ফ্যাক্টর লাতিনো ভোট

Slider ফুলজান বিবির বাংলা সারাবিশ্ব

file

 

নিউ ইয়র্ক; ভোট হচ্ছে ৫০টি অঙ্গরাজ্য এবং একটি ফেডারেল টেরিটরিতে। কিন্তু প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করছেন মাত্র ১১টি অঙ্গরাজ্যে। এগুলো ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেটস’। বহুকাল ধরেই মার্কিন নির্বাচনে এ রাজ্যগুলো এই বিশেষণে পরিচিত। বাকি ৩৯ রাজ্যে কে কোথায় বিজয়ী হতে পারেন সে ব্যাপারে মোটামুটি একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোতে কে কোথায় জিতবেন তার কোনোই নিশ্চয়তা নেই। আর তাই শেষ মুহূর্তের সব চেষ্টা কলরাডো থেকে ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা থেকে ওহাইয়ো কিংবা উইসকনসিন থেকে নেভাদায়। রোববার সকাল পর্যন্ত পলিটিকো’র সমন্বিত জরিপে তুমুল লড়াইয়ের ১১টি রাজ্যে গড় জনপ্রিয়তায় ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে রয়েছেন প্রায় ৩ শতাংশ অধিক জনসমর্থন নিয়ে। কিন্তু রাজ্য হিসেবে অন্তত তিনটিতে এগিয়ে আছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এরমধ্যে ২৯টি ইলেক্টোরাল ভোটের ফ্লোরিডায়ও তিনি অগ্রগামী। এ কারণে ফ্লোরিডা নিয়ে বিশেষ তৎপর ডেমোক্রেট নেতৃত্ব। তাঁরা ঘুরেফিরেই যাচ্ছেন সেখানকার ভোটারদের কাছে। গত ৪৮ ঘণ্টার সবগুলো জনমত জরিপে গড় জনপ্রিয়তায় স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন হিলারি ক্লিনটন। তবুও স্বস্তিতে নেই ডেমোক্রেট শিবির। ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের গত ক’দিনের ভূমিকা এবং রিপাবলিকান নেতৃত্বের নানা তৎপরতায় কিছুটা শংকিত তারা। যদিও গত ৪৮ ঘণ্টায় এফবিআইয়ের তরফে নতুন কোনো খবর নেই। তবে দু’প্রার্থীর জন্যই ফ্যাক্টর লাতিনো ভোট।

এদিকে প্রায় কাছাকাছি সময়ের দুটি ঘটনা এখন মার্কিন নির্বাচনী আলোচনায় বেশ প্রাধান্য পাচ্ছে। এর একটি শনিবার নেভাদা অঙ্গরাজ্যের রিনোতে ট্রাম্পের এক সমাবেশে জনৈক ট্রাম্প-বিরোধীর একটি পোস্টার প্রদর্শন এবং অপরটি নর্থ ক্যারোলাইনায় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সমাবেশে এক ট্রাম্প-সমর্থকের পোস্টার প্রদর্শনকে ঘিরে।
নেভাদার সমাবেশে অস্টিন ক্রাইটস নামের এক যুবক ‘রিপাবলিকান এগেইনস্ট ট্রাম্প’ লেখা একটি পোস্টার উঁচিয়ে ধরা মাত্রই শুরু হয়ে যায় হুুলস্থূল। ট্রাম্প সমর্থকরা ওই যুবককে বেধড়ক পেটানোর পাশাপাশি চিৎকার করে বলতে থাকে, তার কাছে বন্দুক আছে। তাৎক্ষণিক সিক্রেট সার্ভিসের সদস্যরা ট্রাম্পকে মঞ্চ থেকে দ্রুত নামিয়ে নিয়ে যান এবং আটক করা হয় ওই যুবককে। পরে দেখা গেল তার কাছে কোনো বন্দুক নেই, কেবলই একটি পোস্টার। আর তাই ছেড়ে দেয়া হয় যুবকটিকে এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে মঞ্চে ফিরে বক্তৃতা করেন ট্রাম্প। পিটুনির শিকার হওয়া যুবকটির ব্যাপারে তিনি কিছুই বলেননি।
অন্যদিকে শুক্রবার বিকালে নর্থ ক্যারোলাইনাতে বারাক ওবামার এক সমাবেশে তাঁর বক্তৃতার সময় হঠাৎ মঞ্চের অদূরেই ডনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাচনী পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে যান সেনা সদস্যের পোশাক পরা এক যুবক। তখন যুবকটির আশপাশের লোকজন উচ্চস্বরে হিলারি হিলারির নামে স্লোগান শুরু করে। এ সময় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাদেরকে থামতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, আপনাদের আমি মনোযোগ ধরে রাখতে বলেছি। আপনারা কি সেটা শুনছেন? আমাদের দেশে বাকস্বাধীনতা আছে। এই লোকটি তার পছন্দের প্রার্থীর প্রতি নিজের সমর্থন প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করছেন না। সুতরাং তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তাকে আমাদের সম্মান করা উচিত। আপনারা তাকে আর কিছুই বলবেন না। এরপরই পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। সমাবেশের শেষ পর্যন্ত লোকটি ট্রাম্পের পোস্টার হাতে নির্লিপ্তভাবে সেখানে দাঁড়িয়েছিল। বিশ্লেষকরা ঘটনা দুটিকে দেখছেন দুপক্ষের অন্তর্নিহিত মেজাজের প্রকাশ ও সহনশীলতার পরিমাপক হিসাবে। মূলধারার টিভি চ্যানেলগুলোর আলোচনায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পাচ্ছে এই দুটি ঘটনা এবং কারো কারো মতে এটি এক শ্রেণির ভোটারের মনেও রেখাপাত করবে।
এদিকে আর মাত্র দুটি রাত বাকি। পরের সকালেই ভোটগ্রহণ শুরু হবে দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর কেউই যে খুব সহজে এই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারছেন না তা এখন খুবই পরিষ্কার। ব্যাটলগ্রাউন্ড খ্যাত ১১টি রাজ্যের ১৪৬টি ইলেক্টোরাল ভোট নিয়েই তাদের যত মাথাব্যথা। এরমধ্যে ডনাল্ড ট্রাম্পের এগিয়ে থাকা ফ্লোরিডা, ওহাইয়ো এবং আইওয়া অঙ্গরাজ্যে সব মিলিয়ে ৫৩টি ইলেক্টোরাল ভোট। এই তিন রাজ্যে তিনি জিতে গেলেও চূড়ান্ত জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট থেকে তিনি অনেক দূরে থাকবেন। সে কারণেই নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও আইওয়ার মতো ছোট রাজ্যগুলোও চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে ফ্লোরিডায় নিজের অবস্থানের উন্নতি করা এবং একই সঙ্গে অধিক ইলেক্টোরাল ভোটের নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান ও ভার্জিনিয়ার মতো রাজ্যগুলোতে নিজের শক্তি ক্ষয় করছেন হিলারি ক্লিনটন। এছাড়া উইসকনসিন এবং কলরাডোও ছাড় দিতে নারাজ দু’জনের কেউই। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাটলগ্রাউন্ডের পরিণতি দেখতে ৮ই নভেম্বর রাত পর্যন্ত অপেক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *