আফগানিস্তান থেকে ফিরলেন ২৫ বাংলাদেশি

Slider জাতীয়

eca66539865bda13307c97b2012e30ee-img_20161117_132104

ঢাকা; বিদেশে গেলে জীবন বদলে যাবে—এমন আশায় নারায়ণগঞ্জের যুবক তাজু মিয়া (২৫) গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। কিন্তু ভাগ্য বদলানো তো দূরের কথা, উল্টো ঘোর অন্ধকার নেমে আসে তাঁর জীবনে। কাজ নেই। পর্যাপ্ত খাবার নেই। টানা এক বছর একটি ভবনে প্রায় বন্দিজীবন। ঢাকায় ফিরে তাজু মিয়া কাঁদতে কাঁদতে  বলেন, ‘বন্দিশালা থেকে মুক্তি পাইছি রে ভাই। আমার জীবনে সবচেয়ে আনন্দের দিন আজ।’
আফগানিস্তানে একটি কারখানায় বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে মোট ২৫ জন যুবক আজ বৃহস্পতিবার সকালে আফগানিস্তান থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। সেখান থেকে তাঁদের নেওয়া হয় ঢাকার উত্তরার একটি হোটেলে। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরার আনন্দ যেমন আছে, তেমনি এতগুলো টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে খালি হাতে ফেরার কারণে সামনে অনিশ্চয়তাও দেখছেন তাঁরা। এমন কথাই বললেন কিশোরগঞ্জের নাজমুল হক (৩২) ও ময়মনসিংহের ফারুক হোসেন (৩৮)।


আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং আটক বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাংলাদেশে রামপ্রসাদ নামের ভারতীয় এক নাগরিকের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। ভালো চাকরি ও বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে এই ২৫ জনকে নেওয়া হয় আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে। সেখানে গজরা এলাকায় একটি ইস্পাত কারখানায় চাকরিও দেওয়া হয়। এই কাজ পাওয়ার জন্য রামপ্রসাদকে দেড় লাখ টাকা করে দিয়েছেন একেকজন। কিন্তু তাঁদের ভিসার মেয়াদ ছিল মাত্র এক মাস। ভিসা নবায়ন হবে—এই ভরসায় কাজ শুরু করেন শ্রমিকেরা। কিন্তু দুই মাস পর ওই কারখানাই বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, কারখানা বন্ধ হওয়ার পর তাঁদের ক্রীতদাসের মতো ওই কারখানারই চৌহদ্দির ভেতরে বিভিন্ন রকম কায়িক শ্রম করিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু কোনো বেতন দেওয়া হয়নি। অবস্থা খারাপ হলে পরিবারগুলো ঢাকায় বাংলাদেশের আফগানিস্তান দূতাবাসে যোগাযোগ করে।

আইওএমের ঢাকার জাতীয় কর্মসূচি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাকিল মনসুর  বলেন, কাজের সন্ধানে গিয়ে আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি ইস্পাত কারখানায় এই ২৫ বাংলাদেশি আটকা পড়েছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইওএম তাঁদের দেশে ফিরিয়ে এনেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১০টায় ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইটে তাঁরা ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। সেখান থেকে তাঁদের উত্তরার একটি হোটেলে নেওয়া হয়েছে। আজকেই তাঁরা তাঁদের পরিবারের কাছে যেতে পারবেন।

ফেরত আসা ময়মনসিংহের ফারুক হোসেন (৩৮) জানান, তিনি ১৩ মাস ১০ দিন আটক ছিলেন। আজকে অবশেষে স্ত্রী আর দুই সন্তানের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে। তাঁর জীবনে এমন আনন্দের দিন খুব কমই এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *