প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমাদের ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। প্রত্যেক ধর্মের মূল বাণীও তা–ই। এখানে সকল ধর্মের মানুষ তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করতে পারবেন। এটাই ইসলামের কথা, এটাই আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কথা এবং আমরা সেটাই মেনে চলি। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মানুষ খুন করা কিন্তু ইসলামের পথ না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশবাসীকে দেশের উন্নয়নের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে অব্যাহত রাখার জন্য শান্তি–শৃঙ্খলা বজায় রাখাটা জরুরি। তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। কারণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ছাড়া একটি দেশের উন্নয়ন সম্ভব না। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই জনগণের প্রতি—সকলে আমার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। যে কারণে এটা আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ অন্তত নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কিন্তু এখনো কিছু কিছু যে সমস্ত ঘটনা ঘটছে, সেগুলো যেন আর না ঘটে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বিএনপির কোনো এক নেতা কিছুদিন আগে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ আন্দোলনের কী দেখেছে, নভেম্বর মাসে হবে আসল আন্দোলন। তাদের আন্দোলন যদি হয় আবারও এই মানুষ খুন করা, মানুষের ঘরবাড়ি পোড়ানো, সংখ্যালঘুদের ওপর আঘাত-নির্যাতন করা এবং এর মাধ্যমে দেশের সম্প্রীতি নষ্ট করা, সেই আন্দোলন কোনো দিনও মানুষের সমর্থন পাবে না। এই পথ জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটাই চাইব যে আমাদের দেশের সকলে, যেমন মসজিদের ইমামরা জুমার নামাজের আগে যে খুতবা দেন, সেখানে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস সম্পর্কে আমাদের ইসলাম ধর্মে কী আছে, নবীজি কী বলেছেন, কোরআন শরিফে কী বলা আছে, তা মানুষের কাছে তুলে ধরবেন। বিষয়টা মানুষকে ভালোভাবে জানাতে হবে। যাতে কেউ বিপথে না যায়। এ ধরনের আত্মঘাতী পথে পা না বাড়ায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মজীবী, সাধারণ জনগণ সবাইকে আহ্বান জানাব, সকলের যৌথ উদ্যোগেই আমরা বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা ও মানুষকে পুড়িয়ে মারা—এটা কখনো মানুষের কাজ নয়। এ কথা সব সময় সবাইকেই মনে রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই আমাদের দেশে সব সময় সম্প্রীতি বজায় থাকবে, দেশ উন্নত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিশ্ববাসী স্বীকার করে, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখে অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়। আমরা দেশ স্বাধীন করেছি ৪৫ বছর হয়ে গেছে। আজকে যদি জাতির পিতা বেঁচে থাকতেন, তাহলে এই বাংলাদেশ আরও বহু আগেই উন্নত হতে পারত। কিন্তু তাঁর সেই অসমাপ্ত কাজ আমাদের সম্পন্ন করতে হবে। মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষ উন্নত জীবন পাবে, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, খুন-খারাবির পথটা এ দেশে আবারও দেখিয়ে দিল (পঁচাত্তরের জাতির পিতাকে হত্যার পরে) বিএনপি-জামায়াত, এটা এ দেশে নতুন কিছু নয়। তাদের সেই গুলি করো, বৃষ্টির মতো গুলি করো। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী—এই যে কথাগুলি, সেগুলো নিশ্চয়ই বাংলাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। ওই গুলি করো, মানুষ খুন করো—এসবই তারা জানে। এই কাজ তারা বারবার করেছে এবং তারাই এ দেশের ছেলেমেয়েদের বিপথে নিয়ে গেছে। উসকে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের মনে আছে, রাজশাহীতে বাংলা ভাই সৃষ্টি। প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীরা মিছিল করছে ট্রাকে। পুলিশ তাদের পাহারা দিচ্ছে। বিএনপির মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী তাদের মদদ দিচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, সেটা আমরা দেখেছি। আর এই রাজশাহীবাসীই সেটা প্রত্যক্ষ করেছেন—মানুষ হত্যা করে কীভাবে পায়ে বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকে আট টুকরা করা হয়েছে। নিরীহ মানুষ, পুলিশ হত্যা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশে বলেন, এরা চরিত্র কোনো দিনও শোধরাবে না। আর এই সন্ত্রাসের পথ বেয়েই আজকে এসেছে—নতুন উপসর্গ, ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা।
ভিডিও কনফারেন্সের সময় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার।