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’ বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃক জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে দাখিলকৃত ইউনিভার্সাল প্রিভিউ রিপোর্টের পর্যালোচনায় বাংলাদেশের সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আরো ২৫টি বিষয়ের ব্যাখ্যা দাবিসহ বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত জানতে চেয়েছে জাতিসংঘের থার্ড কমিটি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬টি মূল কমিটির মধ্যে থার্ড কমিটি ‘ইন্টারন্যাশনাল কভিনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’-এর আওতায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জনগণের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার দেখভালের দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশের দাখিলকৃত ইউনিভার্সাল প্রিভিউ রিপোর্ট পর্যালোচনা করে এ বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত থার্ড কমিটির ১১৬তম অধিবেশনে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের থার্ড কমিটি। এর আগে ১৯৬৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইন্টারন্যাশনাল কভিনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস গৃহীত হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২৩শে মার্চ থেকে এটি বলবৎ হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৬৮টি সদস্য রাষ্ট্রে এই কভিনেন্ট বলবৎ রয়েছে। বাংলাদেশ ২০০০ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর এই কভিনেন্ট রেটিফাই করে এবং একই দিন থেকে এটি বাংলাদেশের বেলায় বলবৎ হয়। এই কভিনেন্টের অনুচ্ছেদ ৪০-এর আওতায় থার্ড কমিটির কাছে বাংলাদেশের সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসবিষয়ক প্রথম রিপোর্ট দাখিল করার নির্ধারিত সময় ছিল ৬ই ডিসেম্বর ২০০১ সালে। অবশেষে ২০১৫ সালের ১৯শে জুন বাংলাদেশ ৫২ পৃষ্ঠার এক প্রাথমিক প্রতিবেদন থার্ড কমিটির কাছে জমা দেয়। বিগত ৩রা মে ২০১৬ বাংলাদেশের দাখিলকৃত রিপোর্টের মূল্যায়ন করে সিভিল ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক কমিটি বাংলাদেশ সরকারের দাখিলকৃত প্রতিবেদনের ২৫টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ৫ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থার্ড কমিটি এবং আপত্তিজনক ইস্যুগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আরো বিস্তারিত তথ্য প্রদানের আহ্বান জানায়।
থার্ড কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ২২ নম্বর আপত্তির বিষয়টি হলো ্তুজরমযঃ ড়ভ পরঃরুবহং ঃড় ঢ়ধৎঃরপরঢ়ধঃব রহ ঢ়ঁনষরপ ষরভব্থ- আর এ বিষয়ে কভিনেন্টের ২৫ অনুচ্ছেদের কথা বাংলাদেশকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে থার্ড কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়: ্তুচষবধংব ঢ়ৎড়ারফব রহভড়ৎসধঃরড়হ ড়হ সবধংঁৎবং ঃধশবহ ঃড় বহংঁৎব ঃযধঃ পরঃরুবহং সধু ভঁষষু বীবৎপরংব ঃযবরৎ ৎরমযঃ ঃড় ঢ়ধৎঃরপরঢ়ধঃব রহ ঢ়ঁনষরপ ষরভব ধহফ াড়ঃব রহ ভৎবব ধহফ ভধরৎ বষবপঃরড়হং নু ঢ়ৎবাবহঃরহম ঃযব ৎবড়পপঁৎৎবহপব ড়ভ ঃযব ারড়ষবহপব ঃযধঃ ঢ়ৎবাধরষবফ ফঁৎরহম ঃযব ঔধহঁধৎু ২০১৪ বষবপঃরড়হং. চষবধংব ঢ়ৎড়ারফব ভঁৎঃযবৎ রহভড়ৎসধঃরড়হ ড়হ ঃযব ৎবমঁষধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ৎবমরংঃৎধঃরড়হ ড়ভ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ঢ়ধৎঃরবং ধহফ রঃং পড়সঢ়ধঃরনরষরঃু রিঃয ঃযব ঈড়াবহধহঃ, ধহফ রহ ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ ঃযব পধহপবষষধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ৎবমরংঃৎধঃরড়হ ড়ভ ঔধসধধঃ-ব-ওংষধসর ধযবধফ ড়ভ ঃযব ২০১৪ ঔধহঁধৎু বষবপঃরড়হং.্থ
ইন্টারন্যাশনাল কভিনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘১) প্রত্যেক নাগরিকের এই অধিকার ও সুযোগের নিশ্চয়তা থাকতে হবে যাতে করে সে সব ধরনের ভয়, ভীতি ও বৈষম্যমুক্ত পরিবেশে নিজে সরাসরি সরকারি কার্যাবলীতে অংশ নিতে পারে কিংবা এই উদ্দেশ্যে সে নিজের স্বাধীনতা মোতাবেক তার পছন্দের প্রার্থী বাছাই করতে পারে। ২) প্রত্যেক নাগরিকের এই অধিকার ও সুযোগের নিশ্চয়তা থাকতে হবে যেন সে যেকোনো ধরনের ভয়-ভীতি ও বৈষম্যমুক্ত পরিবেশে অবাধে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এমন একটি নির্বাচনে যা প্রকৃত অর্থেই বস্তুনিষ্ঠ এবং আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে সার্বজনীন এবং সমান ভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে; যে পরিবেশে ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর নিশ্চিত নিরাপত্তা বিদ্যমান থাকে। ‘৩) যেন একজন নাগরিকের সাধারণ অর্থেই ‘সমান অধিকার’ বলতে যা বুঝায় ন্যূনতম সে সুযোগ বজায় থাকে এবং সরকারি কর্মকাণ্ডে ওই নাগরিকের সমান প্রবেশাধিকারের নিশ্চিত সুযোগ থাকে।’
এদিকে, বাংলাদেশের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে ‘জরমযঃ ড়ভ পরঃরুবহং ঃড় ঢ়ধৎঃরপরঢ়ধঃব রহ ঢ়ঁনষরপ ষরভব’ অংশের বর্ণনায় শুধু বলা আছে যে, সংবিধানে সকল ক্ষমতা বাংলাদেশের জনগণকে দেয়া আছে। সংবিধান বলছে, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রের জনগণ কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি সংসদে পাঠিয়েছেন এবং জনগণের নির্বাচিত সংসদ মানবাধিকার সুরক্ষায় ও বিস্তারে কাজ করছে।
আর নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের জবাবে যা বলা হয়েছে তার সারমর্ম হলো, নির্বাচনে স্বাধীন জনমতের প্রতিফলনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে। সংবিধানের লিখিত ধারা মোতাবেক প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জন নির্বাচন কমিশনার স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন। নির্বাচন কমিশনের কাজে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সাংবিধানিক সুযোগ নেই এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার জন্য বেশকিছু আইন পাস করে কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতাও দেয়া হয়েছে।
সামনের বছরের শুরুর দিকেই নতুন নির্বাচন কমিশন দেখতে পাওয়া যাবে। নবগঠিত কমিশনের অধীনেই ২০১৯ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। মিরাকল কিছু হলে সে কথা আলাদা। তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নির্বাচন কমিশন কাদের নিয়ে গঠিত হয়, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায় কি-না। এমনকি কখনও কখনও নির্বাচন কমিশনাররা পদত্যাগের স্বাধীনতা পান না- এমন কথাও শোনা যায়। বর্তমানে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একমাত্র ফেভারিট। বিরোধী দলের একমাত্র কার্যক্রম, নয়া পল্টন কার্যালয়ে এসে চোতা পাঠ করা। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী নির্বাচনের সময়, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সেটা প্রায় পুরোটাই সরকারি দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন মৃত। সে সরকার ফেরার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনকি বিএনপিও দৃশ্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পরিত্যাগ করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে এখন তারা চাইছে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার। এ সরকারের রূপরেখা সামনের দিনগুলোতে হাজির করার কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। একটি বিষয় নিশ্চিত আগামী নির্বাচনকালীন সরকারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই গঠিত হবে। এখন সে সরকার শুধু, মহাজোটের আদলে বর্তমান সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো নিয়ে হবে, না বিএনপিরও প্রতিনিধিত্ব থাকবে তা হয়তো সময়ই বলতে পারবে। তবে যেকোনো পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৬
পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি নেতৃত্ব এখন দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। এর অবশ্য বিকল্পও খোলা নেই দলটির সামনে। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, আগামী নির্বাচনও ৫ই জানুয়ারির আদলেই হবে। সোমবার রাতে এক টিভি আলোচনায় তিনি আলোকপাত করেন, বর্তমান পরিস্থিতি বহাল থাকলে ৫ই জানুয়ারির মতোই, হয়তোবা একটু এদিক-সেদিক করে আরেকটি নির্বাচন হবে।
এদিকে, আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার তা জানতে চেয়েছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি ‘সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’ বিষয়ে বাংলাদেশ কর্তৃক জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে দাখিলকৃত ইউনিভার্সাল প্রিভিউ রিপোর্টের পর্যালোচনায় বাংলাদেশের সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আরো ২৫টি বিষয়ের ব্যাখ্যা দাবিসহ বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত জানতে চেয়েছে জাতিসংঘের থার্ড কমিটি।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬টি মূল কমিটির মধ্যে থার্ড কমিটি ‘ইন্টারন্যাশনাল কভিনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস’-এর আওতায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জনগণের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার দেখভালের দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশের দাখিলকৃত ইউনিভার্সাল প্রিভিউ রিপোর্ট পর্যালোচনা করে এ বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত থার্ড কমিটির ১১৬তম অধিবেশনে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের থার্ড কমিটি। এর আগে ১৯৬৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইন্টারন্যাশনাল কভিনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস গৃহীত হয় এবং ১৯৭৬ সালের ২৩শে মার্চ থেকে এটি বলবৎ হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৬৮টি সদস্য রাষ্ট্রে এই কভিনেন্ট বলবৎ রয়েছে। বাংলাদেশ ২০০০ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর এই কভিনেন্ট রেটিফাই করে এবং একই দিন থেকে এটি বাংলাদেশের বেলায় বলবৎ হয়। এই কভিনেন্টের অনুচ্ছেদ ৪০-এর আওতায় থার্ড কমিটির কাছে বাংলাদেশের সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসবিষয়ক প্রথম রিপোর্ট দাখিল করার নির্ধারিত সময় ছিল ৬ই ডিসেম্বর ২০০১ সালে। অবশেষে ২০১৫ সালের ১৯শে জুন বাংলাদেশ ৫২ পৃষ্ঠার এক প্রাথমিক প্রতিবেদন থার্ড কমিটির কাছে জমা দেয়। বিগত ৩রা মে ২০১৬ বাংলাদেশের দাখিলকৃত রিপোর্টের মূল্যায়ন করে সিভিল ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক কমিটি বাংলাদেশ সরকারের দাখিলকৃত প্রতিবেদনের ২৫টি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ৫ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থার্ড কমিটি এবং আপত্তিজনক ইস্যুগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে আরো বিস্তারিত তথ্য প্রদানের আহ্বান জানায়।
থার্ড কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ২২ নম্বর আপত্তির বিষয়টি হলো ্তুজরমযঃ ড়ভ পরঃরুবহং ঃড় ঢ়ধৎঃরপরঢ়ধঃব রহ ঢ়ঁনষরপ ষরভব্থ- আর এ বিষয়ে কভিনেন্টের ২৫ অনুচ্ছেদের কথা বাংলাদেশকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে থার্ড কমিটির মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়: ্তুচষবধংব ঢ়ৎড়ারফব রহভড়ৎসধঃরড়হ ড়হ সবধংঁৎবং ঃধশবহ ঃড় বহংঁৎব ঃযধঃ পরঃরুবহং সধু ভঁষষু বীবৎপরংব ঃযবরৎ ৎরমযঃ ঃড় ঢ়ধৎঃরপরঢ়ধঃব রহ ঢ়ঁনষরপ ষরভব ধহফ াড়ঃব রহ ভৎবব ধহফ ভধরৎ বষবপঃরড়হং নু ঢ়ৎবাবহঃরহম ঃযব ৎবড়পপঁৎৎবহপব ড়ভ ঃযব ারড়ষবহপব ঃযধঃ ঢ়ৎবাধরষবফ ফঁৎরহম ঃযব ঔধহঁধৎু ২০১৪ বষবপঃরড়হং. চষবধংব ঢ়ৎড়ারফব ভঁৎঃযবৎ রহভড়ৎসধঃরড়হ ড়হ ঃযব ৎবমঁষধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ৎবমরংঃৎধঃরড়হ ড়ভ ঢ়ড়ষরঃরপধষ ঢ়ধৎঃরবং ধহফ রঃং পড়সঢ়ধঃরনরষরঃু রিঃয ঃযব ঈড়াবহধহঃ, ধহফ রহ ঢ়ধৎঃরপঁষধৎ ঃযব পধহপবষষধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ৎবমরংঃৎধঃরড়হ ড়ভ ঔধসধধঃ-ব-ওংষধসর ধযবধফ ড়ভ ঃযব ২০১৪ ঔধহঁধৎু বষবপঃরড়হং.্থ
ইন্টারন্যাশনাল কভিনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘১) প্রত্যেক নাগরিকের এই অধিকার ও সুযোগের নিশ্চয়তা থাকতে হবে যাতে করে সে সব ধরনের ভয়, ভীতি ও বৈষম্যমুক্ত পরিবেশে নিজে সরাসরি সরকারি কার্যাবলীতে অংশ নিতে পারে কিংবা এই উদ্দেশ্যে সে নিজের স্বাধীনতা মোতাবেক তার পছন্দের প্রার্থী বাছাই করতে পারে। ২) প্রত্যেক নাগরিকের এই অধিকার ও সুযোগের নিশ্চয়তা থাকতে হবে যেন সে যেকোনো ধরনের ভয়-ভীতি ও বৈষম্যমুক্ত পরিবেশে অবাধে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এমন একটি নির্বাচনে যা প্রকৃত অর্থেই বস্তুনিষ্ঠ এবং আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে সার্বজনীন এবং সমান ভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় গোপন ব্যালটের মাধ্যমে; যে পরিবেশে ভোটারদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর নিশ্চিত নিরাপত্তা বিদ্যমান থাকে। ‘৩) যেন একজন নাগরিকের সাধারণ অর্থেই ‘সমান অধিকার’ বলতে যা বুঝায় ন্যূনতম সে সুযোগ বজায় থাকে এবং সরকারি কর্মকাণ্ডে ওই নাগরিকের সমান প্রবেশাধিকারের নিশ্চিত সুযোগ থাকে।’
এদিকে, বাংলাদেশের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে ‘জরমযঃ ড়ভ পরঃরুবহং ঃড় ঢ়ধৎঃরপরঢ়ধঃব রহ ঢ়ঁনষরপ ষরভব’ অংশের বর্ণনায় শুধু বলা আছে যে, সংবিধানে সকল ক্ষমতা বাংলাদেশের জনগণকে দেয়া আছে। সংবিধান বলছে, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রের জনগণ কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি সংসদে পাঠিয়েছেন এবং জনগণের নির্বাচিত সংসদ মানবাধিকার সুরক্ষায় ও বিস্তারে কাজ করছে।
আর নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের জবাবে যা বলা হয়েছে তার সারমর্ম হলো, নির্বাচনে স্বাধীন জনমতের প্রতিফলনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন করে দিয়েছে। সংবিধানের লিখিত ধারা মোতাবেক প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ৪ জন নির্বাচন কমিশনার স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন। নির্বাচন কমিশনের কাজে সরকারের হস্তক্ষেপের কোনো সাংবিধানিক সুযোগ নেই এবং নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতার জন্য বেশকিছু আইন পাস করে কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতাও দেয়া হয়েছে।