হাফিজুল ইসলাম লস্কর,সিলেট :: সিলেটের বড়লেখায় গত একমাসে পাঁচটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একটি খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটছে আরো একটি খুনের ঘটনা।
আওয়ামী লীগ নেতা প্যানেল চেয়ারম্যান আলম, ব্রিটিশ সিটিজেন বৃদ্ধা মহিলার পর সর্বশেষ গত শুক্রবার জমি নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে আপন ভাতিজার হাতে আসুক আহমদ (৩৬) নামের এক অটোরিকশাচালক নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করলেও সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ে কারণে এ ধরনের হত্যাকান্ড সংঘটিত হচ্ছে বলে সচেতন মহল মনে করেন। এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বাকিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাযায় , গত শুক্রবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামে দুপুর সাড়ে ১২টার জমি সংক্রান্ত পূর্ববিরোধের জেরে আপন ভাতিজার ছুরিকাঘাতে আসুক আহমদ (৩৬) নির্মমভাবে খুন হন। নিহত আসুক আহমদ কেছরিগুল গ্রামের মঈন উদ্দিন মনাইর ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজি চালিত অটোরিকশাচালক ছিলেন। ঘটনার পর পরই ভাতিজা সুমন আহমদ পালিয়ে যান। এ ঘটনায় থানায় মামালা হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, হত্যাকারী সুমন আহমদকে গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার দাসের বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম গুলুয়া গ্রামের মৃত ললিত মোহন দাসের স্ত্রী মায়া রানী দাসকে (৫৫) নিজ গৃহে ঢুকে কাঁচি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে ভাসুরপুত্র নিপেশ দাস সুনাই (২৫)। ঘটনার পর পরই এলাকাবাসী অভিযুক্ত নিপেশ দাস সুনাইকে (২৩) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সুনাই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গির আলম জানান, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে চাচি মায়া রানী দাসকে কুপিয়ে হত্যা করেন সুনাই। আদালতে তিনি চাচি মায়া রানী দাসকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে প্রকাশ্যে দিবালোকে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন প্যানেল চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন আলমকে (৩৮) দা দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন কাজল আহমদ (৪৭) নামে স্থানীয় এক সন্ত্রাসী। নিহত আবুল হোসেন আলম সায়পুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। এই ঘটনায় আবুল হোসেন আলমের বাবা খলিলুর রহমান রাতে কাজল মিয়াকে ১ নম্বর আসামি করে ও আরো চার-পাঁচজনকে জনকে অজ্ঞাতনামা রেখে বড়লেখা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পরদিন গত শুক্রবার ভোরে খুনি কাজল ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হন। পরে তাকে বড়লেখা থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। কাজল আদালতে এ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছেন। তবে এ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা আজও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। নিহতদের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে কাজলকে দিয়ে আলমকে খুন করা হয়েছে। এ ঘটনার পর মূল হোতাদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে।
১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার উপজেলার চান্দগ্রামের নিজ বাড়িতে ঈদের দিবাগত রাতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক ফাতির আলীর স্ত্রী প্রবাসী মায়ারুন নেছা (৬৬) পুত্রবধূর পরকীয়ার জেরে খুন হন। এ ঘটনায় মায়ারুন্নেছার দেবর হারিছ আলী বাদি হয়ে দু’জনের নামোল্লেখ ও আরো কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা রেখে থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় পুত্রবধূ ফাহিমা (২৮) ও ফাহাদ আহমদ সবুজ (২২) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করলেও ঘটনার মূল আসামিকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। পুত্রবধূ ফাহিমা ও ফাহাদ আহমদ সবুজ এ হত্যার ঘটনায় পৃথকভাবে বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাসান জামানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অমিতাভ দাস তালুকদার জানান, গৃহবধূ ফাহিমার স্বামীর অবর্তমানে জনৈক ব্যক্তির সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার রাতে শ্বাশুড়ি বিষয়টি টের পাওয়ায় তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। তিনি জানান, এই ঘটনার মূল আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একই দিন ১৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কোরবানির মাংস বন্টন নিয়ে প্রতিপক্ষের দায়ের কোপে কুতুব আলী নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনার পর পরই এলাকাবাসী হত্যাকারী আব্দুল জলিলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। পুলিশ জানায়, কোনো শত্রুতা ছাড়াই আব্দুল জলিল কুতুব আলীকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। জলিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ সহিদুর রহমান বলেন, উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালে যে কয়টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর প্রায় সবগুলোরই রহস্য উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। পৃথক এসব ঘটনার সাথে জড়িত চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।