ঘটনাটি গত ১৬ অক্টোবরের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার নলভাঙ্গা গ্রামের। বখাটেরা শাহানূরকে পিটিয়েগুরুতর আহত করে। শাহানূরের আত্মীয় মো. ইয়াকুব আলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলায় অভিযোগ করেন, আসামিরা প্রথমে লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় শাহানূরকে। পরে হাতুড়ি ও ছেনি দিয়ে হাঁটুতে আঘাত করে। দলের অন্যরা লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পেটায়। এতে শাহানূরের মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। ইয়াকুব সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। ১৬ জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলাটি করেন ভাই মহিনূর। দুই আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও বাকিরা পলাতক।
শাহানূর এখন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন। পেশায় বর্গাচাষি শাহানূরের দুটি পা হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। তাঁর পায়ে এ পর্যন্ত মোট চারবার অস্ত্রোপচার হয়েছে, ২০ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। গতকাল দুপুরে শাহানূরকে ধরে বসিয়ে রেখেছিলেন তাঁর স্ত্রী আর্জিনা। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুলে যায়। ঝঞ্ঝাট-ঝামেলা করে। তো আমি একটু সমাজে কয়েছিলাম। তাইতে এই অবস্থা করিছে।’ তিনি বলেন, মামলার এক নম্বর আসামি মো. কামাল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। আসামিদের সবাই তাঁর ভাষায় ‘কামালের লোক’, ‘কামালের পেছনে শক্তি দেয়’। পরিবারটি বাড়ির সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটির জন্য এখন আতঙ্কে অস্থির।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান আসামি কামাল নলভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। শাহানূর বলেন, এক আসামির ভাই কালীগঞ্জের নলভাঙ্গায় গিয়ে তাঁর বড় ভাই সামাউল বিশ্বাসকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। মেয়ের স্কুলে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ।
আর্জিনা বলেন, ‘যারা মাইরেছে তাগের বাড়ির ওপর দি যাতি হয়। স্কুলে যাওয়ার পথে মেয়েরে আটকে বলিছে, তোমার আব্বু তেজ করিছে তাকে মারিছি। এবার তোমাকে মারব।’ তাঁর বড় মেয়ে যশোর মহিলা কলেজে সম্মান প্রথম বর্ষে পড়তেন। প্রায় ২৩ মাইল দূরে কলেজ। বখাটেদের উৎপাতে তিনি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছেন।
শাহানূর বারবার বলছিলেন, ‘আমাগেরে সবাই একটু বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিয়েন। আমার যে অবস্থা, রাতে এসে মেরেও দিয়ে যেতে পারে। তাগের যে একটা গুরুপ! তারা সব সময় অস্ত্র নিয়ে ঘোরে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম দাবি করেন, ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ‘রবি গ্রুপ’ ও ‘কামাল গ্রুপ’-এর মধ্যে বহুদিন ধরে কোন্দল চলে আসছে। রবি শাহানূরের ভাই। গত বছর তিনি খুন হন। ওই খুনের মামলায় শাহানূর সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তখন থেকেই দুই পক্ষে বিরোধ চলে আসছিল।’ ওসি প্রথম আলোকে বলেন, শাহানূর, কামাল দুজনের বিরুদ্ধেই অনেকগুলো মামলা আছে। মামলার এক নম্বর আসামি মো. কামালকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কামালের ভাই আজাদ গ্রেপ্তার হয়েছেন।
যুবলীগ নেতার এমন নৃশংসতায় জড়িত থাকার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে থানা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যক্তির দোষের দায় তো দল নেবে না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খুবই তৎপর। কামালকে ধরা পড়তেই হবে। সে একটা জঘন্য কাজ করেছে। এমপিও খুব বকেছেন কামালের লোকজনকে। তবে শাহানূরও খারাপ লোক।’