আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ভাবীর শ্লীলতাহানি করে ধর্ষণের চেষ্টা মামলায় দেবরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের অব্যাহত চাপের মুখে ওই গৃহবধূ বর্তমানে বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। মামলা প্রত্যাহারের অব্যাহত চাপে ওই নির্যাতিতা গৃহবধূ চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খান মো. আব্দুল হক এজাহারের বরাত দিয়ে জানান, উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের নাঘিরপাড় গ্রামের পরিমল ঘরামী চাকুরীর সুবাদে ঢাকা থাকায় তার স্ত্রী পু®প রানী (৩২) ছয় ও দু’বছরের দু’টি শিশু কন্যা নিয়ে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। স্বামীর অনুপস্থিতিতে একই বাড়ির লালমোহন ঘরামীর ছেলে দেবর বিধান ঘরামী (৪০) প্রায়ই পু®পকে বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তার কুপ্রস্তাবে পু®প সাড়া না দেয়ায় রোববার দুপুরে পু®পকে একা ঘরে পেয়ে বিধান ওই গৃহবধূর শ্লীলতাহানি ঘটিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। পু®পর ডাকচিৎকারে পাশের ঘরের বিবেক ঘরামীর স্ত্রী উষা রানী এগিয়ে এসে পু®পকে উদ্ধার করে। এঘটনায় রোববার রাতে নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে বিধানকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন, নং- ৭ (২৩-১০-২০১৬)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খান মো. আব্দুল হক রাতেই অভিযুক্ত বিধান ঘরামীকে গ্রেফতার করেন। বিধান গ্রেফতারের পর আওয়ামীলীগ নেতা এআর ফারুক বক্তিয়ার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা স্বপন বৈদ্যসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাদীকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করে। তাদের অব্যাহত চাপের মুখে নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ স্বামীর বাড়ি ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে বাবার বাড়ি উজিরপুর উপজেলার কারফা গ্রামে অবস্থান করছে। গ্রেফতারকৃত বিধানকে গতকাল সোমবার সকালে বরিশাল আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
স্বামীর নির্যাতনে গৃহবধূর মৃত্যু ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মামলা :
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জঙ্গি স্বামীর নির্যাতনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত গৃহবধু পাখি বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুলিশ বাদী হয়ে স্বামীসহ ৪জনের বিরুদ্ধে হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে মামলা দায়ের। ছয়মাস পর ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে।
থানা পুলিশ, এজাহার ও নিহত পাখির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলা প্রশাস ড. গাজী সাইফুজ্জামানের নির্দেশে গতকাল সোমবার দুপুরে আগৈলঝাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শতরূপা তালুকদারের উপস্থিতিতে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল মারা যাওয়া গৃহবধূ শিরিন আক্তার পাখির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। এসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গৌরনদী থানার এসআই ফোরকান উপস্থিত ছিলেন। এর আগে স্বামীর নির্যাতনেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বরিশালের আগৈলঝাড়ার শিরিন আক্তার পাখির লাশের ময়নাতদন্ত না করে দাফন করার সংবাদে পুলিশের মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। আইজিপি’র নির্দেশ পেয়ে আগৈলঝাড়া থানার এসআই হাবিবুর রহমান ঘটনার তদন্ত করে পাষন্ড জঙ্গি স্বামীর নির্যাতনেই শিরিন আক্তার পাখির মৃত্যুর সত্যতা পেয়ে জুলাই মাসের শেষদিকে উর্ধতন কর্মকর্তার মাধ্যমে পুলিশের হেড কোয়ার্টারে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি সংবাদ ২৭ জুলাই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গৌরনদী মডেল থানার এসআই মো. লোকমান হোসেন ৯ জুলাই নিহত পাখির জঙ্গি স্বামী রুহুল আমিন খোকনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৩০২ ও ২০১ ধারায় মামলা দায়ের করেন, মামলা নং- ৩। পুলিশের মামলা দায়েরের পর পাখির লাশের ময়নাতদন্তের জন্য জেলা প্রশাসক ড. গাজী সাইফুজ্জামানের নির্দেশে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে গতকাল সোমবার দুপুরে পাখি বেগমের মৃত্যুর ৬ মাস ৯ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়। গতকালই ময়নাতদন্তের জন্য লাশ বরিশাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, আগৈলঝাড়া উপজেলার কালুপাড়া গ্রামের ইউসুফ ফকিরের ছেলে নিহত শিরিন আক্তার পাখির ভাই মনির উদ্দিন হাফিজ জানান, তার বোন দু’সন্তানের জননী পাখিকে গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী গ্রামের নুরুল ইসলাম সরদারের ছেলে রুহুল আমিন খোকনের সাথে সামাজিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর থেকে খোকন ও তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুক হিসেবে পাখির কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে আসছিল। তাদের চাহিদানুযায়ী টাকা দিতে না পারায় তার বোনকে প্রায়ই নির্যাতন করা হত। সর্বশেষ একটি তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে চলতি বছরের ২৪ মার্চ পাষন্ড স্বামী খোকন পাখিকে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যার উদ্যেশ্যে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে। এর আগে খোকনের চাচাতো ভাই সোলেমানের ছেলে রুমানকেও বেধরক মারধর করে খোকন। বাড়ির লোকজনে গুরুতর অবস্থায় পাখিকে উদ্ধার করে প্রথমে গৌরনদী ও পরে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২১ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ১৫ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেলে শিরিন আক্তার পাখির মৃত্যুর পরেই ঘাতক স্বামী খোকন হাসপাতালে স্ত্রীর লাশ ফেলে পালিয়ে যায়।
সূত্র আরও জানায়, নিহত পাখির ঘাতক স্বামী প্রথমে তাবলিগ জামাতের সাখে জড়িত ছিল। পরে সে জঙ্গি গোষ্ঠির সাথে জড়িয়ে পরে। স্ত্রী হত্যার পর থেকে সে অদ্যাবধি নিখোঁজ রয়েছে। পাখির মৃত্যুর পর ওই দিনই ঢাকার শাহবাগ থানার এসআই মোস্তাফিজ একটি জিডি করেন (নং- ৮৬৪)। ওই এসআই জিডি সূত্রে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করলেও রহস্যজনক কারণে লাশের ময়নাতদন্ত করাননি।
মনির উদ্দিন হাফিজ অভিযোগ করেন, এসআই মোস্তাফিজ তাকে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি সাদা কাগজে মুচলেকা রেখে লাশ বাড়ি নিয়ে দাফন করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী ময়নাতদন্ত ছাড়াই পাখির লাশ তার বাবার বাড়ি আগৈলঝাড়ার কালুপাড়া গ্রামে দাফন করা হয়। এনিয়ে বিভিন্ন দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পর পুলিশের মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহিদুল হক প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে ঘটনা তদন্তের জন্য আগৈলঝাড়া থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পর থানা পুলিশের তদন্তে নির্যাতনে গৃহবধূ শিরিন আক্তার পাখির মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
আগৈলঝাড়ায় বিরল ঘটনা : স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করলো স্বামী
(বরিশাল) থেকে : সারাদেশে স্ত্রীরা স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করলেও বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এই প্রথম স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর যৌতুক মামলা দায়ের। মামলাটি তদন্তের জন্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নিদের্শ দিয়েছেন আদালত।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের পূর্ব সুজনকাঠী গ্রামের কার্তিক সুতারের ছেলে কমল সুতার প্রেম করে পরিবারের অমতে উজিরপুর উপজেলার পরিমল হালদারের মেয়ে কবিতা হালদারকে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করে। বিয়ের পর কবিতা বিভিন্ন কারনে-অকারনে পিতার বাড়িতে থাকতেন। ওই সময় পিতা পরিমল হালদার, মা শীলা রানী ও ভাই রিপন কুপরামর্শ দেয় কবিতাকে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর স্ত্রী কবিতাকে আনতে কমল সুতার শ্বশুর বাড়ি যায়। কমলকে দেখে শ্যালক রিপন, শাশুড়ী শীলা রানী অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে এবং খুনের হুমকি দেয়। পরে কবিতার পরিবার থেকে কমলকে বলা হয়, কবিতার সাথে সংসার করতে হলে ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে। কমল টাকা দিতে অস্বীকার করায় স্ত্রী কবিতা সংসার করবেনা বলে তাকে ওই বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে ১০ অক্টোবর উভয় পরিবার কমল সুতারের বাড়িতে এক সালিশ-মিমাংসায় বসা হলে কবিতার পরিবার জানায়, তাদের দাবিকৃত ২ লক্ষ টাকা যৌতুক দিতে হবে। এ ঘটনায় কবিতার স্বামী কমল সুতার বাদী হয়ে সোমবার বরিশাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্ত্রী কবিতাসহ ৪ জনকে আসামী করে যৌতুক মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারক মো. শিহাবুল ইসলাম মামলাটি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার আদেশ দেন।
হেমায়েত বাহিনীর প্রধান হেমায়েত হোসেন (বীর বিক্রম)’র মৃত্যুতে
আগৈলঝাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন মহলের শোক
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার ও হেমায়েত বাহিনীর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত হোসেন (৭৮) বীর বিক্রম আর নেই। খবরটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আগৈলঝাড়া তথা বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার সহযোদ্ধাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সোমবার মরহুম মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত হোসেন (বীর বিক্রম)’র নামাজে জানাজা শেষে নিজবাড়ি কোটালীপাড়ায় দাফন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত হোসেনের জানাজায় দল-মত নির্বিশেষ রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ শেষবারের মত প্রিয় মানুষটিকে এক নজর দেখার জন্য জানাজায় জনতার ঢল নামে। মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েতের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান, বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি, সাবেক চিফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বেগম শাহান আরা, জেলা আওয়ামীলীগের নির্বাহী সদস্য সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহ, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আ. রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা আওয়ামীলীগ সমন্বয়কারী আবু সালেহ মো. লিটন সেরনিয়াবাত, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড আহ্বায়ক লিটন আব্দুল্লাহ, গৈলা ইউপি চেয়ারম্যান সোয়েব ইমতিয়াজ লিমন প্রমুখ।
মোবাইল- ০১৭১১-০৯২৮৭১৫, ০১৭১২-৬৪৯২৬৯,
০১৯১২-৩৪৬৪৮৪, ০১৬২৬-৫৩০২৭৭।
ই-মেইল- হবংি.ধষংধৎশবৎ@মসধরষ.পড়স