ঢাকা; রাত পোহালেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হবে আওয়ামী লীগের বহুল আলোচিত দু’দিন ব্যাপী ২০তম জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিলকে ঘিরে নেতৃত্ব নিয়ে একদিকে তৈরি হয়েছে প্রত্যাশা অন্যদিকে রয়েছে শঙ্কা। দলটির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে নতুন নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেয়ার। নেতৃত্বের বীজ বপনের। এ থেকে তরুণ ও নবীন নেতারা প্রত্যাশার বীজ বুনেছেন নিজেদের নিয়ে। দলের প্রতি তাদের অবদান মূল্যায়ন হবে এটাই তাদের বিশ্বাস। অন্যদিকে তরুণদের জায়গা দিতে হলে ছাড়তে হবে পুরণোদের। তাই শঙ্কায় পড়েছেন অনেক সিনিয়র ও প্রবীণ নেতা। এসব নিয়ে নীরবে তাদের দৌড়ঝাঁপ সবচেয়ে বেশি আলোচিত। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে প্রকাশ্যে কেউ কোনো পদে প্রার্থী হিসেবে নিজেকে জাহির করেননি। এটাকেই সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। তারা জানান, প্রকাশ্যে প্রার্থী হলে দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিং দেখা দিতো। এতে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতো দলটি। অতীতে এর বিক্ষিপ্ত উদাহরণও রয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও বড় ধরনের ধাক্কা খেতে হতো দলটিকে। তাই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার পদ নিয়ে কেউ মাতামাতি করেননি। তবে দলের সবচেয়ে আলোচিত সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে কিছুদিন দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়তি উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে গুঞ্জন তোলা হয়েছিল। এ নিয়ে জল ঘোলার আগেই দুজনের পক্ষ থেকে জানানো হয় তারা কেউই সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য প্রার্থী নন। ১৩ই অক্টোবর এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। দপ্তর উপ-কমিটির বৈঠকে তিনি জানান, জাতীয় সম্মেলনে কোনো নেতার পক্ষে মোসাহেবি-চামচামি করে তার ক্ষতি করবেন না। আমরা কেউ কারো প্রতিদ্বন্দ্বী না। কেউ প্রার্থী না। তিনি বলেন, নেত্রী কাকে কোন পদে রাখবেন সেটা কি আপনি জানেন? আর ওই ব্যক্তি যদি আপনার কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে থাকেন, তাহলেতো আপনি ভিকটিম হয়ে যাবেন। দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও ঘনিষ্ঠজনদের তিনি বিষয়টি নিয়ে মাতামাতি না করার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, দলের কাউন্সিলে এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে। এদিকে কাউন্সিলে দলের মূল্যায়ন পাবেন এমন অন্তত এক ডজন নেতা রয়েছেন প্রত্যাশায়। এদের কেউ কেউ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, সরকারের পাশাপাশি দলের জন্য তারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। সময় দিয়েছেন অনেক। দলীয় সভানেত্রী এসব তথ্য জানেন। তাই প্রত্যাশা রয়েছে দল তাদের মূল্যায়ন করবে। এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস সবচেয়ে বেশি। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই ধানমন্ডিতে দলটির কার্যালয়ে বেড়েছে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। কার্যালয়ের সামনের রাস্তা, অফিসের বাইরে বসার জায়গা ও সভাকক্ষে যাদের দেখা যায়, তারা বেশির ভাগই উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ও এ পদ প্রত্যাশী সাবেক ছাত্রনেতা। তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহাসিক দল। দলটি কখনই নেতা ও নেতৃত্ব নির্বাচনে ভুল করেনি। এবারের কাউন্সিলেও ভুল হবে না। তারা জানান, দলের সবচেয়ে বড় সম্পদ হিসেবে আছেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে দল দিন দিন আরো বিকশিত হচ্ছে। সংগঠিত হচ্ছে দলীয় নেতা-কর্মীরা। এবারের কাউন্সিল দলকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করবে বলে মনে করছেন তারা। আর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আগামী নির্বাচনে। কাউন্সিল প্রসঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে দলের সভাপতি বলেন, কাউন্সিলের লক্ষ্য হবে দল পুনর্গঠন করে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। সাধারণত যে কোনো দলের সম্মেলনে দুটি বিষয় গুরুত্ব দেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে- সাংগঠনিক অর্থাৎ, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব বিকশিত করার প্রক্রিয়া শুরু করা এবং দলের নীতি-আদর্শ ঠিক করা। দলীয় নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, এই দুই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এবারের কাউন্সিল সফল হবে। ১৯৪৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে ১৯টি সম্মেলন হয়েছে এর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দল এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রের নীতিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার এই ৬৭ বছরে প্রায় ৩০ বছর সামরিক বা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিল। এ সময়ের মধ্যে ক্ষমতাসীন অবস্থায় আওয়ামী লীগ সম্মেলন করেছে ছয়বার আর ১৩টি সম্মেলন হয়েছে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়। প্রচণ্ড বৈরী পরিবেশে ১৯৪৯ সালে কর্মী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দলটি আত্মপ্রকাশ করে। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগেরই একটি প্রগতিশীল অংশ এ সম্মেলনের আয়োজন করে। ১৯৫৩ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলন ছিল নির্বাচন সামনে রেখে।
তিন সদস্যের কমিশন গঠন
২০তম সম্মেলন উপলক্ষে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির কার্য নির্বাহী সংসদের সভায় এ কমিশন গঠন করা হয়। গঠিত কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মশিউর রহমান। অপর দুই কমিশনার হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য রাশেদুল আলম। এদিকে সম্মেলনে কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দিচ্ছেন না বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। ঢাকা উত্তরের কাউন্সিলর হিসেবে ববির নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। আর শেখ রেহানার সঙ্গে পুতুলের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল ঢাকা দক্ষিণের কাউন্সিলর হিসেবে। বুধবার তারা কাউন্সিলর পদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আল হানিফ সাংবাদিকদের জানান, তারা যে দুটি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন, সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা যুক্ত থাকতে পারেন না। তাই তারা কাউন্সিলর পদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তিন সদস্যের কমিশন গঠন
২০তম সম্মেলন উপলক্ষে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির কার্য নির্বাহী সংসদের সভায় এ কমিশন গঠন করা হয়। গঠিত কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. মশিউর রহমান। অপর দুই কমিশনার হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ও পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য রাশেদুল আলম। এদিকে সম্মেলনে কাউন্সিলর হিসেবে যোগ দিচ্ছেন না বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা হোসেন পুতুল ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। ঢাকা উত্তরের কাউন্সিলর হিসেবে ববির নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। আর শেখ রেহানার সঙ্গে পুতুলের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল ঢাকা দক্ষিণের কাউন্সিলর হিসেবে। বুধবার তারা কাউন্সিলর পদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আল হানিফ সাংবাদিকদের জানান, তারা যে দুটি প্রতিষ্ঠানে যুক্ত আছেন, সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তারা যুক্ত থাকতে পারেন না। তাই তারা কাউন্সিলর পদ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।