আলোচনায় নির্বাচন কমিশন

Slider রাজনীতি

37863_f1

 

 

ঢাকা; জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনায় নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টি। এ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ার দিকে দৃষ্টি রয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের। গত জাতীয় নির্বাচন ও পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে তুমুল
সমালোচনা কুড়ানো বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে খোদ সরকারি শিবিরেই। এমন অবস্থায় নতুন কমিশন গঠনে কি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে কিনা এমন আলোচনা রয়েছে দলগুলোর মধ্যেও। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নিজস্ব ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবেন। এটি তার এখতিয়ার। এ বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা এটি প্রেসিডেন্টই ঠিক করবেন। কমিশন গঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের তরফে আলোচনার সুযোগ নেই বলেও মনে করছেন নেতারা। তবে বিরোধী জোট বিএনপির নেতৃত্বাধীন  ২০ দল দাবি করে আসছে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে সব দলের মধ্যে আলোচনার। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার দাবি না করলেও তারাও চায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হবে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে বিদ্যমান নির্দেশনা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিয়ে পরবর্তীতে তা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। কারণ সংবিধানে এ বিষয়ে আইন করার কথা বলা আছে। আইনের মাধ্যমে ইসি গঠিত হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে বিদ্যমান অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতাও কেটে যাবে। গত জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা বর্তমান নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী সার্চ কমিটির মাধ্যমে পুনর্গঠিত হয়েছিল। এ কমিশন গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান। ওই সময়ে গঠিত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের কমিশন ২০১২ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরে আরো একজন যুক্ত হন। সংবিধান অনুযায়ী কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর। এ হিসাবে আগামী বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এ ছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় নতুন কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও আগ্রহ বেশি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে সব দল অংশ না নেয়ায় ওই নির্বাচন দেশে বিদেশে ব্যাপক সমালোচিত হয়। ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যে ভূমিকা নেয়ার কথা ছিল কমিশন অনেক ক্ষেত্রে তাতে ব্যর্থ হয়। পরে যে কয়টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে তাতেও কমিশন সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারেনি। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় আলোচনা ছাড়া গঠিত কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না এমনটি মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলো। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। দলের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্বাচনে দলীয় সাফল্য অর্জনে এখন থেকেই নেতাকর্মীদের কাজ শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। দলের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানিয়েছেন, এখন থেকেই তারা নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট উদ্যোগ নেবেন। এ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন নেই। বিএনপি আলোচনার সুযোগ আগেই নষ্ট করেছে বলে দাবি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের।
এদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দাবি না তুললেও দলটির দাবি এমন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠন করতে হবে যাতে কোনো  ধরনের বিতর্ক তৈরি না হয়। দলটির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানিয়েছেন, বর্তমান কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ধরনের কমিশন দিয়ে জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের ওপর বিশ্ব সম্প্রদায়েরও দৃষ্টি রয়েছে। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে। কমিশন গঠন নিয়ে সংস্থাটির সদরদপ্তরে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ কমিশনের বৈঠকে আলোচনার কথা রয়েছে। আগামী ২০শে ডিসেম্বর ব্রাসেলসে এ বৈঠকটি হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে ইইউসহ দাতা সংস্থা বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও পরামর্শ দিয়ে আসছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিতর্ক এড়াতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনার পরামর্শ নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, আলোচনা করে প্রক্রিয়া ঠিক করলে অহেতুক বিতর্ক এড়ানো যাবে। সম্প্রতি কমিশন গঠন বিষয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে কমিশন গঠন হলে এ নিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে। অনেক দেশে এটিই করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় কমিশন হলে এটি একটি ভালো নজির হবে। নির্বাচন নিয়ে কাজ করা সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, আইন প্রণয়ন করে কমিশন গঠন করতে হবে। আর এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *