ঢাকা; গ্রেপ্তার-রিমান্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া যুগান্তকারী রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক ও ট্রাইব্যুনালের জন্য গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর গতকাল এ রায় প্রকাশিত হয়। আইজিপি এবং র্যাবের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে, যথাযথভাবে পালন করার জন্য অবিলম্বে এসব গাইডলাইন যেন সার্কুলেট করা হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ১০ দফা গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর অবিলম্বে একটি মেমোরেন্ডাম তৈরি করবেন। ওই কর্মকর্তা অবশ্যই গ্রেপ্তার ব্যক্তির স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন। যেখানে তারিখ এবং গ্রেপ্তারের সময় উল্লেখ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করলে ওই ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। নিকট আত্মীয়দের অনুপস্থিতিতে গ্রেপ্তার ব্যক্তির পরামর্শ অনুযায়ী তার কোনো বন্ধুকে জানাতে হবে। যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে বিষয়টি জানাতে হবে, তবে কোনো ভাবেই ১২ ঘণ্টার বেশি দেরি করা যাবে না। গ্রেপ্তারের সময় এবং স্থান এবং কোথায় আটক রাখা হয়েছে তা জানাতে হবে। গ্রেপ্তারের কারণসহ গ্রেপ্তারের ঘটনা ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। যার তথ্য অথবা অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে তার নাম-ঠিকানাও লিপিবদ্ধ করতে হবে। আটককৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে অভিযোগকারীর নাম ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করতে হবে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারায় আটক রাখার জন্য কোনো ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় আটক করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় নিজের পরিচয় প্রকাশ করবেন। যদি দাবি করা হয়, তবে যাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং যারা উপস্থিত আছেন তাদেরকে নিজের পরিচয়পত্র দেখাবেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তির শরীরে যদি কোনো রকম ইনজুরির চিহ্ন পাওয়া যায় তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ওই ইনজুরির কারণ লিপিবদ্ধ করবেন এবং ওই ব্যক্তিকে কাছের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবেন। এবং উপস্থিত চিকিৎসকের কাছ থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবেন। যদি কোনো ব্যক্তিকে তার বাসা বা ব্যবসায়িক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে ওই ব্যক্তিকে থানায় আনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তার নিকট আত্মীয়কে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী যখন কোনো ব্যক্তিকে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা তার ফরওয়ার্ডিং এ ১৬৭(১) অনুযায়ী কারণ বর্ণনা করবেন কেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হয়নি। কেন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তথ্য দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তাও বর্ণনা করতে হবে। কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কেস ডায়েরিও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করবেন।
রায়ে ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক এবং ট্রাইব্যুনালের জন্যও গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এসব গাইডলাইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারা মোতাবেক কেস ডায়েরি ছাড়া উপস্থাপন করেন, তবে ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত বা ট্রাইব্যুনাল ওই ব্যক্তিকে ধারা ১৬৭ অনুযায়ী মুক্তি দেবেন। এক্ষেত্রে তার কাছ থেকে একটি বন্ড নিতে হবে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কোনো সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা যদি কোনো আবেদন করেন, যে ব্যক্তি আগে থেকেই কাস্টডিতে আছেন, ওই ব্যক্তিকে যদি মামলার ডায়েরিসহ আদালতে হাজির করা না হয় এবং গ্রেপ্তারের আবেদন যদি দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং যদি ভিত্তিহীন হয়, তবে আদালত ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন। উপরোক্ত শর্তপূরণ সাপেক্ষে যদি কোনো ব্যক্তিকে আটকের ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করা না যায়, যা ১৬৭ (২) ধারা মোতাবেক এবং ওই মামলা যদি সেশন কোর্ট বা ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হয় তবে ম্যাজিস্ট্রেট ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৩৪৪ ধারা অনুযায়ী রিমান্ডে পাঠাতে পারবেন, তবে একসঙ্গে ১৫ দিনের বেশি নয়। ফরোয়াডিং এ বর্ণিত কারণ যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সন্তোষজনক মনে হয় এবং কেস ডায়েরিতে বর্ণিত অভিযোগ অথবা তথ্য যদি দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কেস ডায়েরিতে যদি ওই ব্যক্তিকে আটক রাখার জন্য তথ্য থাকে, ম্যাজিস্ট্রেট ওই ব্যক্তিকে আরো আটক রাখার জন্য আদেশ দেবেন, যা তিনি সঠিক মনে করেন। যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এটা বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে কোনো সদস্য বা কর্মকর্তা যার কোনো ব্যক্তিকে আইনত কারারুদ্ধ করার ক্ষমতা আছে, ওই কর্মকর্তা বা সদস্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কার্যক্রম করেছেন তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২২০ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রিমান্ডে বা তার কাস্টডিতে নেবেন, তখন তার দায়িত্ব হচ্ছে নির্ধারিত সময় শেষে তাকে আদালতে হাজির করা। যদি পুলিশ রিপোর্ট বা অন্য কোনোভাবে জানা যায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তি মারা গেছেন তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষার নির্দেশ দেবেন, যদি দেখা যায় যে, ভিকটিমের এরইমধ্যে দাফন হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে মৃতদেহ উঠিয়ে মেডিকেল পরীক্ষার নির্দেশ দেবেন, যদি মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টে দেখা যায়, মৃত্যু হত্যাজনিত, তবে ম্যাজিস্ট্রেট হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ ধারা অনুযায়ী ওই কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অথবা ওই কর্মকর্তা যার কাস্টডিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেবেন। যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপাদান বা তথ্য থাকে কোনো ব্যক্তি কাস্টডিতে নির্যাতন বা মৃত্যুর শিকার হয়েছেন (নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ২ এ বর্ণিত সংজ্ঞা অনুযায়ী) নির্যাতনের ক্ষেত্রে তিনি ভিকটিমকে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে রেফার করবেন। আর মৃত্যুর ক্ষেত্রে আঘাত বা মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ডে রেফার করবেন। যদি মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায় আটক ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়েছে অথবা নির্যাতনের কারণে মৃত্যু হয়েছে, এক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট ধারা ৪ ও ৫ এ মামলার জন্য অপেক্ষা না করে স্বপ্রণোদিত হয়ে ধারা ১৯০(১)(সি) অনুযায়ী অপরাধ আমলে নেবেন।
রায়ে বলা হয়েছে, উপরোক্ত রিকমেন্ডেশন ও গাইডলাইনসহ আপিল খারিজ করা হলো। আইজিপিকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এইসব গাইডলাইন অবিলম্বে সব পুলিশ স্টেশনে সার্কুলেট করার জন্য যেন তা আক্ষরিক ও চেতনাসহ কার্যকর হয়। র্যাবের মহাপরিচালককেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে তিনি যেন তার ইউনিট ও অফিসারদের কাছে সার্কুলেট করেন। রেজিস্ট্রারকে জেনারেল নির্দেশ দেয়া হচ্ছে তিনি যেন অবিলম্বে তা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে সার্কুলেট করেন।
২০০৩ সালের ৭ই এপ্রিল হাইকোর্র্ট এক রায়ে ৫৪ ও ১৬৭ ধারার কিছু বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি ছয় মাসের মধ্যে সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয় সরকারকে। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল গত ২৪শে মে খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই খারিজের রায়ই প্রকাশ হলো গতকাল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ১০ দফা গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পর অবিলম্বে একটি মেমোরেন্ডাম তৈরি করবেন। ওই কর্মকর্তা অবশ্যই গ্রেপ্তার ব্যক্তির স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন। যেখানে তারিখ এবং গ্রেপ্তারের সময় উল্লেখ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্য কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করলে ওই ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে বিষয়টি অবহিত করতে হবে। নিকট আত্মীয়দের অনুপস্থিতিতে গ্রেপ্তার ব্যক্তির পরামর্শ অনুযায়ী তার কোনো বন্ধুকে জানাতে হবে। যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে বিষয়টি জানাতে হবে, তবে কোনো ভাবেই ১২ ঘণ্টার বেশি দেরি করা যাবে না। গ্রেপ্তারের সময় এবং স্থান এবং কোথায় আটক রাখা হয়েছে তা জানাতে হবে। গ্রেপ্তারের কারণসহ গ্রেপ্তারের ঘটনা ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। যার তথ্য অথবা অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে তার নাম-ঠিকানাও লিপিবদ্ধ করতে হবে। আটককৃত ব্যক্তির নিকট আত্মীয় বা বন্ধুর কাছে অভিযোগকারীর নাম ও অন্যান্য তথ্য প্রকাশ করতে হবে। ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারায় আটক রাখার জন্য কোনো ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় আটক করা যাবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় নিজের পরিচয় প্রকাশ করবেন। যদি দাবি করা হয়, তবে যাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং যারা উপস্থিত আছেন তাদেরকে নিজের পরিচয়পত্র দেখাবেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তির শরীরে যদি কোনো রকম ইনজুরির চিহ্ন পাওয়া যায় তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ওই ইনজুরির কারণ লিপিবদ্ধ করবেন এবং ওই ব্যক্তিকে কাছের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবেন। এবং উপস্থিত চিকিৎসকের কাছ থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবেন। যদি কোনো ব্যক্তিকে তার বাসা বা ব্যবসায়িক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে ওই ব্যক্তিকে থানায় আনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তার নিকট আত্মীয়কে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাতে হবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী যখন কোনো ব্যক্তিকে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হয় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা তার ফরওয়ার্ডিং এ ১৬৭(১) অনুযায়ী কারণ বর্ণনা করবেন কেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হয়নি। কেন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তথ্য দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত তাও বর্ণনা করতে হবে। কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কেস ডায়েরিও ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করবেন।
রায়ে ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারক এবং ট্রাইব্যুনালের জন্যও গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। এসব গাইডলাইনে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যবিধির ১৬৭(২) ধারা মোতাবেক কেস ডায়েরি ছাড়া উপস্থাপন করেন, তবে ম্যাজিস্ট্রেট, আদালত বা ট্রাইব্যুনাল ওই ব্যক্তিকে ধারা ১৬৭ অনুযায়ী মুক্তি দেবেন। এক্ষেত্রে তার কাছ থেকে একটি বন্ড নিতে হবে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে কোনো সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা যদি কোনো আবেদন করেন, যে ব্যক্তি আগে থেকেই কাস্টডিতে আছেন, ওই ব্যক্তিকে যদি মামলার ডায়েরিসহ আদালতে হাজির করা না হয় এবং গ্রেপ্তারের আবেদন যদি দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হয় এবং যদি ভিত্তিহীন হয়, তবে আদালত ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করবেন। উপরোক্ত শর্তপূরণ সাপেক্ষে যদি কোনো ব্যক্তিকে আটকের ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করা না যায়, যা ১৬৭ (২) ধারা মোতাবেক এবং ওই মামলা যদি সেশন কোর্ট বা ট্রাইব্যুনালে বিচারযোগ্য হয় তবে ম্যাজিস্ট্রেট ওই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৩৪৪ ধারা অনুযায়ী রিমান্ডে পাঠাতে পারবেন, তবে একসঙ্গে ১৫ দিনের বেশি নয়। ফরোয়াডিং এ বর্ণিত কারণ যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে সন্তোষজনক মনে হয় এবং কেস ডায়েরিতে বর্ণিত অভিযোগ অথবা তথ্য যদি দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কেস ডায়েরিতে যদি ওই ব্যক্তিকে আটক রাখার জন্য তথ্য থাকে, ম্যাজিস্ট্রেট ওই ব্যক্তিকে আরো আটক রাখার জন্য আদেশ দেবেন, যা তিনি সঠিক মনে করেন। যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে এটা বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে কোনো সদস্য বা কর্মকর্তা যার কোনো ব্যক্তিকে আইনত কারারুদ্ধ করার ক্ষমতা আছে, ওই কর্মকর্তা বা সদস্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কার্যক্রম করেছেন তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২২০ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন। যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে রিমান্ডে বা তার কাস্টডিতে নেবেন, তখন তার দায়িত্ব হচ্ছে নির্ধারিত সময় শেষে তাকে আদালতে হাজির করা। যদি পুলিশ রিপোর্ট বা অন্য কোনোভাবে জানা যায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তি মারা গেছেন তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে ভিকটিমের শারীরিক পরীক্ষার নির্দেশ দেবেন, যদি দেখা যায় যে, ভিকটিমের এরইমধ্যে দাফন হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে মৃতদেহ উঠিয়ে মেডিকেল পরীক্ষার নির্দেশ দেবেন, যদি মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টে দেখা যায়, মৃত্যু হত্যাজনিত, তবে ম্যাজিস্ট্রেট হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ১৫ ধারা অনুযায়ী ওই কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অথবা ওই কর্মকর্তা যার কাস্টডিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেবেন। যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপাদান বা তথ্য থাকে কোনো ব্যক্তি কাস্টডিতে নির্যাতন বা মৃত্যুর শিকার হয়েছেন (নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩ এর ধারা ২ এ বর্ণিত সংজ্ঞা অনুযায়ী) নির্যাতনের ক্ষেত্রে তিনি ভিকটিমকে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে রেফার করবেন। আর মৃত্যুর ক্ষেত্রে আঘাত বা মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ডে রেফার করবেন। যদি মেডিকেল রিপোর্টে দেখা যায় আটক ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়েছে অথবা নির্যাতনের কারণে মৃত্যু হয়েছে, এক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট ধারা ৪ ও ৫ এ মামলার জন্য অপেক্ষা না করে স্বপ্রণোদিত হয়ে ধারা ১৯০(১)(সি) অনুযায়ী অপরাধ আমলে নেবেন।
রায়ে বলা হয়েছে, উপরোক্ত রিকমেন্ডেশন ও গাইডলাইনসহ আপিল খারিজ করা হলো। আইজিপিকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে এইসব গাইডলাইন অবিলম্বে সব পুলিশ স্টেশনে সার্কুলেট করার জন্য যেন তা আক্ষরিক ও চেতনাসহ কার্যকর হয়। র্যাবের মহাপরিচালককেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে তিনি যেন তার ইউনিট ও অফিসারদের কাছে সার্কুলেট করেন। রেজিস্ট্রারকে জেনারেল নির্দেশ দেয়া হচ্ছে তিনি যেন অবিলম্বে তা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে সার্কুলেট করেন।
২০০৩ সালের ৭ই এপ্রিল হাইকোর্র্ট এক রায়ে ৫৪ ও ১৬৭ ধারার কিছু বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে প্রচলিত বিধি ছয় মাসের মধ্যে সংশোধন করার পাশাপাশি ওই ধারা সংশোধনের আগে কয়েক দফা নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয় সরকারকে। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল গত ২৪শে মে খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই খারিজের রায়ই প্রকাশ হলো গতকাল।