স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করলেন সি চিন পিং

Slider জাতীয় টপ নিউজ

b2e9eb73d4d48e56b8e8ecaf38c45fcb-ci

মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ শনিবার সকাল নয়টার পরে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পেঁৗছেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এরপর সকাল ১০টায় ভারতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে তাঁর।

ঢাকায় সাড়ে ২২ ঘণ্টার সফরে এসেই ব্যস্ত সময় পার করেছেন সি। বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে নৈশভোজে যোগদানের মধ্য দিয়ে গতকাল শুক্রবার রাত ১০টার দিকে দিনের কর্মসূচি শেষ করে নিজ হোটেলে ফেরেন তিনি।

গতকাল বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন চীনা প্রেসিডেন্ট। সেখান থেকে তিনি যান হোটেল লা মেরিডিয়ানে। দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসেন। সেখানে দুই নেতা বৈঠক করেন। এরপর সেখানেই একাধিক চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়। এরপর সেখান থেকে আবার হোটেলে ফেরেন তিনি। সেখানে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে বঙ্গভবনে নৈশভোজে অংশ নেন তিনি।

ঢাকা সফরে সি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায়। দুই নেতাই বলেছেন, নিজেদের মধ্যকার বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, আজকে হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় উপনীত হয়েছে। তাঁরা বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ‘সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বে’ নিয়ে যেতে রাজি হয়েছে।

শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে বৈঠক করেন সি। বৈঠকে রাষ্ট্রপতি চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চান তিনি।

হাসিনা-সি বৈঠক

শুক্রবার দুই নেতার আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর গণমাধ্যমের সামনে সি চিন পিং তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে চীন দীর্ঘস্থায়ী কৌশলগত অংশীদারত্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়। দুই দেশের বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্ব অত্যন্ত চমৎকার অভিহিত করে তিনি বলেন, ২০১৭ সাল হবে দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান ও বন্ধুত্বের বছর।

পরে শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের সামনে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, দুই দেশ সহযোগিতার নিবিড় সমন্বিত অংশীদারত্বকে দুই দেশ সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বে নিতে রাজি হয়েছে। কৌশলগত অংশীদারত্বের মাধ্যমে দুই দেশের জনগণের আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সি চিন পিং বলেন, ‘সমুদ্র বিষয়ে ও সন্ত্রাস মোকাবিলা, যৌথভাবে বিসিআইএসএম-এফসি, অর্থনৈতিক করিডর ও যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একযোগে কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।’ তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও সই হয়েছে। চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন ঐতিহাসিক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে। চীন বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে ও অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস এবং সমর্থন নিয়ে কাজ করে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে কয়েক মিনিট আগে আমাদের উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। আমরা “এক চীন নীতি”তে আমাদের জোরালো সমর্থন দিয়েছি। আমরা খুবই ঘনিষ্ঠভাবে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি।’

সি-খালেদা বৈঠক
খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রায় ৩০ মিনিট বৈঠক করেন সি। বৈঠক শেষে বিএনপি জানিয়েছে, বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীন আশা করে, ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকাকে বাংলাদেশ সমর্থন করবে।

অবশ্য এই বৈঠক নিয়ে চীনের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে গিয়ে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন খালেদা জিয়া।

বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৈঠকে উল্লেখ করেছেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় স্থাপিত হয়। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে অভূতপূর্ব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। চীন সব সময় বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। খালেদা জিয়া আশা করেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যক্রম, বিশেষ করে উন্নয়নকাজে চীনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে এবং পাশে থাকবে। মির্জা ফখরুল বলেন, চীন আশা করে, ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে চীন যে ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে উন্নয়ন ক্ষেত্রে, বাংলাদেশ তাকে সমর্থন করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *