ঢাকা; সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে রোববার রাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতীক্ষিত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষিক বিষয়ের পাশাপাশি সন্ত্রাস নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভ’য়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে দুই নেতা উন্নয়নের পথে একসঙ্গে চলার অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। সেই সঙ্গে দুই দেশ আগামী দিনেও পরস্পর পরস্পরের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছে। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে দুই নেতা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছেন। পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক সব সমস্যা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। তবে তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যু আলোচনায় না উঠলেও এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ আশাবাদী বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব। এদিন ব্রিকস ও বিমস্টেকের নেতাদের সম্মানে দেওয়া নৈশ ভোজ শেষে প্রধানমন্ত্রী মোদী নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এরপরেই তিনি বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ টুইট করে জানিয়েছেন, দিনের ব্যস্ত সময় কাটানোর শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেষপর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিকে এদিন বিমসটেক ও ব্রিকসের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ব্রিকস ও বিমসটেকের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য পারস্পরিক সম্ভাব্যতা ও যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণের এটাই সময়। গত রবিবার গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সম্মেলনে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তার প্রথম প্রস্তাব হল, মানসম্পন্ন ও টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তির জন্য বৃহত্তর সহযোগিতা কর্মসূচি চালু এবং তৃতীয়ত, স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সংলাপের প্রক্রিয়া শুরু করা। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনা টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ দমনে আমাদের সকলকে হাত মেলাতে হবে। ব্রিকস কাঠামোর অধীনে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর সম্ভাবনার প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার জন্য তিনি ব্রিকসের সদস্য দেশগুলির প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী সক্ষমতার উন্নয়নে বিমসটেক অঞ্চলের নজর দেয়ার প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ব এখন জ্ঞান অর্জনের প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করেছে। আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য চাষাবাদে প্রযুক্তি সুবিধা, পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, আমরা বিমসটেককে কিভাবে আরো কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে চাই এখন তা চিন্তা করার সময় এসেছে। বিমসটেকের আওতায় আমরা ১৪টি সহযোগিতার খাত চিহ্নিত করেছি। আমি মনে করি, আগামী ৫ বছর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি, যোগাযোগ এবং সন্ত্রাস দমনের মতো বিষয়গুলোর প্রতি আরো বেশি আলোকপাত করা দরকার। এজন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিয়মিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক জরুরি। সন্ত্রাসের বিষয়ে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, তার সরকার এ ব্যাপারে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে তিনি সন্ত্রাস ও সহিংসতা দমনে বিমস্টেকের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার উপর জোর দিয়েছেন। সোমবার সকালের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ফিরছেন বলে জানা গেছে।