ভোলায় বর্নাঢ্য আয়োজনে বিশ্ব ডিম দিবস পালিত  

Slider অর্থ ও বাণিজ্য
14628249_982208958557311_1633480660_n
প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস প্রান্ত, বৃহত্তর বরিশাল থেকে : ভোলায় বর্নাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব ডিম দিবস। এ দিবসের গুরুত্ত্ব ও তাৎপর্য অনেক। ১৯৯৬ সালে IEC ( International Egg Council ) ভিয়েনা কনফারেন্সের মাধ্যমে দিনটি সর্বপ্রথম উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে এ দিবসটি ২০১৩ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের ২য় শুক্র বার দিনটি পালিত হয়। মূলত: ডিমের গুনাগুন, ডিম উৎপাদন শিল্প , ব্যবসা, সাধারন ভোক্তা সহ সকল স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে সচেতনতা ও দেশীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আন্ত সম্পর্ক বৃদ্ধি এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য।
ডিম একটি অত্যন্ত সাধারণ খাবার। কিন্ত এর অসাধারণ পুষ্টিগুন ডিমকে স্বাতন্ত্র বহুমুখি প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদানের তালিকায় স্থান করে দিয়েছে। ডিম বিত্তবান থেকে দরিদ্র শ্রেণী সকলের পুস্টি চাহিদা মেটায় এবং সবার কাছে সমান গ্রহনযোগ্য। যারা মনে করে ডিম খেলে মানুষ মোটা হয়ে যায় বা হার্ট ডিজিজের সম্ভাবনা আছে তাদের জন্য চমকপ্রদ খবর হলো, Rochester Center for Obesity Research এর মতে বিষয়টি মোটেও সত্য নয়। বরং শরীর থেকে ৪০০ ক্যালরী কমাতে পারে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি ডিম। গবেষনায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন সকালের নাশতায় একটি ডিম মাসে তিন পাউন্ড ওজন কমাতে পারে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন পরামর্শ প্রদান করে যে, নির্দিষ্ট মাত্রায় ডিম গ্রহন হৃদ রোগের ঝুকি বৃদ্ধি করে না। ২০০৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক সমীক্ষায় দেখিয়েছে যে, অ্যাডোলেসেন্ট পিরিয়ডে বা পরবর্তীকালে সপ্তাহে ৬ টি করে ডিম খেলে ৪৪ ভাগ ব্রেষ্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশনের ভাষ্য মতে একজন সুস্থ্য সবল মানুষ প্রতিদিন একটি করে ডিম খেতে পারে। সঙ্গে আরও জানিয়েছেন ডিম হৃৎপিন্ডে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয়না, ফলে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকে। ডিমের সাদা অংশে কোন ফ্যাট থাকেনা, কিন্ত হলুদ অংশে মাত্র ৫ গ্রাম ফ্যাট আছে যার ক্ষতিকর অংশের পরিমান ১.৬ গ্রাম । আমরা সাধারণত খাদ্যের মাধ্যমে যে, কোলেস্টেরল পাই তা কোন মতেই রক্তে কোলেস্টেরল লেবেল বৃদ্ধি করে না। আরও একটি সমীক্ষায় জানা যায় যে দিনে দুটি ডিম রক্তে লোহিত কনিকা তৈরি করে এবং লিপিড প্রফাইলে কোন প্রভাব ফেলে না। এক সমীক্ষায় দেখা যায ৬৫ ভাগ বডি ওয়েট, ১৬ ভাগ বডি ফ্যাট এবং ৩৪ ভাগ কোমরে জমে থাকা মেদ কমাতে পারে ডিম। ডিম উচ্চ মানের প্রাকৃতিক প্রোটিন, প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর। ডিমে আছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন বি-১২। আমরা যে খাবার খাই, সেই খাবারকে ভেঙ্গে শক্তিতে রুপান্তরিত হতে সহায়তা করে ভিটামিন বি-১২। এই ভিটামিন সবচেয়ে বেশী গুরুতপূর্ন¡ ভুমিকা রাখে শরীর বৃদ্ধিতে। সুতরাং শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে ডিমের জুড়ি মেলা ভার। ডিমের ভিতরে আছে ভিটামিন ‘এ’ কেরোটিনয়েড, ল্যুটেন জিয়েক্সেথিন। এই সকল উপাদান দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি ও চোখের ছানি কমাতে সহায়তা করে। ডিমে আছে ভিটামিন ‘ডি’। পেশির ব্যথা কমাতে ও হাড় গঠনে এই ভিটামিন ‘ডি’ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ডিমের ভিটামিন ‘ই’ কোষ ও ত্বকে ফ্রি রেডিক্যাল নষ্ট করে স্কিন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ডিমের ভিতর অবস্থিত জিংক , ফসফরাস ও আয়রন মা এবং শিশুদের ইমিউন বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে। ফসফরাস দাত ও হাড় মজবুত করে। ডিমে প্রায় ৩০০ মাইকোগ্রাম কোলিন (Choline) থাকে যা কার্ডিওভাসকুলার সিসটেম, স্নায়ু যকৃৎ ও মস্তিস্ককে নিয়ন্ত্রন রাখে। মানুষের সুস্থ্য শরীর গঠনে ২১ টি এমিনো এসিড মূখ্য ভূমিকা পালন করে কিন্তু আমাদের শরীর অতিপ্রয়োজনীয় ৯ টি এমিনো এসিড তৈরি করতে পারেনা ফলে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়, আর এর জন্য আদর্শ প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট হল ডিম। অনেকে শখ করে নখ বড় রাখে এবং চুলের স্বাস্থ্য’/সৌন্দর্য্য নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নাই। নখ ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষা ও কোমল মসৃন স্বাস্থ্যোজ্জল চুলের জন্য ডিমের ভিতর অবস্থিত সালফারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন। ফলে সহজেই অনুমেয় যে, ডিম পুষ্টি গুনে অনন্য খাদ্য উপাদান। আবার মূল্যমানের দিক দিয়ে বিচার করলে বাজারের অন্য যে কোন খাদ্য উপাদান থেকে ডিমের মূল্য তুলনা মুলক অনেক কম। বাজারে এক হালি ডিমের মূল্য ৩২ টাকা। একটি পরিবারের একবেলা পূর্ণ পুষ্টি ও ভাতের সাথে তরকারীর চাহিদা পূরন করে এক হালি ডিম। অথচ ৩২ টাকা সমমূল্যে বর্তমান বাজার কোন প্রকার মাছ কিংবা ১দিনের সবজিও কেনা সম্ভব নয়। অন্যদিকে আমরা অনেকে বাজারের বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের চটকদার প্রচারনায় আকৃষ্ট হয়ে নিজের শিশু সন্তানদের স্কুলের টিফিনে বাজার থেকে কেনা বিভিন্ন খাদ্যপণ্য দিয়ে থাকি যা আপনার শিশুর জন্য আদৌ স্বাস্থ্যকর কিনা সেটা চিন্তা করিনা। কিন্তু অত্যন্ত সাধারণ একটি খাবার অথচ অবশ্বিাস্য পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ডিম শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পূর্নাঙ্গ ভূমিকা রাখে, দামও সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে, ফলে ডিমের মত উৎকৃষ্ট মানের অত্যাবশ্যক খাদ্য উপাদান আর কি হতে পারে।
14699845_982208925223981_591176447_n
“যদি সুস্থ থাকতে চান, প্রতিদিন ডিম খান”-এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস উদযাপন করল জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর, ভোলা। বর্নাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে। ডাঃ প্রদীপ কুমার কর্মকার, ডি.এল.ও, ভোলা এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অথিতি হিসেবে জনাব মোহাং সেলিম উদ্দিন, ডি.সি, ভোলা এবংবিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মঈনুল হোসেন ( বিপ্লব), বিশিষ্ট সমাজ সেবক, ভোলা। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ডাঃ হিরন্ময় বিশ্বাস, ইউএলও, চরফ্যাশন, ভোলা।
ডাঃ হিরন্ময় বিশ্বাস, ইউ.এল.ও, তার স্বাগত বক্তব্যে জানান ডিম একটি সাধারন খাদ্য হলেও এর রয়েছে অসাধারন পুষ্টিগুণ, ডিমে যে কোলেষ্টেরল রয়েছে তার বেশীরভাগই গুড কোলেষ্টরল। তিনি বিভিন্ন বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে বলেন প্রতিদিন নাস্তার সাথে একটা ডিম খেলে মাসে ৩ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব, ডিমের হলুদ অংশের গুড কোলেষ্টরল হৃদরোগ, ষ্ট্রোকের ঝুকি কমায়, তাই ডিমের হলুদ অংশ বা কুসুম খাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু অনেকে প্রচলিত ভুল ধারনা থেকে কুসুম খাননা। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট সমাজ সেবক, শিল্প মন্ত্রী জনাব তোফায়েল আহম্মদের যোগ্য উত্তরসুরী জনাব মোঃ মঈনুল হোসেন বিপ্লব জানান তিনি নিজেও একজন পোল্ট্রি খামারী, তাই খামারীদের কষ্ট তিনি অনুভব করতে পারেন, একদিনের মুরগির বাচ্চারর দাম, খাদ্যের দাম যাতে যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ সকলকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করেন। ভোলা প্রাণিডাক্তারের সংকট সমাধানে ডি.এল.ও, ভোলাকে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য অনুরোধ করেন। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ভোলা, জানান ডিমের ফোলিক এসিড, কোলিন নার্ভসেল গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে, তাই মেধাবী জাতি গঠনে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া অত্যাবশ্যক।
জেলা প্রশাসক, ভোলা মহোদয় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন ভোলা জেলা পোল্ট্রি খামারীদের প্রতিবন্ধকতার কথা তিনি শুনেছেন, অবিলম্বে খামারীদেরকে বিদ্যুৎ বিলে ২০% রেয়াতের বিষয়টি কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না শিঘ্রই তিনি তা খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি স্থানীয়ভাবে পোল্ট্রি খাদ্য তৈরীর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ শফিকুল ইসলাম, ডেপুটি কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ভোলা, জনাব আলহাজ্ব মোঃইউনুছ, ভাইস চেয়ারম্যান, ভোলা সদর, ডাঃ রাবেয়া শারমীন, ভি.এস, লালমোহন, জনাব মোঃ আলমগীর, সভাপতি ডিপ্লোমা লাইভষ্টক এসোসিয়েশন, ভোলা , জনাব এ.বি এম শাহজান,হ্যাচারী মালিক, জনাব আবুল হাসানাত জসিম, ইশতিয়াক পোল্ট্রি,চরফ্যাশন, ভোলা, জনাব মোঃ ইসমাইল, জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব, ভোলা প্রমুখ।
ভোলা জেলার ২৫০ জন খামারী, পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সদস্য নেতৃবৃন্দ বর্নাঢ্য র‍্যালী ও আলোচনা সভায় যোগদেন, অনুষ্ঠান শেষে আপ্যায়নে সকলকে ডিম খাওয়ানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *