গত ৩ অক্টোবর সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে এমসি কলেজে ছাত্রলীগ নেতা এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র বদরুল আলমের নৃশংসতার শিকার হন। বদরুল তাঁকে উপর্যুপরি কোপান। গুরুতর আহত অবস্থায় খাদিজাকে প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সিলেটের জালালাবাদের আউশা গ্রামে খাদিজাদের বাড়ি। রক্ষণশীল যৌথ পরিবার। উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়ে কী হবে—এমন প্রশ্ন তুলেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু ব্যাংকার হতে চাওয়া খাদিজা গোঁ ধরেছিলেন—পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন। পাশে দাঁড়ান বড় ভাই শাহীন আহমেদ। সহশিক্ষায় কারও কারও আপত্তি ছিল। তাই স্নাতক সম্মানে ভর্তির সুযোগ পেয়েও খাদিজা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হন।
গতকাল খাদিজা বলেন, ‘আমি বাড়ি ফিরে আবার লেখাপড়া করব। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এসেছিলেন। তাঁরা আমাকে ভর্তি করবেন বলে গেছেন। আমি হয় ইংরেজিতে পড়ব, নইলে অর্থনীতিতে।’ বললেন, যে বিষয়েই সম্মান পড়ুন না কেন, তিনি ব্যাংকার হবেন।
৩ অক্টোবর মাকে বলেছিলেন, পরীক্ষা দিয়ে ফিরে ভাত খাবেন। বদরুলের কোপে গুরুতর আহত হওয়ায় বাড়ি ফেরা হয়নি, ভাতও খাওয়া হয়নি। মনোয়ারা বেগমও ভাত না খেয়ে ছিলেন। খাদিজাকে এখন আর নল ঢুকিয়ে খাওয়াতে হয় না। বললেন, স্বাভাবিক সব খাবার খাচ্ছেন তিনি। কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।
গতকালই প্রথম খাদিজা অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনো সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেন। পরিবারের শর্ত ছিল—ছবি তোলা যাবে না, রেকর্ড করা যাবে না।
৩ অক্টোবর দিবাগত গভীর রাতে স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়েছিল খাদিজাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় তখন তাঁর ওপর হামলার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। খাদিজা অচেতন। ৪ অক্টোবর স্কয়ার হাসপাতালের নিউরোসার্জারির চিকিৎসক রেজাউস সাত্তার বলেছিলেন, ‘এ ধরনের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫ শতাংশ। ৭২ ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’ আর গতকাল রেজাউস সাত্তার বলেন, ‘ও ভালোভাবে সেরে উঠছে। এখনো তারিখ ঠিক না হলেও আশা করি, কয়েক দিন পরই হাসপাতাল থেকে ছুটি পাবে।’
খাদিজার মস্তিষ্কে দুই দফা এবং দুই হাতে ও পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে। বাঁ হাত, বাঁ পা এখনো ঠিকমতো নাড়াতে পারেন না। তবে চিকিৎসকদের আশা, তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। ২৪-২৫ নভেম্বরের দিকে তাঁকে সিআরপিতে নেওয়া হবে। সেখানকার চিকিৎসা শেষে খাদিজার বাড়ি ফেরার কথা।
৩ অক্টোবরের ঘটনা সম্পর্কে খাদিজা কিছু বলেন কি না, জানতে চাইলে মাশুক মিয়া বলেন, ‘তারে আমি জিগাইসি, আব্বু, তুমি যে আইলায় হাসপাতালে, কী হইছিল? বাচ্চা আউলিয়া ফালায়। ডাক্তার বেশি মাতত না করছে।’