ঢাকা; আজ শুভ ষষ্ঠী। দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাস। আজ থেকেই শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। হিমালয়ের কৈলাশ থেকে সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে প্রতি বছর শরৎকালে দশভূজা দুর্গা দেবী আসেন সমতল ভূমির এই বাংলায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন গণেশ, কার্ত্তিক, লক্ষ্মী আর সরস্বতীকে। গতকাল দেবীর বোধন শেষে ষষ্ঠী তিথির সূচনা হয়েছে। আজ কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। ঢাকের বোল, মন্ত্র ও চণ্ডীপাঠ, কাঁসর ঘণ্টা, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে কেঁপে উঠবে মন্দির পূজামণ্ডপ। মন্দিরে, মণ্ডপে উচ্চারিত হবে মহামন্ত্র ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেন সংস্থিতা, নমস্তৈ নমস্তৈ নমস্তৈ নমোঃ নমঃ’।
ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী আজ সকালে বেল গাছের নিচে বিল্লে ষষ্ঠী পালন করা হবে। সন্ধ্যাকালে হবে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ দিন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশম দিন অবধি পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব হয়। দুর্গাপূজা মূলত পাঁচদিনের অনুষ্ঠান হলেও মহালয়া থেকেই প্রকৃত উৎসবের সূচনা ও কোজাগরী লক্ষ্মীপূজায় এর সমাপ্তি ঘটে। আজ ষষ্ঠীর আনুষ্ঠানিকতা শেষে পর্যায়ক্রমে ২১শে আশ্বিন (৮ই অক্টোবর) মহাসপ্তমী, ২২শে আশ্বিন (৯ই অক্টোবর) মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, ২৩শে আশ্বিন (১০ই অক্টোবর) মহানবমী এবং ২৪শে আশ্বিন (১১ই অক্টোবর) বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে এই মহানুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে। গতকাল সায়ংকালে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বিকাল থেকে রাত অব্দি পূজামণ্ডপগুলোতে মন্ত্র ও চণ্ডীপাঠ, পূজার্চনা ও প্রসাদ বিতরণ হয়। আজ ষষ্ঠী শেষে আগামীকাল মহাসপ্তমী পালিত হবে। মহাসপ্তমীর প্রভাতে নবপত্রিকা প্রবেশ ও ঢাক-ঢোল-কাঁসর বাজিয়ে কলাবউ স্নান ও আদরিণী উমার সপরিবারে তিথি বিহিত পূজা শেষে সপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা (১৪২৩ বঙ্গাব্দ) মতে এবার দেবী আসছেন ঘোটকে চড়ে। গমনও করবেন একই বাহনে। সনাতন ধর্মের ইতিহাস অনুযায়ী মূলত দুর্গাপূজা বসন্তকালীন পূজা। কিন্তু ত্রেতা যুগে শ্রী রাম চন্দ্র রাবণের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে জয়লাভের আশায় শরৎকালে দুর্গা দেবীকে আহ্বান করে অকাল বোধন করেছিলেন। সেই থেকে দুর্গাপূজা শরৎকালে পালিত হয়ে আসছে। ঋভা চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের হিসেবে এবার সারা দেশে ২৯,৩৯৫টি স্থায়ী অস্থায়ী মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজধানীতে এ সংখ্যা ২২৪টি। গতবারের চাইতে এ বছর ৩২১টি পূজা বেড়েছে বলে জানান পরিষদের নেতৃবৃন্দ। এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে যেকোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে সারা দেশের মণ্ডপগুলোতে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, আর্মড পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। এ ছাড়া পূজা কমিটির নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিমও নিরাপত্তার বিষয়ে সক্রিয় থাকবে। এদিকে পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় উৎসব উপলক্ষে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ সারা দেশের পূজামণ্ডপগুলোকে সাজানো হয়েছে রঙিন সাজে। দেশজুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। উৎসবকে রঙিন করতে প্রস্তুতিও শেষ করেছেন পূজারিরা। দুর্গোৎসব উপলক্ষে পূজামণ্ডপগুলোতে পাঁচদিনব্যাপী থাকবে পূজার্চনা, আরতি, ভক্তিমূলক গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।