গ্রাম বাংলা ডেস্ক:কি কারণে নির্বাসনের পথে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সে প্রশ্ন আলাদা। তিনি সুচিন্তিত ভাবেই বিতর্ক তৈরি করেছেন কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কিছু সামলিয়েছেন চমৎকারভাবেই। এ ইস্যুতে যেন কোন আন্দোলন তৈরি হতে না পারে কৌশলীভাবেই তিনি তা নিশ্চিত করেছেন। সংবাদ সম্মেলনেও পরিষ্কার করেছেন দায় লতিফ সিদ্দিকীকেই নিতে হবে, সরকার কোন দায় নেবে না। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনাও নাকচ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দৃশ্যত ঘরে-বাইরে পরিস্থিতি এখন পুরোটাই তার নিয়ন্ত্রণে। যদিও রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব থেমে নেই। অন্যদিকে, বিরোধী নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনও রয়েছেন অপেক্ষায়। একের পর এক ঈদের পর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েই যাচ্ছেন তিনি। যদিও স্পষ্টত বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আসলে এখনও আন্দোলনের কোন রোডম্যাপই তৈরি করতে পারেননি। আওয়ামী লীগের নতুন জমানায় বিএনপি কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। যদিও এসব কর্মসূচি নতুন নির্বাচনের দাবিতে নয়। বেগম খালেদা জিয়া আবারও সভা-সমাবেশের মতো কর্মসূচি শুরু করছেন। তবে এসব কর্মসূচি চূড়ান্ত কোন পরিণতি পায় কিনা তা দেখতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। ৫ই জানুয়ারির পরের বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা অবশ্যই ভিন্ন। নতুন কিসিমের গণতন্ত্র। আপস এবং নিয়ন্ত্রণের ফর্মুলা অনুসরণ করা হচ্ছে। কড়ি আর হুমকির বিনিময়ে সমঝোতা করেছে হেফাজত। জামায়াত ইসলামী অবশ্য এখনও রহস্যঘেরা। দলটির সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায় অবশ্য জামায়াত ও সরকার উভয়ের জন্যই স্বস্তি নিয়ে এসেছে। নির্বাচনের পরপর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দল গুছিয়ে আন্দোলনের কথা বলেছিলেন। যদিও সে সময় বিএনপির একটি অংশ আন্দোলন অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। এর আগে আন্দোলনে বিএনপির অনেক নেতার ভূমিকাই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। লন্ডন থেকে শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে টেলিফোনকথনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পালানোর কৌশল নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন তারেক রহমান। ২৯শে ডিসেম্বরের কর্মসূচি বিএনপি নেতাদের ভূমিকার জবাব এখনও পাওয়া যায়নি। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ঢাকায় এলেও কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর কমিটির নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তারা প্রকাশ্য হতে পারেননি। এ নেতারা অবশ্য এখনও বিএনপির নীতিনির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন। দল গোছানো বলতে ১০ মাসে ঢাকা মহানগর আহবায়ক কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। তবে এ কমিটি পূর্ণাঙ্গ নয়। কমিটি পূর্ণাঙ্গ হতে আর কত সময় লাগবে তা খোলাসা করে বলতে পারছেন না কেউই। ছাত্রদলের কমিটি চূড়ান্ত করে শেষ পর্যায়ে এসে সে কমিটি আর ঘোষণা করেননি খালেদা জিয়া। একসময় আন্দোলন-সংগ্রামে প্রধান ভূমিকা পালনকারী ছাত্রসংগঠনটি এখন বয়োবৃদ্ধ নেতাদের ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। মূলত সব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ধীরে চলছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। স্পষ্টভাবে দলটি এখন পর্যন্ত সরকারের পদত্যাগও দাবি করেনি। আন্দোলন কৌশল নিয়ে বিএনপিতে দুই ধরনের মত রয়েছে। দলটির নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ মনে করেন, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সরকার মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। এর জন্য তেমন কোন আন্দোলনের প্রয়োজন হবে না। আগামী বছরের শুরুর দিকে সে নির্বাচন হতে পারে বলে তাদের ধারণা। কিছুদিন আগে জোট নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে খালেদা জিয়া শরীকদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। অন্যদিকে, নীতিনির্ধারকদের আরেকটি অংশ মনে করেন কঠোর আন্দোলন ছাড়া সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করার বিকল্প কোন উপায় নেই। তবে বর্তমান সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বড় কোন আন্দোলন গড়ে তোলা যাবে কিনা সে ব্যাপারে তারা নিশ্চিত নন। চলমান প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া অপেক্ষার নীতিই অনুসরণ করছেন। জনসংযোগের মতো ঠাণ্ডা কর্মসূচি নিয়েই আপাতত এগোতে চাইছেন তিনি। তবে অপেক্ষার এ নীতি সবসময় ফল না-ও দিতে পারে। কারণ কৌশলী পথে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সঙ্কট মোকাবেলার পাশাপাশি পুরো পরিস্থিতিই সরকারের নিয়ন্ত্রণে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুও সরকার সামলাচ্ছে কৌশলগতভাবে। গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে তিন টুকরো করা হয়েছে। হেফাজত নিয়ন্ত্রণে। জামায়াত ধবংসপ্রায়। গণমাধ্যমও এখন সক্রিয় নেই অতীতের মতো। চলমান পরিস্থিতিতে বিরোধী নেতাদের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির দিকেই সর্বোচ্চ নজর দিয়েছে সরকার। সহিংসতার মামলা তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমপক্ষে ৭২৯ ‘রাজনৈতিক মামলায়’ এরই মধ্যে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এসব মামলার বড় অংশের চার্জগঠনও সম্পন্ন হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতা কেউই মামলার বাইরে নেই। আদালতের বারান্দায়ই বেশির ভাগ সময় কাটছে বিএনপি নেতাদের। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও দুই মামলায় এরই মধ্যে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আলীয়া মাদরাসায় এজন্য আদালতও বসানো হয়েছে। প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারের হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে। দৃশ্যত বাংলাদেশের রাজনীতি এখন একক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ নিয়ন্ত্রণ আরও পাকাপোক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। বিপরীতে বিরোধীরা রয়েছেন অপেক্ষা আর আশায়।