সুচির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন, কূটনৈতিক তৎপরতা

Slider সারাবিশ্ব

 41672_sue-kie

 

   ডেস্ক রিপোর্ট;  মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম সঙ্কট যেভাবে মোকাবিলা করছে অং সান সুচির সরকার তাতে পশ্চিমা দেশগুলোতে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে উদ্বেগ। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অং সান সুচি সরকারের সক্ষমতা নিয়ে। এ জন্য জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার গোপনে অন্যান্য কূটনীতিকদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাতে তিনি সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, মিয়ানমার নিজে এ সমস্যা মোকাবিলা করতে পারবে না। পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, মালয়েশিয়া, মিশর সহ বিভিন্ন দেশ। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতার প্রতিবাদে আঞ্চলিক ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের কথা বিবেচনা করতে মালয়েশিয়া। এ টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজক মিয়ানমার। এর জবাবে সুচিও কূটনীতিকদের সঙ্গে গত শুক্রবার বৈঠক করেছেন তার রাজধানী ন্যাপিডতে। তাতে তিনি অভিযোগ করেছেন, তার দেশের সঙ্গে অন্য দেশগুলো ‘আনফেয়ার’ আচরণ করছে। এ বিষয়গুলো গত কয়েকদিনে প্রকাশ পায় নি। কিন্তু কয়েকজন কূটনীতিক ও সহায়তা কর্মী তা ফাঁস করে দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ওদিকে এ সপ্তাহে  মিয়ানমারে নির্যাতিত আরও রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। সমুদ্রপথে যাত্রায় একটি বোট ডুবে অনেকে মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সহিংসতা থেকে জীবন বাঁচাতে এসব মানুষ মিয়ানমার থেকে পালাচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছে কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ। অভিযোগ আছে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে এসব মানুষ পালাচ্ছে। এতে অং সান সুচির আট মাসের সরকার সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখোমুখি। এ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার। জাতিসংঘের অনুরোধে নিউ ইয়র্কে এর সদর দপ্তরে গত বৃহস্পতিবার এ বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন দু’জন কূটনীতিক বলেছেন, বৈঠকে মিয়ানমারে অব্যাহত সংস্কার প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থাকে ভয়াবহ বলে আখ্যায়িত করেন সামান্থা পাওয়ার। এর পরের দিনই অং সান সুচি মিয়ানমারের রাজধানী ন্যাপিডতে কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠক করে এর জবাব দেন। তিনি সেখানে অভিযোগ তুলে বলেন, তার দেশের সঙ্গে ‘আনফেয়ার’ আচরণ করা হচ্ছে। এ সময় সুচিকে বেশ হতাশ দেখা গেছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ডেনমার্কের কূটনীতিকরা। তাদের কাছে সুটি অভিযোগ করেন, বাস্তব তথ্য বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একপেশে সংঘাতের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। নিউ ইয়র্কের বৈঠকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল যে, নির্যাতনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেখানে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার সুবিধার প্রতি ও অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে মিয়ানমার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়েই কূটনীতিকরা মিয়ানমারের ওপর এখন চাপ বাড়াচ্ছেন। উল্লেখ্য, সামরিক শাসনের অধীনে সুচি যখন কারা অন্তরীণ ছিলেন, তাকে বিভিন্নভাবে নিষ্পেষণে ভুগতে হয়েছে তখন পশ্চিমারা তার পাশে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন। এরপর মিয়ানমারে ব্যাপক সংস্কার হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। গত বছর জাতীয় নির্বাচনে অং সান সুচি ভূমিধস বিজয় অর্জন করেন। ২০১২ সালে রাখাইন রাজ্যে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল। তাতে নিহত হয়েছিলেন কয়েক শত মানুষ। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তার চেয়েও ভয়াবহ। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার রক্ষায় তিনি আসলে কিছুই করেন নি। তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হয় নি। রোহিঙ্গারা পান না মৌলিক কোনো সেবা। এসব ইস্যুতে প্রায় এক ডজন কূটনীতিক ও সহায়তা কর্মীর সঙ্গে কথা বলেছেন রয়টার্সের সাংবাদিকরা। তারাই মিয়ানমার ও নিউ ইয়র্কের আলোচনা সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।
নির্যাতনের যেসব অভিযোগ
বাংলাদেশের বিপরীতে মিয়ানমার অংশে সেনা সদস্য দিয়ে ভরে ফেলা হয়েছে। গত ৯ই নভেম্বর তিনটি বর্ডার পোস্টে সমন্বিত হামলার জবাবে এমনটি করা হয়েছে। ওই হামলায় কমপক্ষে ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হন। রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালানোর সময় রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া ও বেসামরিক মানুষকে হত্যার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় মানুষ ও অধিকার বিষয়ক কর্মীরা। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার। এ নিয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জাউ হতাই। তিনি বলেছেন, এমন মিথ্য তথ্য ছড়িয়ে দেয়া প্রতিরোধে মিয়ানমার অবিলম্বে সঠিক খবর প্রচার করবে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের লবিস্টরা বানোয়াট খবর ছড়িয়ে দিচ্ছে। তা নিয়েই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদেরকে ভুল বুঝছে। নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা, তাদেরকে হত্যা করা ও অস্ত্র লুটের বিষয়টি বিশ্বে কেউই মেনে নিতে পারবে না।
তবে গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে গোপন বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সামান্থা পাওয়ার নতুন করে ওয়াশিংটনের আহ্বান তুলে ধরেছেন। তিনি আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ওএইচসিএইটআরের একটি অফিস খুলতে দিতে হবে। তিনি আরও সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেছেন, দীর্ঘ সময় মিয়ানমারে জনগণের প্রতিনিধি ছিল না। এ জন্য রাখাইন সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ কট্টরপন্থি হয়ে থাকতে পারেন। ১৭ই নভেম্বর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছিল সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হন নি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিকোলে থম্পসন। তিনি বলেছেন, উত্তর রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা ও মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ায় আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সরকারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ তদন্ত আহ্বান করছি আমরা। সেখানে সাংবাদিকদের অবাধ সুবিধাও দাবি করছি আমরা। কূটনীতিকরা বলেছেন, ওই বৈঠকে বৃটেনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া। এসব দেশ মনে করছে নতুন করে শুরু হওয়া এই সঙ্কট আঞ্চলিক অভিবাসী সঙ্কট হিসেবে আবির্ভূত হবে। কূটনৈতিক এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ও সঙ্কট সমাধানে সরকারের অবস্থানের প্রতিবাদে মিয়ানমার আয়োজিত আঞ্চলিক ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বিবেচনা করছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়া। রোহিঙ্গাদের মধ্যে কট্টরপন্থি গড়ে ওঠার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিশর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *