ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভারত বলছে, নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের হাতে একজন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ভারতীয় সেনারা। এতে পাকিস্তানি সেনাদের ৪টি পোস্টম ধ্বংস হয়ে গেছে বলে ভারত দাবি করছে। তাদের দাবি এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার কেরান সেক্টরে এ হামলা চালানো হয়। তবে একটি সূত্র বলেছে, এ সময়ে দু’পক্ষই গুলি বিনিময় করেছে। এতে উভয়পক্ষেই বেশ বেশ কিছু সেনা পোস্ট ও অনেক আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সূত্রটি সীমান্ত পরিস্থিতিকে বিস্ফোরণোন্মুখ বলে আখ্যায়িত করেন। অন্যদিকে শুক্রবার ভারতীয় সেনাদের গুলিতে নিয়ন্ত্রণ রেখায় নাকিয়ান ও টাটা পানি সেক্টরে তিন পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়েছেন। তারা হলেন সায়মা (২৫), আমনা (৭) ও আবদুল লতিফ (৫০)। এতে আহত হয়েছে ৬ জন। এসব খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানের অনলাইন ডন। এতে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদামপুরে অবস্থিত নর্দান কমনান্ড থেকে ইস্যু করা একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শনিবার শুধু কেরান সেক্টরেই তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কমপক্ষে ৪টি পোস্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উল্লেখ্য, শুক্রবার মাছিল সেক্টরে শিরñেদ করা অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর শিখ রেজিমেন্টের সদস্য মনজিত সিংয়ের দেহ। ভারতের দাবি, পাকিস্তানি সেনাসেনারা এই শিরশ্চেদে সন্ত্রাসীদের সহায়তা করেছিল। এ জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী হুমকি দেয়, যারা এ কাজ করেছে তাদের কাউকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে না। সূত্র বলেছে, নিয়ন্ত্রণ রেখাজুড়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনো প্ররোচণা দিলে বা যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করলে পূর্ণ শক্তি দিয়ে কার্যকরভাবে তার প্রতিশোধ নিতে হবে। একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, এরপর ভারতীয় সেনাবাহিনী মর্টার, হাল্কা ও ভারি মেশিন গান ও রকেট দিয়ে শনিবার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি পোস্টে আক্রমণ চালায়। তবে এতে তাদের পক্ষে কি পরিমাণ হতাহত হয়েছে তা জানা যায় নি। ওদিকে অনলাইন ডন লিখেছে, শুক্রবার ভারতীয় সেনারা নিয়ন্ত্রণ রেখায় নাকিয়াল ও টাটা পানি সেক্টরে প্রকাশ্যে গুলি চালায়। এতে তিন পাকিস্তানি নিহত হন। কোনো উস্কানি ছাড়াই বেসামরিক লোকজনকে টার্গেট করে ভারত এ হামলা চালিয়েছে বলে পাকিস্তানি এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন। ওদিকে আইএসপিআর একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভারত দাবি তারা ওয়ার্কিং বর্ডারে পাকিস্তানি সেনাদের হত্যা করেছে। এ দাবিকে মিথ্যা ও ভিত্তিহিন বলে আখ্যায়িত করেছে আইএসপিআর। এতে বলা হয়, ওয়াকিং বর্ডারে নিজেদের পরাজয় লুকাতে বারত এমন প্রচারণা চালায়। এর মাধ্যমে তারা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি থেকে কাশ্মির ইস্যুটিকে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শুক্রবার ভারতীয় মিডিয়া ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের বক্তব্য প্রচার করে। তাতে বলা হয়, সীমান্তে গোলাগুলির সময় পাকিস্তান রেঞ্জারর্সের ১৫ সদস্যকে তারা হত্যা করেছে। ইসলামাবাদে নিয়োজিত ভারতীয় হাই কমিশনার সুরজিত সিংকে ২৯শে আগস্টের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেয়ার কয়েক ঘন্টা পর ভারত এমন দাবি করে। এসব ঘটনায় কাশ্মির ইস্যুকে কেন্দ্র করে আবার নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বাড়ছে। গত মাসে কাশ্মিরের উরিতে অবস্থিত ভারতীয় সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে নিঃসঙ্গ করে ফেলার উদ্যোগ নেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর ফলেই দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। অবনতি হয় পরিস্থিতির। উরি হামলার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং পাকিস্তানকে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে আখ্যায়িত করেন। উরি হামলায় পাকিস্তান জড়িত বলেও তিনি দাবি করেন।