ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরে ওই এলাকায় পুলিশ পাহারায় রয়েছে। এর মধ্যে আরেকটি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটল।
ছোট্টু লাল দাস প্রথম আলোকে বলেন, আগুনে ওই ঘরে থাকা মাছ ধরার দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা মূল্যের পাঁচটি বড় জাল পুড়ে গেছে। এগুলো তাঁর আয়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল। তবে ওই ঘরে কেউ ছিল না।
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক হরিপদ পোদ্দার জানান, ৩০ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে উপজেলায় পুলিশের ব্যাপক নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা আবারও একটি ঘরে আগুন দিয়েছে।
ছোট্টু লাল দাসের ছেলে সুজিত দাস বলেন, বসতঘর-সংলগ্ন রান্নাঘর থেকে ছয় ফুট দূরে একটি একচালা টিনের ঘরে দুষ্কৃতকারীরা শনিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের তাপে ঘর থেকে বের হয়ে আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা এসে আগুন নেভাতে সাহায্য করেন।
প্রতিবেশী শরৎ দাস জানান, তাঁরা গ্রামের আটজন ব্যক্তি মিলে গ্রামের বাড়িঘর পাহারা দেন। আটজনের ওই দলে সুজিত দাসও ছিলেন। রাত চারটার পর সবাই যার যার ঘরে ঘুমাতে যান। এরপরই আগুন দেওয়া হয়।
শরৎ দাস ও সুজিত দাসের দাবি, গতকাল শনিবার রাতে তাঁদের গ্রামে পাহারায় পুলিশ ছিল না। তাঁরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে পাহারা দিয়েছেন। প্রতিদিন রাতে গ্রামের বাড়িঘর পাহারা দেন। তাঁরা জানান, তাঁদের মহল্লায় ৫৩টি পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি হিন্দু পরিবার ও একটি মুসলিম পরিবার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আবার হিন্দুদের একটি ঘরে আগুন দেওয়া ঘটনাটি রহস্যজনক। পুলিশ দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করবে।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর বলেন, আগুন দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, ৩০ অক্টোবরের হামলার ঘটনার পর থেকে নাসিরনগর সদর উপজেলার বিভিন্ন মহল্লায় পুলিশের ১৪টি টহল দল রাতে পাহারা দিচ্ছে। প্রতি দলে চারজন করে পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ও ৬০-৭০টি হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার চার দিন ৪ নভেম্বর ভোরে আবারও উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পারিবারিক মন্দির এবং পাঁচটি গোয়াল ও রান্নাঘরে আগুন দেয় দুষ্কৃতকারীরা। এসব ঘটনায় নাসিরনগর থানায় এ পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। ওই পাঁচ মামলায় পুলিশ এখন পর্যন্ত মোট ৮৪ জনকে আটক করেছে।