নতুন বছরে রাজনীতিতে সমঝোতার প্রত্যাশা

Slider বাধ ভাঙ্গা মত


নতুন বছরে দেশের রাজনীতিতে অর্থবহ সমঝোতা দেখতে চান রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও বিরোধীদের বিপরীতমুখী অবস্থান এবং বাংলাদেশ নিয়ে দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পাল্টাপাল্টি বিবৃতির মধ্যে এ প্রত্যাশার কথা জানালেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতিতে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মাঝে সমঝোতা না হলে বাংলাদেশকে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। আর বাংলাদেশ কেন্দ্র করে পরাশক্তির মধ্যে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে, তা সতর্কতার সঙ্গে সামাল দিতে হবে। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই পরাশক্তির ‘শক্তি পরীক্ষার মাঠে’ পরিণত না হয়।

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি বিবৃতির পর সম্প্রতি সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই না রাশিয়া, আমেরিকা- কেউ আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাক, এটি তাদের বিষয় নয়।’

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ আমাদের সময়কে বলেন, ‘এটি নতুন কিছু নয়। সমস্যা হলো- আমরা ক্ষমতায় গেলে এক ধরনের কথা বলি, ক্ষমতায় না থাকলে আরেক ধরনের কথা বলি। বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- যারা ক্ষমতার বাইরে থাকে, তারা বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থার কাছে দেশের সরকারের বিরুদ্ধে নানা নালিশ করে। এর ফলে বাইরের শক্তি এখানে নাক গলাতে আসে।’

ড. মাহবুব বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতির হাতটা একটু শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশ কেন্দ্র করে রাশিয়া ও আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক বিরোধ সতর্কভাবে সামাল দিতে হবে, যেন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরাশক্তির শক্তি পরীক্ষার মাঠে পরিণত না হয়।’

ড. মাহবুব মনে করেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দারুণ অধঃপতন হয়েছে। এটিকে সঠিক জায়গায় আনতে আমাদের সক্রিয় উদ্যোগ প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থায় যদি গৌরব ফিরে আসে, তা হলে আমরা আশা করতে পারি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আছে। নইলে বাংলাদেশকে খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে।’

নতুন বছরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিতার অবসান চান মাহবুব উল্লাহ। এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘সামনে নির্বাচন। তার আগে ভোটাধিকারের প্রত্যাবর্তন চাই। দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ পূর্ণগণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করবে- এটি নিশ্চিত করা গেলে নতুন বছরটা আমাদের জন্য সাফল্য বয়ে আনবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অনেক কিছুই হবে। এগুলো নিয়ে চিন্তার কিছু দেখছি না। আমাদের রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য- মারমুখী অবস্থান স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশিরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নানা মন্তব্য করে।

আমাদের দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের বিভাজনের কারণে তারা এ সুযোগটা পায়। কিন্তু বিদেশিরা নিজেদের স্বার্থ বেশি দেখে। তাদের নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য যদি ঠিক থাকে, তা হলে তারাও চুপ হয়ে থাকবে। তারা নিজেদের স্বার্থ ঠিক রেখে সম্পর্ক তৈরি করে।’ ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘একটা দেশ যখন কথা বলবে, অন্য দেশ কেন মেনে নেবে? স্বাভাবিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশের ইস্যুতে বক্তব্য দিচ্ছে, রাশিয়াও পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে। কারণ পৃথিবী তো আর আগের মতো নেই। এগুলো নতুন কিছু নয়। তবে দেশের অর্থনীতি, অর্থনীতির কাঠামো যদি ভালো হয়, সে ক্ষেত্রে বিদেশিরা এমন সুযোগ নিতে পারবে না।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, ‘নতুন বছরে নারী নির্যাতন বন্ধ, মানব উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রসার চাই। প্রত্যাশা করি- নতুন বছরে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং মানুষ তার ভোটাধিকারসহ গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাবে।’

দেশের চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পরামর্শ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা বহু পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু কেউ তা শোনে না। সমঝোতা, দলগুলোর মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন, একসঙ্গে বসে কথা বলা- গণতন্ত্র বিশ্বাস করতে হলে এগুলো করতে হবে। নয়তো দেশ যে দিকে যাওয়ার সেদিকে যাবে- অন্ধকারের পথে হাঁটবে।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি হচ্ছে- সব কিছুর মূলকাঠি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে থাকলে মানুষও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, কেউ কোনো প্রোডাক্টিভ কাজ করতে পারে না।’

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব) অলি আহমেদ বলেন, ‘নতুন বছরে স্বৈরাচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ মুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। নতুন বছরেই দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফেরত চাই।’

বাংলাদেশ ইস্যুতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র স্বৈরতন্ত্রের কথা বলে না, তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আছে; কোনো দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির সঙ্গে নেই। অন্যদিকে রাশিয়া নিজেই ইউক্রেনের ওপর একতরফাভাবে আক্রমণ চালিয়েছে। তারা লিবিয়া ও সিরিয়ার যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছে।’

রাশিয়ার বিবৃতির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘শিয়াল অনেক মুরগি খাওয়ার পর শেষ বয়সে যদি বলে মুরগি খাওয়া হারাম, তা কতটা যুক্তিসঙ্গত।’

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি বিবৃতি প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘এ নিয়ে মন্তব্য না করাই ভালো। তবে নতুন বছরে দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক- এটিই আমাদের প্রত্যাশা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *