এস. এম. মনিরুজ্জামান মিলন, রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ বাংলা লোকসংস্কৃতির বিশাল অংশ জুড়ে আছে পালাগান। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই পালাগানের অনুষ্ঠান এখন আর খুব বেশি চোখে পরেনা বললেই চলে। তবে দর্শক-শ্রোতাদের মাঝে এ গানের যে এখনও ব্যাপক আবেদন রয়েছে তার প্রমাণ মেলে ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত পালাগানের আসরগুলোতে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কালিপুজা উপলক্ষে ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রামাঞ্চলগুলোয় বেশ জমে উঠেছে পালাগানের অনুষ্ঠান। হিন্দু-মুসলিমসহ সকল ধর্মাবলম্বীর হাজার হাজার নারী-পুরুষের সমাগমে মুখরিত পালাগানের আসরগুলো। সন্ধ্যার পর শুরু হয়ে সারারাত চলে গীতসংবলিত নাটকের এই অনুষ্ঠান।
এক-দুইদিন স্থায়ীত্তের অনুষ্ঠান হলেও এগুলো ঘিরে গড়ে উঠা দোকানপাট ও লোক সমাগম মিলে একটি উৎসব মুখর মেলায় পরিণত হয়।
এসকল পালাগানে একজন মূল গায়েন বা বয়াতি থাকেন। তিনি দোহারদের সহযোগে গান পরিবেশন করেন। এ গান কাহিনীমূলক হওয়ায় তা কথোপকথন আকারে পরিবাশিত হয়। এক্ষেত্রে মূল গায়েনই বিভিন্ন চরিত্রে রুপদান করেন। কখনো কখনো দোহাররা তাকে এ কাজে সাহায্য করে। নাটকের আদর্শে সাজসজ্জাসহ এই চরিত্রগুলো মঞ্চে উপস্থিত হয়ে মনোরম একটি গীতসংবলিত নাটক পরিবেশন করে থাকে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জলেশ্বরীতলা পালাগানের পরিচালক সুকুমার দাস এই ঐতিহ্য বিলুপ্তির আশঙ্কা চিত্তে জানান, ঐতিহ্যবাহী এই পালাগান এখন বিলুপ্তির পথে। আজ থেকে এক যুগ আগেও ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় পালাগান অনুষ্ঠিত হত। সেখানে এখন এই জেলায় সবমিলে ২০-২৫ টি পালাগানের অনুষ্ঠান আয়োজন হয়। এখন পেশাদার গায়েন খুব কম। নতুন করে কেউ এই পেশায় আসার আগ্রহও দেখাচ্ছেনা। তাই ভাল পালাদল এখন বিলুপ্ত প্রায়। এই সকল আয়োজন এখন ব্যয় বহুল হয়ে পড়েছে। অর্থের অভাবে সকলে এই আয়োজন হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সরকার এগিয়ে আসলে এই সকল ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ধরে রাখা সম্ভব।