ঢাকা; বিয়ের পর বিয়ে। একে একে প্রতারণার বিয়ে। চলছে তো চলছেই। থামছে না কিছুতেই। এ পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর ৮ বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। আগের বিয়ের কথা লুকিয়ে, নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে একের পর এক বিয়ে করে যাচ্ছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জিয়াউল হক চঞ্চল। তার এই প্রতারণার বিয়ে ও নারী অভিসারের ঘটনা অহরহ বলে জানিয়েছেন ভোক্তভোগী নারীরা।
বিয়ের সময় মোটা অঙ্কের যৌতুক আদায়। পরে তা চলতে থাকে দফায় দফায়। একই সঙ্গে স্ত্রীদের ওপর চলে অবর্ণনীয় নানা নির্যাতন। রয়েছে স্ত্রীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগও। রাজধানীর মিরপুরে নিজ বাড়ি ও বিভিন্ন বাসায় সমানে চলে তার নারী অভিসার। যৌতুকের টাকা না দিলে এবং অপকর্ম জেনে গেলেই স্ত্রীর সমাদর বাড়ে। ভুলের প্রায়শ্চিত্তের ভান করে নিজের বাসায় রেখে সই ও কাগজপত্র জাল করে কৌশলে গোপনে স্ত্রীদের তালাক কার্যকর করা হয়। সম্প্রতি এসব অপরাধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শেরে-বাংলা নগর থানা থেকে তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। চিকিৎসাসহ নানা ছুঁতোই বেশি সময়ই থাকেন ঢাকায়। এক মামলায় গত ১৫ই সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন চঞ্চল। পুলিশের চাকরি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়েই তিনি বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন। প্রতারণার তালাক ও পাওনা দাবি করা স্ত্রী ও স্বজনদের গুলি করে মারার হুমকি দিচ্ছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এসআই মো. জিয়াউল হক চঞ্চল বলেন, এত বিয়ের জন্য তো পুলিশ বিভাগ আমাকে শাস্তি দিয়েছে। প্রথম শাস্তি হলো ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ আছে। এটা গুরুদণ্ড না। দ্বিতীয় শাস্তি হলো ডিএমপি থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি। তো আর কি চাই।
আপনার ৮টা বিয়ের খবর পাওয়া গেছে, আসলে আপনি ঠিক কয়টি বিয়ে করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিয়ের সংখ্যা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আপনি তো সব জানেন। ডিভোর্স হয়ে গেছে। তা আপনার শুনে কী দরকার। আর আমি প্রতারণা করেছি, কী নির্যাতন করেছি সেজন্য তো তারা সবাই আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমাকে হেরেজমেন্ট করেছে। আর কী চান।
জানা যায়, ২০১০ সালে এইচএসসি পাসের পর উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির স্বপ্নে দিন গুনছিলেন সেলি আক্তার। কিন্তু এরই মধ্যে তার কপাল পুড়লো। বরিশালের বানারীপাড়া থানার বারালিয়ায় তাদের গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় ঘটক বাবু তার বিয়ের জন্য প্রস্তাব নিয়ে যায়। ছেলে চঞ্চলের গ্রামের বাড়ি পাশের ফিরোজপুর জেলার নোছারাবাদ থানার সোহাগদল এলাকায়। মরহুম ডা. ফজলুল হক ও অধ্যাপক হোসনে আরা দম্পতির দু’সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে। পুলিশে চাকরি। ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও দোকান। এসব দেখে ও তাদের মনভোলানো কথায় রাজি হয়ে যান সেলির বাবা জাহাঙ্গীর আলম। প্রথম বিয়ে দাবি করা পাত্র চঞ্চলের চেয়ে পাত্রীর বয়স ১৮ বছর কম হলেও ওই ‘ভালো’ পরিবারে মেয়ে সোনায় সোহাগা হবে বলেই ভাবেন তিনি। চঞ্চল ও মায়ের ইচ্ছায় তড়িঘড়ি করে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’লাখ টাকা দেন মোহরে বিয়ে সম্পন্ন। ওই বছরের ২০শে মে খুব ধুমধাম করে বহু টাকা খরচ করে বিয়ে হয়। বিয়েতে মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, ফার্নিচার, স্বর্ণালঙ্কারসহ বহু টাকার যৌতুক আদায় করে বরপক্ষ। বিয়ের পর সেলিকে তোলা হয় রাজধানীর মিরপুর ২এর শিয়ালবাড়ি মোড়ের হাজী রোডে জি ব্লকে নিজেদের ১৪ নম্বর বাসা মনি ভিলায়। কিন্তু তাদের অপকর্ম নতুন বউ যাতে জানতে না পারে সে ভয়ে সেলিকে প্রথম থেকেই বাসায় তালা লাগিয়ে রাখা হতো। মিশতে দিত না বাইরের কারও সঙ্গে। বাসার সব কাজ করানোর পাশাপাশি চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিয়ের আগেই চঞ্চলের সিলেটে বদলির আদেশ হয়েছিল। বিয়ের পর তিনি সিলেট যান। কিছু দিন পর আবার ঢাকায় চলে আসেন। সেখান থেকে আবার রংপুরে বদলি হলে সেলিকেও নিয়ে যান। সেখানে অপর এক মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়ায় চঞ্চল। এর প্রতিবাদ জানান সেলি। এতে নির্যাতন চরমে উঠে। মারধর করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এরমধ্যে এক পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। পরে তাকে আবার ঢাকায় আনা হয়। কিন্তু বাসায় সেলি ও তার ছেলেকে ঠিকমত খাবার দিত না। বাসায় তালা দিয়ে রাখতো। একদিন তাকে মেরে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। তখন স্থানীয়ভাবে সালিশ-বিচার হয়। বিচারে সালিশকাররা বিয়ে ও বিভিন্ন সময় নেয়া যৌতুকের স্বর্ণালঙ্কার, ফার্নিচার, জিনিসপত্রসহ ২৫ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। তা না দিয়ে স্ত্রীকে তাড়াতে এবার নেয় অন্য কৌশল। আবার তাকে বাসায় তোলে। ৯ মাস পর একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তালাক দেয়া হয়েছে বলে সেলিকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর সে নির্যাতন ও গোপনে কার্যকর করা তালাকের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েই জানতে পারেন তিনি প্রথম নন। চতুর্থ স্ত্রী। এরপর তিনি ২০১৫ সালের ২৯শে মার্চ পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে অভিযোগ করেন। প্রতিবেদন দেয়ায় আগ মুহূর্তে চাকরি হারাতে পারে এই শঙ্কায় আবার স্ত্রীর হাতে-পায়ে ধরে কোনো অপরাধ করবে না প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঁচলাখ টাকা দেন মোহরে গত বছরের ২০শে সেপ্টেম্বর তাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। এবার মিরপুরের একটি ভাড়া বাসায় তাকে তোলে। বাজার পাঠানোর নামে ওই বাসায় অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লোক পাঠাতে থাকে। এ সময় স্ত্রী সেলি বারবার পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। সুবিধা করতে না পেরে মাস খানেক পর ছেড়ে দেয় ওই বাসা। এবার উঠানো হয় মিরপুরের দেহ ব্যবসার আখড়া হিসেবে পরিচিত অপর একটি অন্ধকার ভবনে। এখানেও বার বার চলে একই চেষ্টা। ওই বাসায় পুলিশি অভিযান হলে তা সেলি জানতে পারেন। পরে তার পরিবার সেখান থেকে তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর গত জুনের প্রথম দিকে সেলি ডিএমপির তেজগাঁও জোনের উপপুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দেন। এর আগে উল্টো নিজের বাসা থেকে টাকা চুরি অভিযোগে সেলির বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রফেসর হোসনে আরা বেগম।
এত গেল এক স্ত্রীর কথা। এর আগে প্রায় একই প্রতারণা ও কৌশলে ২০০৪ সালের ২৮শে নভেম্বর বিয়ে করেন আছরিনা খানম রেখাকে। তার এই দ্বিতীয় স্ত্রীকেও মিরপুরের বাসায় উঠানো হয়েছিল। একর পর এক নির্যাতন ও মারধরে নষ্ট হয়েছে তার গর্ভের সন্তান। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বিয়ের ৬ বছর পর তাকে বের করে দেয়া হয়। এসব নির্যাতন, বিয়ের সময় ২৫ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও বিয়ের পর বাড়ি নির্মাণের নামে ৬ লাখ করে দুফায় ১২ টাকা আদায় এবং আরো ৬ লাখ টাকা না দেয়ায় বের করে দেয়ার অভিযোগে গত ২০১০ সালের ৩০শে মে আদালতে মামলা করেন রেখা। এই মামলায় তার অনুমতি ছাড়া তৃতীয় বিয়ে করা জাহানারা ফেরদৌস শিল্পীকেও আসামি করা হয়েছিল। গত ২০১১ সালের ২০শে এপ্রিল ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেন মিরপুর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. বিল্লাল মিয়া। তাতে তিনি উল্লেখ করেন. ‘…বিবাদী (চঞ্চল) চাকরির বদলিসূত্রে বিভিন্ন জেলায় ও বিভিন্ন সংস্থায় চাকরিত অবস্থায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিবাহ করিয়া থাকে।…’প্রতিবেদনটিতে চঞ্চলের বিয়ে করা ৪ স্ত্রীর নামও উল্লেখ করেন ওই তদন্ত কর্মকর্তা। আর ওই বিয়ের সময় রেখার পরিবার থেকে যৌতুক হিসেবে মোটা অঙ্কের যৌতুক গ্রহণের বিষয়ও উঠে আসে। আর এই মামলার অপর আসামি তখন চঞ্চলের ঘরে থাকা তৃতীয় স্ত্রী জাহানারা ফেরদৌস শিল্পীও একইভাবে প্রতাণার শিকার হয়েছিলেন। জাহানারাকে বিয়ে করেছিলেন ২০০৬ সালের ১০ মার্চ। অপর দিকে ১৯৯৮ সালের ১৭ এপ্রিল বিয়ে করা প্রথম স্ত্রী জান্নাত আরা ফেরদৌসের ঘরে এক কন্যা সন্তান থাকা সত্ত্বেও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আর ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ বিয়ে করেন ফারহানা আহমেদ নামে অপর নারীকে। তারপর বিয়ে করেন নিশু নামে আরেক নারীকে। তাকে এখন মিরপুরে একটি ভাড়াঘরে রাখা হয়েছে। এর বাইরেও তার স্ত্রী ও প্রেমিকা রয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তবে প্রকৃত সংখ্যা কত তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। এপ্রশ্ন এডিয়ে যান চঞ্চল নিজেও।
তার চতুর্থ স্ত্রী সেলি আক্তার বলেন, চঞ্চল তার মায়ের সহযোগিতায় উপঢৌকন, টাকা ও যৌতুকের জন্য আগের বিয়ের কথা লুকিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে একে একে বিয়ে করে যাচ্ছে। নানাভাবে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। যৌতুক না পেলে ছুঁড়ে ফেলে আবার নতুন বিয়ে করেন। স্ত্রীর অজান্তে জাল সই ও কাগজপত্র বানিয়ে গোপনে ডিভোর্স দেয়। স্ত্রী থাকা অবস্থায় নিজ কক্ষে অন্য মেয়ে এনে অভিসারে লিপ্ত হতো। বিভিন্ন বাসায় নারী রেখেও চলে তার অভিসার। আমাকে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করানোর চেষ্টাও করে। কিন্তু এত অপরাধেও তার বিচার হচ্ছে না। পুলিশে চাকরি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে মামলা এবং অভিযোগ করেও বিচার পাচ্ছি না আমরা। জীবন নষ্ট হওয়ার পর এখন আমাদের পাওনাও ফিরে পাচ্ছি না। থামছে না তার বিকৃত নারী নেশা। আমি প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের কাছে এই অন্যায়ের বিচার চাই। আর কোনো নারী যেন তার শিকারে পরিণত না হন।
বিয়ের সময় মোটা অঙ্কের যৌতুক আদায়। পরে তা চলতে থাকে দফায় দফায়। একই সঙ্গে স্ত্রীদের ওপর চলে অবর্ণনীয় নানা নির্যাতন। রয়েছে স্ত্রীদের দেহ ব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগও। রাজধানীর মিরপুরে নিজ বাড়ি ও বিভিন্ন বাসায় সমানে চলে তার নারী অভিসার। যৌতুকের টাকা না দিলে এবং অপকর্ম জেনে গেলেই স্ত্রীর সমাদর বাড়ে। ভুলের প্রায়শ্চিত্তের ভান করে নিজের বাসায় রেখে সই ও কাগজপত্র জাল করে কৌশলে গোপনে স্ত্রীদের তালাক কার্যকর করা হয়। সম্প্রতি এসব অপরাধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শেরে-বাংলা নগর থানা থেকে তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে। চিকিৎসাসহ নানা ছুঁতোই বেশি সময়ই থাকেন ঢাকায়। এক মামলায় গত ১৫ই সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন চঞ্চল। পুলিশের চাকরি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়েই তিনি বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন। প্রতারণার তালাক ও পাওনা দাবি করা স্ত্রী ও স্বজনদের গুলি করে মারার হুমকি দিচ্ছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এসআই মো. জিয়াউল হক চঞ্চল বলেন, এত বিয়ের জন্য তো পুলিশ বিভাগ আমাকে শাস্তি দিয়েছে। প্রথম শাস্তি হলো ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিন বছরের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ আছে। এটা গুরুদণ্ড না। দ্বিতীয় শাস্তি হলো ডিএমপি থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি। তো আর কি চাই।
আপনার ৮টা বিয়ের খবর পাওয়া গেছে, আসলে আপনি ঠিক কয়টি বিয়ে করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিয়ের সংখ্যা এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, আপনি তো সব জানেন। ডিভোর্স হয়ে গেছে। তা আপনার শুনে কী দরকার। আর আমি প্রতারণা করেছি, কী নির্যাতন করেছি সেজন্য তো তারা সবাই আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমাকে হেরেজমেন্ট করেছে। আর কী চান।
জানা যায়, ২০১০ সালে এইচএসসি পাসের পর উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির স্বপ্নে দিন গুনছিলেন সেলি আক্তার। কিন্তু এরই মধ্যে তার কপাল পুড়লো। বরিশালের বানারীপাড়া থানার বারালিয়ায় তাদের গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় ঘটক বাবু তার বিয়ের জন্য প্রস্তাব নিয়ে যায়। ছেলে চঞ্চলের গ্রামের বাড়ি পাশের ফিরোজপুর জেলার নোছারাবাদ থানার সোহাগদল এলাকায়। মরহুম ডা. ফজলুল হক ও অধ্যাপক হোসনে আরা দম্পতির দু’সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে। পুলিশে চাকরি। ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও দোকান। এসব দেখে ও তাদের মনভোলানো কথায় রাজি হয়ে যান সেলির বাবা জাহাঙ্গীর আলম। প্রথম বিয়ে দাবি করা পাত্র চঞ্চলের চেয়ে পাত্রীর বয়স ১৮ বছর কম হলেও ওই ‘ভালো’ পরিবারে মেয়ে সোনায় সোহাগা হবে বলেই ভাবেন তিনি। চঞ্চল ও মায়ের ইচ্ছায় তড়িঘড়ি করে এক সপ্তাহের মধ্যে দু’লাখ টাকা দেন মোহরে বিয়ে সম্পন্ন। ওই বছরের ২০শে মে খুব ধুমধাম করে বহু টাকা খরচ করে বিয়ে হয়। বিয়েতে মোটরসাইকেল, টিভি, ফ্রিজ, ফার্নিচার, স্বর্ণালঙ্কারসহ বহু টাকার যৌতুক আদায় করে বরপক্ষ। বিয়ের পর সেলিকে তোলা হয় রাজধানীর মিরপুর ২এর শিয়ালবাড়ি মোড়ের হাজী রোডে জি ব্লকে নিজেদের ১৪ নম্বর বাসা মনি ভিলায়। কিন্তু তাদের অপকর্ম নতুন বউ যাতে জানতে না পারে সে ভয়ে সেলিকে প্রথম থেকেই বাসায় তালা লাগিয়ে রাখা হতো। মিশতে দিত না বাইরের কারও সঙ্গে। বাসার সব কাজ করানোর পাশাপাশি চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বিয়ের আগেই চঞ্চলের সিলেটে বদলির আদেশ হয়েছিল। বিয়ের পর তিনি সিলেট যান। কিছু দিন পর আবার ঢাকায় চলে আসেন। সেখান থেকে আবার রংপুরে বদলি হলে সেলিকেও নিয়ে যান। সেখানে অপর এক মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়ায় চঞ্চল। এর প্রতিবাদ জানান সেলি। এতে নির্যাতন চরমে উঠে। মারধর করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এরমধ্যে এক পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। পরে তাকে আবার ঢাকায় আনা হয়। কিন্তু বাসায় সেলি ও তার ছেলেকে ঠিকমত খাবার দিত না। বাসায় তালা দিয়ে রাখতো। একদিন তাকে মেরে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। তখন স্থানীয়ভাবে সালিশ-বিচার হয়। বিচারে সালিশকাররা বিয়ে ও বিভিন্ন সময় নেয়া যৌতুকের স্বর্ণালঙ্কার, ফার্নিচার, জিনিসপত্রসহ ২৫ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার সিদ্ধান্ত দেন। তা না দিয়ে স্ত্রীকে তাড়াতে এবার নেয় অন্য কৌশল। আবার তাকে বাসায় তোলে। ৯ মাস পর একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই তালাক দেয়া হয়েছে বলে সেলিকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর সে নির্যাতন ও গোপনে কার্যকর করা তালাকের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়েই জানতে পারেন তিনি প্রথম নন। চতুর্থ স্ত্রী। এরপর তিনি ২০১৫ সালের ২৯শে মার্চ পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে অভিযোগ করেন। প্রতিবেদন দেয়ায় আগ মুহূর্তে চাকরি হারাতে পারে এই শঙ্কায় আবার স্ত্রীর হাতে-পায়ে ধরে কোনো অপরাধ করবে না প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঁচলাখ টাকা দেন মোহরে গত বছরের ২০শে সেপ্টেম্বর তাকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। এবার মিরপুরের একটি ভাড়া বাসায় তাকে তোলে। বাজার পাঠানোর নামে ওই বাসায় অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন লোক পাঠাতে থাকে। এ সময় স্ত্রী সেলি বারবার পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। সুবিধা করতে না পেরে মাস খানেক পর ছেড়ে দেয় ওই বাসা। এবার উঠানো হয় মিরপুরের দেহ ব্যবসার আখড়া হিসেবে পরিচিত অপর একটি অন্ধকার ভবনে। এখানেও বার বার চলে একই চেষ্টা। ওই বাসায় পুলিশি অভিযান হলে তা সেলি জানতে পারেন। পরে তার পরিবার সেখান থেকে তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর গত জুনের প্রথম দিকে সেলি ডিএমপির তেজগাঁও জোনের উপপুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দেন। এর আগে উল্টো নিজের বাসা থেকে টাকা চুরি অভিযোগে সেলির বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রফেসর হোসনে আরা বেগম।
এত গেল এক স্ত্রীর কথা। এর আগে প্রায় একই প্রতারণা ও কৌশলে ২০০৪ সালের ২৮শে নভেম্বর বিয়ে করেন আছরিনা খানম রেখাকে। তার এই দ্বিতীয় স্ত্রীকেও মিরপুরের বাসায় উঠানো হয়েছিল। একর পর এক নির্যাতন ও মারধরে নষ্ট হয়েছে তার গর্ভের সন্তান। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। বিয়ের ৬ বছর পর তাকে বের করে দেয়া হয়। এসব নির্যাতন, বিয়ের সময় ২৫ লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও বিয়ের পর বাড়ি নির্মাণের নামে ৬ লাখ করে দুফায় ১২ টাকা আদায় এবং আরো ৬ লাখ টাকা না দেয়ায় বের করে দেয়ার অভিযোগে গত ২০১০ সালের ৩০শে মে আদালতে মামলা করেন রেখা। এই মামলায় তার অনুমতি ছাড়া তৃতীয় বিয়ে করা জাহানারা ফেরদৌস শিল্পীকেও আসামি করা হয়েছিল। গত ২০১১ সালের ২০শে এপ্রিল ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেন মিরপুর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. বিল্লাল মিয়া। তাতে তিনি উল্লেখ করেন. ‘…বিবাদী (চঞ্চল) চাকরির বদলিসূত্রে বিভিন্ন জেলায় ও বিভিন্ন সংস্থায় চাকরিত অবস্থায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিবাহ করিয়া থাকে।…’প্রতিবেদনটিতে চঞ্চলের বিয়ে করা ৪ স্ত্রীর নামও উল্লেখ করেন ওই তদন্ত কর্মকর্তা। আর ওই বিয়ের সময় রেখার পরিবার থেকে যৌতুক হিসেবে মোটা অঙ্কের যৌতুক গ্রহণের বিষয়ও উঠে আসে। আর এই মামলার অপর আসামি তখন চঞ্চলের ঘরে থাকা তৃতীয় স্ত্রী জাহানারা ফেরদৌস শিল্পীও একইভাবে প্রতাণার শিকার হয়েছিলেন। জাহানারাকে বিয়ে করেছিলেন ২০০৬ সালের ১০ মার্চ। অপর দিকে ১৯৯৮ সালের ১৭ এপ্রিল বিয়ে করা প্রথম স্ত্রী জান্নাত আরা ফেরদৌসের ঘরে এক কন্যা সন্তান থাকা সত্ত্বেও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। আর ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ বিয়ে করেন ফারহানা আহমেদ নামে অপর নারীকে। তারপর বিয়ে করেন নিশু নামে আরেক নারীকে। তাকে এখন মিরপুরে একটি ভাড়াঘরে রাখা হয়েছে। এর বাইরেও তার স্ত্রী ও প্রেমিকা রয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তবে প্রকৃত সংখ্যা কত তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। এপ্রশ্ন এডিয়ে যান চঞ্চল নিজেও।
তার চতুর্থ স্ত্রী সেলি আক্তার বলেন, চঞ্চল তার মায়ের সহযোগিতায় উপঢৌকন, টাকা ও যৌতুকের জন্য আগের বিয়ের কথা লুকিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে একে একে বিয়ে করে যাচ্ছে। নানাভাবে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। যৌতুক না পেলে ছুঁড়ে ফেলে আবার নতুন বিয়ে করেন। স্ত্রীর অজান্তে জাল সই ও কাগজপত্র বানিয়ে গোপনে ডিভোর্স দেয়। স্ত্রী থাকা অবস্থায় নিজ কক্ষে অন্য মেয়ে এনে অভিসারে লিপ্ত হতো। বিভিন্ন বাসায় নারী রেখেও চলে তার অভিসার। আমাকে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করানোর চেষ্টাও করে। কিন্তু এত অপরাধেও তার বিচার হচ্ছে না। পুলিশে চাকরি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে মামলা এবং অভিযোগ করেও বিচার পাচ্ছি না আমরা। জীবন নষ্ট হওয়ার পর এখন আমাদের পাওনাও ফিরে পাচ্ছি না। থামছে না তার বিকৃত নারী নেশা। আমি প্রধানমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধানের কাছে এই অন্যায়ের বিচার চাই। আর কোনো নারী যেন তার শিকারে পরিণত না হন।