ঢাকা; থাকতে না চাইলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই ‘আজীবন’ দলের সভানেত্রী হিসেবে চান আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁদের মতে, সরকার এবং দল চালাতে শেখ হাসিনা এখন দৃষ্টান্ত। তাঁর নেতৃত্বের বিকল্প নেই। গতকাল শনিবার এক বৈঠকে এমন কথা বলেছেন দলটির নেতারা।
আওয়ামী লীগের দুজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও একজন উপদেষ্টা বলেন, একটি দলের প্রধান যিনি হবেন, তাঁর প্রধান যোগ্যতা হতে হবে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের তাঁকে মানতে হবে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগে এমন যোগ্যতাসম্পন্ন কেবল শেখ হাসিনাই আছেন। তাই তাঁর থাকতে চাওয়া না-চাওয়াটা এখানে বিষয় নয়। দলের জন্যই তাঁকে আবারও সভাপতি থাকতেই হবে।
তবে ওই নেতারা এ-ও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার থাকতে না চাওয়ার বিষয়টির তাৎপর্য নেই তা নয়। বরং এটা স্পষ্ট যে তিনি ভবিষ্যতের জন্য বিকল্প কারও হাতে দলের হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। এটা দলের জন্যও ভালো। ওই নেতাদের মত হচ্ছে, আরও অন্তত ১০ বছর শেখ হাসিনাকেই সভানেত্রী পদে থাকতে হবে। এই সময়ের মধ্যে বিকল্প কাউকে ওই পদের জন্য তৈরি করা হবে।
গতকাল শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী যখন সভানেত্রী পদে না থাকার কথা বলেন, তখন প্রায় সব নেতাই এর বিরোধিতা করেন। অনেকে মুখে না বললেও মাথা নেড়ে না সূচক ইঙ্গিত দেন।
জাতীয় কমিটির খুলনা জেলার সদস্য চিশতি সোহরাব হোসেন লেন, গতকালের সভায় তিনি বলেছেন, ‘আপনি (শেখ হাসিনা) দলে না থাকতে চাইতেই পারেন। আমাদেরও অধিকার আছে আপনাকে ধরে রাখার। আওয়ামী লীগ আপনার হাতেই নিরাপদ।’
বৈঠকে উপস্থিত একজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, জাতীয় কমিটির যেসব সদস্য বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে বর্তমান পদে থাকার ব্যাপারে অনুরোধ করেছেন।
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে যে ঘোষণাপত্র করা হচ্ছে, সেখানেও ‘নেতৃত্বের কারিশমা-আওয়ামী লীগের প্রধান সম্পদ জননেত্রী শেখ হাসিনা’ নামে একটি অনুচ্ছেদ রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘শেখ হাসিনা দেশকে মর্যাদা ও সম্মানে বিশ্ব পরিমণ্ডলে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের শক্তি ও সম্পদ দুটোই।’ এরপরেই প্রধানমন্ত্রীর পাওয়া সব পুরস্কারের কথা ঘোষণাপত্রে তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ সম্মেলনে শেখ হাসিনা প্রথমবার সভানেত্রী নির্বাচিত হন। এরপরের সম্মেলনগুলোতে তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় টানা ৩৫ বছর দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
কেবল গতকালের জাতীয় কমিটির সভায় নয়, ২ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী সভানেত্রী না থাকার ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি বলেন, নতুন কেউ দলের দায়িত্ব নিলে তিনি খুশি হবেন।
প্রধানমন্ত্রীর দলীয় পদে থাকা না-থাকা নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের সঙ্গে। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগে বিশ্বাসযোগ্য ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নেতা বর্তমানে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ নেই। তাঁর বিকল্প কাউকে আওয়ামী লীগের কেউ এখনো ভাবেনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সুদূরপ্রসারী চিন্তা আছে, সে ক্ষেত্রে ওই পদে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারীর বাইরে যাওয়া উচিত হবে না।’
আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বলেন, তাঁরা কখনো কোনো সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানেও শেখ হাসিনার বিকল্প কাউকে নিয়ে আলাপ করেননি বা শোনেননি। তবে তাঁরা মনে করেন, দল ২০৪১ সালের ভিশন নিয়ে কাজ করছে। ফলে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবারের সম্মেলনে নতুন কাউকে এখনই তৈরি করা হতে পারে। তিনি ধীরে ধীরে সভাপতি হওয়ার যোগ্য হয়ে উঠলে তাঁর হাতে দলের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তবে ওই ব্যক্তি কে হতে পারেন, সেটা তাঁরা আভাস দিতে পারেননি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন, ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, জামাতা খন্দকার মাশরুর হোসেন বিভিন্ন জেলা ইউনিটের কাউন্সিলর হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেবেন। তাঁদের মধ্যে কেউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির দুজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেন, কাউন্সিলর হওয়ার অর্থ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি নয়। তাঁরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁদের অন্তর্ভুক্তি দলের জন্য সম্মানজনক। তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁরা আসবেন কি না, এটা সম্পূর্ণ সভানেত্রীর ওপর নির্ভর করছে।