৩০শে এপ্রিল ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণকারী অ্যান্তোনিও গুটেরেজ একজন পর্তুগীজ রাজনীতিবিদ। তিনি পর্তুগালের রাজনৈতিক দল সোস্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ ছাড়াও ১৯৯৫-২০০২ পর্যন্ত তিনি পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী, এবং ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন সফলতার সাথে। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন মানুষ শরণার্থী এবং এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। নয়া মহাসচিব নির্বাচনে অ্যান্তোনিও গুটেরেসের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মতো পরাশক্তিকে শেষ পর্যন্ত গুটেরেস-এর প্রার্থিতা বিষয়ে সমঝোতায় আসতে প্রণোদনা দিয়েছে। সিরিয়া ও ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বিভাজনের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের এই সমঝোতার বিষয়টি বিশ্লেষণ করে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন বলছে, এই সমঝোতা আগামী দিনগুলোতে সিরিয়া বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইতিবাচক সমঝোতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি করেছে।
একবিংশ শতকের লৈঙ্গিক বাস্তবতার সাথে তাল মিলিয়ে প্রথম দিকে একজন নারী মহাসচিব নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও, সমকালীন বিশ্ববাস্তবতায় মহাসচিব পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নারী প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার বিষয়গুলো যাচাই বাছাইয়ের পর দুই বৃহৎ পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া শেষের দিকে নারী মহাসচিব নির্বাচনের ধারণা থেকে সরে আসে। অবশ্য রাশিয়া শেষ পর্যন্ত এবারের মহাসচিব পূর্ব ইউরোপ থেকে নির্বাচনের অলিখিত প্রথার পক্ষে অবিচল থাকে। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের প্রার্থী পর্তুগালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রাক্তন হাইকমিশনার অ্যান্তোনিও গুটেরাস প্রথম থেকেই ফ্রন্ট রানার ছিলেন। এমনকি গোপন ব্যালটে অনানুষ্ঠানিক ভোটের পঞ্চম ধাপেও তিনি সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন। শেষ ও ষষ্ট ধাপের স্ট্র পোলের আগে এক্ষেত্রে দুর্দান্ত কূটনৈতিক ভূমিকা রাখেন জাতিসংঘে মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি সামান্থা পাওয়ার। শেষ পর্যন্ত রাশিয়া পূর্ব ইউরোপ গ্রুপের অলিখিত প্রথা থেকে সরে আসে এবং ষষ্ট রাউন্ডের অনানুষ্ঠানিক ভোটে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি ভোটের মধ্যে গুটেরেস পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের ভোটসহ মোট ১৩টি ভোট পান এবং দুটি সদস্য রাষ্ট্র তাঁকে ভোট প্রদান থেকে বিরত থাকে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সার্বিয়ার ভুক জেরেমিক এবং সেøাভাকিয়ার মিরোসøাভ লাঝাক উভয়েই ৭টি করে হ্যা, এবং ৬টি করে না ভোট পেয়েছেন। চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন বুলগেরিয়ার নারী প্রার্থী ইরিনা বোকোভা। তিনি ৭টি হ্যা ভোট এবং ৭টি না ভোট পেয়েছেন।
এদিকে প্রথা মোতাবেক এবারের মহাসচিব পূর্ব ইউরোপ থেকে নির্বাচিত না হওয়ায় পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো নিজেদেরকে বঞ্চিত ভাবতে শুরু করেছে বলে প্রতিবেদন করেছে লন্ডনের গার্ডিয়ান। অন্যদিকে একজন নারী মহাসচিব নির্বাচন করতে ব্যর্থ হওয়ায় নিরাপত্তা পরিষদের ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই। এ বিষয়ে আন্দোলনরত সংগঠন ‘ক্যাম্পেইন টু ইলেক্ট এ ওম্যান সেক্রেটারী জেনারেল’-এর সভাপতি ও নিউ ইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের প্রফেসর জিন ক্রাসনো নিরাপত্তা পরিষদকে ‘ওল্ড বয়েজ ক্লাব’ বলে মন্তব্য করে বলেছেন, ১৪ জন পুরুষ ও একজন নারী (সামান্থা পাওয়ার) একবিংশ শতকের বাস্তবতায় মহাসচিব পদে লৈঙ্গিক সমতার বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন এটাই স্বাভাবিক। কেননা জাতিসংঘ এখনো দরজার আড়ালে ভাগবাটোয়ারার জন্য সেই পূরনো ‘ওল্ড বয়েজ ক্লাবই রয়ে গেছে’।
এদিকে নিরাপত্তা পরিষদে সমঝোতার মাধ্যমে আমেরিকান পছন্দের প্রার্থীকে মহাসচিব পদে বিজয়ী করতে পারায় দেশটির জাতিসংঘ স্থায়ী প্রতিনিধি সামান্থা পাওয়ারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর ছাপ পড়েছে নিউ ইয়র্কেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের ধরনে। ‘আমরা কি তাহলে ধরে নেবো যে রাশিয়া-আমেরিকা নয়া সমঝোতার ধারা শুরু হয়েছে? আপনি কিভাবে রাশিয়াকে রাজি করতে পারলেন? জবাবে সামান্থা পাওয়ার বলেন, দিনটি ছিলো ঐক্যের- ইট ওয়াজ এ ডে অফ ইউনিটি।