ঢাকা; এ এক অমানবিক চিত্র। দু’টি মেয়ে রাস্তার ওপরে বখাটের মার খাচ্ছে। পরনে তাদের কলেজ ড্রেস। এ দৃশ্য ঘিরে তখন শত মানুষ! মেয়ে দু’টি কাকুতি-মিনতি করছে। কান্নাকাটি করছে, বলছে- একটু ফোনটা দেন প্লিজ! বাবাকে ফোন করবো। কিন্তু তাদের এই অসহায় আবেদন যেন কারোর কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে না। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার তাগিদও ছিলো না কারোর মধ্যে। সবাই তখন কলেজপড়ুয়া মেয়ে দু’টির ওপর বখাটের নির্মম নির্যাতনের দৃশ্য উপভোগ করতে ব্যস্ত। কেউ মোবাইলে ছবি তুলছে। আবার কেউ করছে ভিডিও। এ যেন সিনেমার শুটিং।
গত বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটে মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডের বিসিআইসি কলেজের সামনে। এ চিত্র এতই নির্মম ছিলো যে, সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রীতিমতো চমকে ওঠেন নির্যাতনের শিকার দুই যমজ বোন ফারিহা হাবিব মিম ও আসওয়াত হাবিব জিম। বলেন, কাকুতি-মিনতি ও কান্নাকাটি করে সহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। মনে হয়েছে, এখানে কোনো এক সিনেমার শুটিং চলছে, আমরা দুই বোন তাতে অভিনয় করছি। উল্টো কেউ কেউ আমাদের দু’বোনকেই দোষারোপ করেছে। এমন কথাও বলেছে- মেয়ে মানুষ, তোমাদের ঝামেলায় জড়ানো দরকার কি?
গতকাল মণিপুর এলাকার ভাড়া বাসায় মিম ও জিমের সঙ্গে কথা হয়। তারা দু’বোন বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে দু’বোন। ছোট বোন জিমের বাম পায়ে ব্যান্ডেজ। বখাটের বাঁশের আঘাতে পা’টি ভেঙে গেছে তার। মুখ-গাল ফুলে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালসিটে পড়ে গেছে তার। আর বড় বোন মিমের বাম সারা শরীরেই রক্ত জমাট বাঁধার মতো ছোপ ছোপ দাগ। বুধবার রাতেই দু’বার এক্স-রে করানো হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, তার কোমর ও উরুর মাংস থেঁতলে গেছে। ব্যথায় দু’বোনের কেউই নড়াচড়া করতে পারছেন না। যমজ দু’বোনের বাবা আহসান হাবিব বলেন, আমার মেয়ে প্রথমে ১১টা ২৯ মিনিটে ফোন দিয়ে তাদের মারধরের কথা জানায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যায়। একটু পরে আবারো ফোন দিয়ে বলে, বাবা, তুমি তাড়াতাড়ি এসো, না হলে ওরা আমাদের মেরে ফেলবে। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে জিম-মিমের সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা গতকাল বিসিআইসি কলেজের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর চালায়। অন্যদিকে বুধবার দুপুরেই বখাটে জীবন করিম বাবুকে আসামি করে জিম-মিমের বাবা আহসান হাবিব মিরপুর মডেল থানায় নারী-নির্যাতন ও ইভটিজিংয়ের দায়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর জীবন করিম বাবু পালিয়ে গেলেও কলেজের শিক্ষার্থীরা তার এক সহযোগী লুৎফর রহমান বাবুকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
মিম ও জিম জানান, বুধবার ক্লাস শেষে ১১টা ১০ মিনিটের দিকে তারা দু’বোন কলেজ থেকে বের হন। পরে রাস্তা পার হয়ে বাসের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। কিন্তু বাস না পাওয়ায় তারা ফুটপাত ধরে বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। ছোট বোন জিম ছিলেন সামনে। মিম দ্রুত হাঁটতে না পারায় পিছনে পড়ে যান। ফুটপাতের পাশে অহনা ফাস্ট ফুড ও খাবার হোটেলের সামনে অনেক মেয়েকেই ইভটিজিং করছিলো জীবন করিম নামের এক বখাটে। মিম হোটেলের সামনে পৌঁছালে তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ফার্মের মুরগি’ বলে ইভটিজিং করে। এ সময় সে পেছন ফিরে তাকালে হোটেলের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসে বখাটে জীবন। শাসিয়ে মিমের মুখের কাছে মুখ নিয়ে কৈয়ফিয়ত চায় কেন তার দিকে তাকালো। পরে সরে গিয়ে মিম জানতে চান, কেন তাকে ইভটিজিং করলো। এ সময় জীবন তাকে অশ্লীল সম্বোধন করে বলে, বলেছি তো কি হয়েছে। তুই কি করবি? পরে মারমুখি ভঙ্গি নিলে মিম তার ছোট বোন জিমকে ডাকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বখাটে তার মুখে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। পড়ে যাওয়ার পর পেটে উপর্যুপরি লাথি মারতে থাকে। এ সময় ছোট বোন ছুটে এলে তাকেও বেধড়ক মারতে থাকে। তাকেও মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি লাথি মারতে থাকে। এ সময় সেখানে ৭০-৮০ জন মানুষ জড়ো হয়। কিন্তু কেউ তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। তারা কাকুতি-মিনতি করে জড়ো হওয়া লোকজনের কাছে মোবাইল চান তাদের বাবাকে ফোন করার জন্য। কিন্তু কেউ তাদের ফোন দেয়নি। সবাই যে যার মতো ছবি তুলছিলো, ভিডিও করছিলো। এই সময় ওই কলেজের তিতাস নামে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র এগিয়ে এসে তাদের ফোন দেয়। জিম তার বাবাকে ঘটনা জানিয়ে দ্রুত আসতে বলেন। তিতাস তাদেরকে কলেজের গেটের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু মুহূর্তেই জীবন বাঁশ নিয়ে দৌড়ে গিয়ে কলেজের গেটের সামনে ছোট বোন জিমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বড় বোন মিমকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। তার কোমরে ও পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে সে জিমের মাথায় বাঁশ দিয়ে সজোরে আঘাত করতে গেলে মিম উঠেই তা ঠেকায়। মিম বলেন, জীবন জিমের মাথার ওপর বাড়ি দিতে যাচ্ছিলো। এ সময় আমি হাত দিয়ে তা ঠেকায়। আমার হাতে প্রচণ্ড আঘাত পাই। জীবন বলছিল, তোদের আজ মেরেই ফেলবো। উপস্থিত অনেকে জীবনকে বাধা না দিলেও তারা বলছিলো- আর মারিস না। মিমের চশমা ভেঙে কেটে যায়। জীবনকে ঠেকানোর চেষ্টা না করলেও তারা বলে- তোমরা মেয়ে মানুষ, এতো ঝামেলায় জড়াও কেন? চশমা চোখে এক মহিলা চিৎকার করে গালিগালাজ করে বলে, আমার ছেলের কোনো দোষ নেই। এরাই খারাপ। তাদের ধারণা এই মহিলা বখাটে জীবনের মা। এছাড়া লুৎফর রহমান বাবু নামে একজনও তাদেরকে মারধর করতে যায়। তখন আবারো বাবাকে ফোন দিই। এরই মধ্যে সেখানে কলেজের শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে। বখাটে জীবন ও তার স্থানীয় সহযোগীদের হাতে বেশকয়েকজন ছাত্রও আহত হয়। জিম বলেন, জীবন পালিয়ে যায়। ছাত্ররা জানায়, তারা তাকে ধরতে চাইলেও অপর বখাটে লুৎফর তাকে পালাতে সাহায্য করে। সে তার পক্ষে সাফায় গাইতে থাকে। এ সময় তারা ওই বখাটেকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। কলেজের শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, মারধরের খবর পেয়ে আমি সেখানে গেলে বখাটেদের দলটি একজোট হয়ে আমার ওপরও চড়াও হয়। শারীরিক আঘাত না করলেও তারা বলে, এই মাস্টারের ছবি তুলে রাখ। তাকে পরে দেখে নেবো।
শিক্ষার্থীদের আন্দালন: এদিকে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বখাটে জীবনের দোকান ভাঙচুর করেছেন। গতকাল ১১টায় বিসিআইসি কলেজের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন চলাকালে শিক্ষার্থীরা এ ভাঙচুর করেন। মানববন্ধনে কলেজের প্রিন্সিপাল অশোক কুমার, ভাইস প্রিন্সিপাল আসরাফুল ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষকরা বখাটেদের শাস্তি দাবি করেন। মানববন্ধন চলাকালে কলেজের বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা একটি বাসও ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। তবে এর মধ্যে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে কলেজ প্রাঙ্গণে ফেরত পাঠায়। মানববন্ধন চলাকালে শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে প্রায় ১ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এদিকে ঘটনার একদিন পার হলেও বখাটেকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বখাটে জীবন করিমের মা লাইলী বেগম মুহুরীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। জীবন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পিপল্স ইউনিভার্সিটির ল’ এর শিক্ষার্থী।
প্রিন্সিপাল অশোক কুমার সাহা বলেন, আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব বখাটেরা ধরা পড়ুক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। আমাদের শিক্ষকরা বলছেন, মেয়ে দু’টো খুবই ভালো, নম্র-ভদ্র। তারা অবাক হচ্ছেন এমন মেয়েদের সঙ্গে সে কিভাবে এমন ঘটনা ঘটাতে পারলো। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং দাবি-দাওয়ার সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করেছি। প্রিন্সিপাল আরো বলেন, ফুটপাতের দোকানগুলো উচ্ছেদের জন্য ইতিপূর্বেও আমরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। মাঝে-মধ্যে উচ্ছেদ হলেও দু’একদিন পর আবারো বসানো হয়। এর পেছনো পুলিশ এবং এলাকার পাতি নেতাদের হাত রয়েছে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন। তাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারাও পান তারা। এখানে প্রায়ই বখাটেদের দ্বারা কলেজের মেয়েরা হেনস্তা হন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর চিড়িয়াখানা রোডের বিসিআইসি কলেজের একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রী মিম ও জিমকে বাঁশ দিয়ে পেটায় স্থানীয় বখাটেরা। তাদের পিটুনিতে দুই ছাত্রীর একজনের পা ভেঙে যায়। তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। এ ঘটনায় ওই দুই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে শাহ্ আলী থানায় একটি মামলা করেন।
গত বুধবার বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটে মিরপুরের চিড়িয়াখানা রোডের বিসিআইসি কলেজের সামনে। এ চিত্র এতই নির্মম ছিলো যে, সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রীতিমতো চমকে ওঠেন নির্যাতনের শিকার দুই যমজ বোন ফারিহা হাবিব মিম ও আসওয়াত হাবিব জিম। বলেন, কাকুতি-মিনতি ও কান্নাকাটি করে সহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। মনে হয়েছে, এখানে কোনো এক সিনেমার শুটিং চলছে, আমরা দুই বোন তাতে অভিনয় করছি। উল্টো কেউ কেউ আমাদের দু’বোনকেই দোষারোপ করেছে। এমন কথাও বলেছে- মেয়ে মানুষ, তোমাদের ঝামেলায় জড়ানো দরকার কি?
গতকাল মণিপুর এলাকার ভাড়া বাসায় মিম ও জিমের সঙ্গে কথা হয়। তারা দু’বোন বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন। বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে দু’বোন। ছোট বোন জিমের বাম পায়ে ব্যান্ডেজ। বখাটের বাঁশের আঘাতে পা’টি ভেঙে গেছে তার। মুখ-গাল ফুলে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালসিটে পড়ে গেছে তার। আর বড় বোন মিমের বাম সারা শরীরেই রক্ত জমাট বাঁধার মতো ছোপ ছোপ দাগ। বুধবার রাতেই দু’বার এক্স-রে করানো হয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, তার কোমর ও উরুর মাংস থেঁতলে গেছে। ব্যথায় দু’বোনের কেউই নড়াচড়া করতে পারছেন না। যমজ দু’বোনের বাবা আহসান হাবিব বলেন, আমার মেয়ে প্রথমে ১১টা ২৯ মিনিটে ফোন দিয়ে তাদের মারধরের কথা জানায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যায়। একটু পরে আবারো ফোন দিয়ে বলে, বাবা, তুমি তাড়াতাড়ি এসো, না হলে ওরা আমাদের মেরে ফেলবে। এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে জিম-মিমের সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা গতকাল বিসিআইসি কলেজের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর চালায়। অন্যদিকে বুধবার দুপুরেই বখাটে জীবন করিম বাবুকে আসামি করে জিম-মিমের বাবা আহসান হাবিব মিরপুর মডেল থানায় নারী-নির্যাতন ও ইভটিজিংয়ের দায়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পর জীবন করিম বাবু পালিয়ে গেলেও কলেজের শিক্ষার্থীরা তার এক সহযোগী লুৎফর রহমান বাবুকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
মিম ও জিম জানান, বুধবার ক্লাস শেষে ১১টা ১০ মিনিটের দিকে তারা দু’বোন কলেজ থেকে বের হন। পরে রাস্তা পার হয়ে বাসের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেন। কিন্তু বাস না পাওয়ায় তারা ফুটপাত ধরে বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। ছোট বোন জিম ছিলেন সামনে। মিম দ্রুত হাঁটতে না পারায় পিছনে পড়ে যান। ফুটপাতের পাশে অহনা ফাস্ট ফুড ও খাবার হোটেলের সামনে অনেক মেয়েকেই ইভটিজিং করছিলো জীবন করিম নামের এক বখাটে। মিম হোটেলের সামনে পৌঁছালে তাকে উদ্দেশ্য করে ‘ফার্মের মুরগি’ বলে ইভটিজিং করে। এ সময় সে পেছন ফিরে তাকালে হোটেলের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসে বখাটে জীবন। শাসিয়ে মিমের মুখের কাছে মুখ নিয়ে কৈয়ফিয়ত চায় কেন তার দিকে তাকালো। পরে সরে গিয়ে মিম জানতে চান, কেন তাকে ইভটিজিং করলো। এ সময় জীবন তাকে অশ্লীল সম্বোধন করে বলে, বলেছি তো কি হয়েছে। তুই কি করবি? পরে মারমুখি ভঙ্গি নিলে মিম তার ছোট বোন জিমকে ডাকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বখাটে তার মুখে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়। পড়ে যাওয়ার পর পেটে উপর্যুপরি লাথি মারতে থাকে। এ সময় ছোট বোন ছুটে এলে তাকেও বেধড়ক মারতে থাকে। তাকেও মাটিতে ফেলে এলোপাতাড়ি লাথি মারতে থাকে। এ সময় সেখানে ৭০-৮০ জন মানুষ জড়ো হয়। কিন্তু কেউ তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। তারা কাকুতি-মিনতি করে জড়ো হওয়া লোকজনের কাছে মোবাইল চান তাদের বাবাকে ফোন করার জন্য। কিন্তু কেউ তাদের ফোন দেয়নি। সবাই যে যার মতো ছবি তুলছিলো, ভিডিও করছিলো। এই সময় ওই কলেজের তিতাস নামে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র এগিয়ে এসে তাদের ফোন দেয়। জিম তার বাবাকে ঘটনা জানিয়ে দ্রুত আসতে বলেন। তিতাস তাদেরকে কলেজের গেটের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু মুহূর্তেই জীবন বাঁশ নিয়ে দৌড়ে গিয়ে কলেজের গেটের সামনে ছোট বোন জিমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে বড় বোন মিমকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। তার কোমরে ও পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরে সে জিমের মাথায় বাঁশ দিয়ে সজোরে আঘাত করতে গেলে মিম উঠেই তা ঠেকায়। মিম বলেন, জীবন জিমের মাথার ওপর বাড়ি দিতে যাচ্ছিলো। এ সময় আমি হাত দিয়ে তা ঠেকায়। আমার হাতে প্রচণ্ড আঘাত পাই। জীবন বলছিল, তোদের আজ মেরেই ফেলবো। উপস্থিত অনেকে জীবনকে বাধা না দিলেও তারা বলছিলো- আর মারিস না। মিমের চশমা ভেঙে কেটে যায়। জীবনকে ঠেকানোর চেষ্টা না করলেও তারা বলে- তোমরা মেয়ে মানুষ, এতো ঝামেলায় জড়াও কেন? চশমা চোখে এক মহিলা চিৎকার করে গালিগালাজ করে বলে, আমার ছেলের কোনো দোষ নেই। এরাই খারাপ। তাদের ধারণা এই মহিলা বখাটে জীবনের মা। এছাড়া লুৎফর রহমান বাবু নামে একজনও তাদেরকে মারধর করতে যায়। তখন আবারো বাবাকে ফোন দিই। এরই মধ্যে সেখানে কলেজের শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে। বখাটে জীবন ও তার স্থানীয় সহযোগীদের হাতে বেশকয়েকজন ছাত্রও আহত হয়। জিম বলেন, জীবন পালিয়ে যায়। ছাত্ররা জানায়, তারা তাকে ধরতে চাইলেও অপর বখাটে লুৎফর তাকে পালাতে সাহায্য করে। সে তার পক্ষে সাফায় গাইতে থাকে। এ সময় তারা ওই বখাটেকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। কলেজের শিক্ষক মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, মারধরের খবর পেয়ে আমি সেখানে গেলে বখাটেদের দলটি একজোট হয়ে আমার ওপরও চড়াও হয়। শারীরিক আঘাত না করলেও তারা বলে, এই মাস্টারের ছবি তুলে রাখ। তাকে পরে দেখে নেবো।
শিক্ষার্থীদের আন্দালন: এদিকে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বখাটে জীবনের দোকান ভাঙচুর করেছেন। গতকাল ১১টায় বিসিআইসি কলেজের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন চলাকালে শিক্ষার্থীরা এ ভাঙচুর করেন। মানববন্ধনে কলেজের প্রিন্সিপাল অশোক কুমার, ভাইস প্রিন্সিপাল আসরাফুল ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষকরা বখাটেদের শাস্তি দাবি করেন। মানববন্ধন চলাকালে কলেজের বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা একটি বাসও ভাঙচুরের চেষ্টা চালান। তবে এর মধ্যে পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে কলেজ প্রাঙ্গণে ফেরত পাঠায়। মানববন্ধন চলাকালে শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে প্রায় ১ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এদিকে ঘটনার একদিন পার হলেও বখাটেকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বখাটে জীবন করিমের মা লাইলী বেগম মুহুরীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। জীবন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পিপল্স ইউনিভার্সিটির ল’ এর শিক্ষার্থী।
প্রিন্সিপাল অশোক কুমার সাহা বলেন, আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব বখাটেরা ধরা পড়ুক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। আমাদের শিক্ষকরা বলছেন, মেয়ে দু’টো খুবই ভালো, নম্র-ভদ্র। তারা অবাক হচ্ছেন এমন মেয়েদের সঙ্গে সে কিভাবে এমন ঘটনা ঘটাতে পারলো। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং দাবি-দাওয়ার সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করেছি। প্রিন্সিপাল আরো বলেন, ফুটপাতের দোকানগুলো উচ্ছেদের জন্য ইতিপূর্বেও আমরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। মাঝে-মধ্যে উচ্ছেদ হলেও দু’একদিন পর আবারো বসানো হয়। এর পেছনো পুলিশ এবং এলাকার পাতি নেতাদের হাত রয়েছে বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন। তাদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারাও পান তারা। এখানে প্রায়ই বখাটেদের দ্বারা কলেজের মেয়েরা হেনস্তা হন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর চিড়িয়াখানা রোডের বিসিআইসি কলেজের একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রী মিম ও জিমকে বাঁশ দিয়ে পেটায় স্থানীয় বখাটেরা। তাদের পিটুনিতে দুই ছাত্রীর একজনের পা ভেঙে যায়। তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়। এ ঘটনায় ওই দুই শিক্ষার্থীর বাবা বাদী হয়ে শাহ্ আলী থানায় একটি মামলা করেন।