এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ৬০১ প্রতিমা 

Slider টপ নিউজ
 14699741_320857894937316_201599855_n
প্রাণকৃষ্ণ বিশ্বাস প্রান্ত, বৃহত্তর বরিশাল থেকে : পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর পরিবেশে শেষ হয়ে গেল। মহালয়ার মাধ্যমে এই আনন্দঘন আয়োজনের প্রাথমিক পর্যায় শুরু হলেও মূল উৎসবের সূচনা হয় মূলত: ৬ষ্ঠী পূজা আরম্ভের মধ্য দিয়ে। ৭মী,৮মী,৯মী ও ১০মী পূজার পর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের এই প্রধান ধর্মীয় উৎসবটির সমাপনী সম্পন্ন হয়।শিল্প সংস্কৃতি তথা চারুকলার এক অপূর্ব সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে এটি নান্দনিক নিদর্শনের এক মূর্ত প্রতীক হয়ে ভক্ত হৃদয় ছুঁয়ে যায়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ০৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয় আনন্দঘন এ দুর্গাপূজার প্রারম্ভিকতা। সারাদেশ জুড়ে ২৯ হাজারের বেশী মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয় সার্বজনীন এ দুর্গোৎসব। বাগেরহাটের হাকিমপুর গ্রামের সিকদার বাড়ীর পূজা মন্ডপটির পূজা সমগ্র এশিয়ার মধ্যে সেরা আয়োজন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।পাশাপাশি এটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ মন্ডপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।প্রতিভাধর গুনী ভাস্কর ও মৃৎশিল্পীদের সুনিপুণ রংতুলির আঁচড়ের নান্দনিকতায় নিষ্প্রাণ প্রতিমাগুলোতে জীবন্ত দেবদেবীর আদলের ন্যায় দর্শনীয় কারুকাজ ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। পৃথিবীর যেকোন মন্ডপের পূজার প্রতিমার সংখ্যা ও সৌন্দর্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে সিকদার বাড়ীর পূজামন্ডপের এ নয়নাভিরাম উপস্থাপন। পূজামন্ডপগুলো ঘুরে ঘুরে দেখার তাৎক্ষণিক অনুভূতি সত্যিই অতুলনীয়। কথা হল এ আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী লিটন সিকদারের সাথে। গর্বিত হৃদয়ে তিনি প্রকাশ করলেন তাঁর এ সুন্দর আয়োজনের কথা। তিনি জানালেন ১৫ জন চারুশিল্পীর সাত মাসের মেধা ও পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ৬০১ খানি প্রতিমা বিশিষ্ট এ নয়নাভিরাম মন্ডপটির চমকপ্রদ ও রমনীয় প্রকাশ ঘটেছে।শিল্পীদের দক্ষতার চেয়ে লিটন সিকদার ও তার স্ত্রী পূজা সিকদারের শৈল্পিক নির্দেশনা প্রশংসার দাবী রাখে। অভিভূত হতেই হয় প্রতিভাধর এ দম্পতীর ব্যাতিক্রমী শিল্প চেতনার প্রকাশ দেখে। আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে ও ঈশ্বরীয় অনুভূতির প্রকাশ ঘটবেই মন্দিরের প্রতিমা দর্শন মাত্রই ধার্মিক কিংবা অধার্মিক প্রতিটি হৃদয়ে হৃদয়ে। কথা বলে জানা গেল লিটন সিকদার ও পূজা সিকদারের শিল্প চেতনার বাস্তব রূপদান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের প্রাক্তন কৃতি ছাত্র দিব্যতনু দাশ। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন প্রতিভাবান গুনী ভাস্কর আমিনুল ইসলাম আশিক ও তার সহযোগীবৃন্দ। এমন দেবপুরী সম সিকদার বাড়ীর পূজামন্ডপের সৌন্দর্যময় প্রতিমা দর্শনে দেশ বিদেশের লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থী ভক্তের আগমন ছিল পূজার দিনগুলির নিত্যদিনের চিত্র।জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের মিলন মেলা ছিল পূজার এই আনন্দঘন দিনগুলোতে। হিন্দু ধর্মের চার যুগের সকল দেবদেবী ও বিভিন্ন অবতারের মূর্তি গুলো খুব সজেই ধর্মীয় ইতিহাসকে দর্শনার্থীদের হ্ররদয়ঙ্গম করতে সহায়তা করছে। প্রতিমা গুলোর নান্দনিক উপ্সথাপনা দর্শনার্থীদের সহজেই আকৃষ্ট ও শ্রদ্ধাবনত করবেই। সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ও কলিযুগের ধর্মীয় সংস্কৃতি, পৌরনিক কাহিনী, বিভিন্ন পার্বনের মনোহরী দৃশ্য অবলোকনে দর্শকহৃদয় আনন্দাভিভূত।৬০১ টি প্রতিমা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হিন্দুধর্মীয় ধর্মপুস্তকের কাহিনীর বিশালত্বকে সংক্ষিপ্ত পরিসরে সর্বসম্মূখে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছে। শারদীয় দুর্গোৎসব যেন স্বমহিমায় নতুনের বারতা নিয়ে মানব হৃদয়কে উচ্ছসিত করছে।শৈল্পিক নৈপুন্যে নির্মিত ও স্থাপিত প্রতিমাগুলো সৌকর্য বাড়ানোর পাশাপাশি আলোক সজ্জার বাহারী ব্যাবস্থাপণায় অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে এর মহত্ত্বগাঁথা সর্বসম্মূখে তুলে ধরতে সমর্থ করেছে। সিকদার বাড়ী দুর্গোৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ছিল পদ্মফোটা জলাধারে নির্মিত ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্ম।এই ইন্সটলেশন আর্টটির মাধ্যমে ৪০ ফুট দীর্ঘ কৈলাস পর্বতের চুড়ায় ধ্যানমগ্ন মহাদেব ও তার জটায় মা গঙ্গার ঝর্ণাধারায় নেমে আসার দৃশ্য চমৎকার ভাবে উপস্থাপিত করেছেন নন্দিত কারুশিল্পীবৃন্দ।পর্বতের চুড়ায় মেঘের ভেলা, পাদদেশে রাম, সীতা, লক্ষন ও রামভক্ত হনুমান, জলাধারের ভাসমান পদ্মফুলের সাথে রাজহংসের উপস্থিতি শিল্পকর্মটিকে দর্শনীয় ও নান্দনিক পূর্নতা দান করেছে। ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যতিক্রমী সংযোজনে সিকদার বাড়ীর দুর্গোৎসব চিত্র স্বর্গপুরীর ন্যায় প্রতীয়মান হয়েছে প্রতিটি দর্শনার্থীর কাছে।দেবদেবীর প্রতিরূপ তুলে ধরার মাধ্যমে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ সনাতন কাহিনীর শ্রেষ্ঠতম অবতারণা তথা সমাজের অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার ও কুসংস্কার দূরীভূত করার এক প্রকৃষ্ট উপস্থাপন। হাকিমপুর এর পরিবেশ দুর্গোৎসব এর এ পাঁচদিনে দেশ বিদেশের প্রতিদিনকার তিন লক্ষাধিক শিশু,যুবক-যুবতী,বৃদ্ধ-বৃদ্ধার পদচারনায় মুখরিত ছিল।গ্রামীন মেলার বাহারী আয়োজন ছিল আর এক অনন্য দৃষ্টান্ত।বর্তমান সরকারের প্রদত্ত নিরাপত্তা বেস্টনী ছিল প্রশংসনীয়। উদ্যোক্তা লিটন সিকদার জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি মনিটরিং করেছেন উল্লেখিত এ আয়োজনের। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, র‍্যাব, আনসার দল মিলে কঠোর নিরাপত্তা দিয়েছেন।এছাড়া স্থানীয়ভাবে দুই শতাধিক ভলান্টিয়ার সার্বিক্ষনিক সজাগ দৃষ্টি রেখে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বজায় রাখতে সমর্থ হয়েছে।শতাধিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে বিস্তৃত এ এলাকাজুড়ে। সব মিলিয়ে এলাকাটিতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার ছিল সর্বক্ষণ। লিটন সিকদার তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন,” আমার মা-বাবা, আমার সহধর্মিণী পূজা সিকদার, ভাই অসীম সিকদার, শিশির সিকদার এ মহতী আয়োজনের মূল প্রেরনা শক্তি।” গ্রামবাংলা নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কমের প্রতিনিধি হিসেবে গত মংগলবার স্বপরিবারে উপস্থিত থেকে এ সুন্দর আয়োজনকে উপভোগ্য হিসেবে গ্রহন করায় নিজেকেও ধন্য মনে হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *