বৈঠকের একপর্যায়ে আইভীকে মনোনয়ন দেওয়ার বিরোধিতা করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আইভী জয় বাংলা স্লোগানকে অপমান করেছেন। আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) গালিগালাজ করেছেন।’ এ বিষয়ে পত্রিকার কপি দেখানোরও চেষ্টা করেন তিনি। ঠিক এই সময়ে আইভী বলেন, তিনি বলেছেন যে জয় বাংলা আওয়ামী লীগের দলীয় স্লোগান না। এটা সর্বজনীন এবং সব মানুষের। তখন প্রধানমন্ত্রীও বলেন, তিনিও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন জয় বাংলা সর্বজনীন স্লোগান।
দলীয় প্রধানকে কখনো গালি দেননি উল্লেখ করে বৈঠকে আইভী বলেন, শেখ হাসিনার আশীর্বাদ নিয়ে তিনি রাজনীতিতে এসেছেন। দলীয় প্রধানকে গালি দেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলে তিনি নির্বাচন করবেন না। এই অপবাদ তিনি বহন করতে পারবেন না। এ সময় তাঁদের দুজনকে থামতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শামীম ওসমান আবার বলেন, আইভী নারায়ণগঞ্জের নিহত মেধাবী ছাত্র ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বীর সঙ্গে চলাফেরা করেন। যিনি সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। তখন আইভী বলেন, তিনি নারায়ণগঞ্জে ত্বকী হত্যার প্রতিবাদ করেছেন। শামীম ওসমানের পক্ষ নেননি—এটাই তাঁর অপরাধ। একপর্যায়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে আইভী বলেন, তিনি নেত্রীর বিরুদ্ধে কখনই কোনো কথা বলেননি। তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
প্রধানমন্ত্রীও তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, কে কী করেছে, সেটা তিনি জানেন। শুধু নেতাদের কথা নয়, তাঁর কাছে থাকা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই তিনি প্রার্থী নির্বাচন করেছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এ পর্যায়ে শামীম ওসমানকে তিরস্কার করেন এবং আইভীর পক্ষাবলম্বন করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে করছে। তাই নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে নিয়ে তিনি আর কোনো অভিযোগ শুনতে চান না। সবাইকে একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেন এবং আইভীর পক্ষে কেউ কাজ করছে না, এ ধরনের খবর তাঁর কানে এলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দ্বিমতের কোনো অবকাশ নেই। দল করলে দলের নিয়ম-শৃঙ্খলা সবাইকে মানতে হবে।
পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন আনোয়ার : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় ভীষণ মনঃক্ষুণ্ণ হন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করতে চান। তখন প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রতি কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, তাঁকে তিনি অনেক পছন্দ করেন। জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর বয়স কত হয়েছে। তখন তিনি বলেন, ৬২ বছর। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চুল দেখে তো মনে হয় না।’ তিনি বলেন, ‘কলপ দিয়ে থাকি তো।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত নির্বাচনে শামীমকে মনোনয়ন দিয়েছি, তুমি (আনোয়ার) আইভীর পক্ষে কাজ করেছ। এবার আইভীকে মনোনয়ন দিলাম। তুমি তাঁর পক্ষে না। যদি ইচ্ছা হয়, তাহলে পদত্যাগ করো। বিদায় দিয়ে দেব।’
বৈঠকে উপস্থিত দুজন নেতা বলেন, বৈঠকের শেষ পর্যায়ে সবাই মিলে যান এবং নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে এক হয়ে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অঙ্গীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী, আইভী, শামীম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জের নেতারা মিলে একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি তোলেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার সুযোগ কারও নেই। তাঁরা সবাই মিলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে সেলিনা হায়াৎ আইভী আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করার জন্য দলের সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গণভবনে আলোচনার বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাংসদ শামীম ওসমানকে পাওয়া যায়নি।