ভারতের বুধবার রাতের হামলাকে ‘আগ্রাসী আচরণ’ ও এলওসিতে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নওয়াজ বলেন, তাঁর দেশ ভারতের যেকোনো আক্রমণাত্মক পরিকল্পনার জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে। অন্যদিকে হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল আবারও মন্ত্রিসভার বৈঠক করার কথা ছিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির। তবে রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ভারত সীমান্তে ১০ হাজারের বেশি লোককে নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে জম্মু ও কাশ্মীর সীমান্তের ৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটার এলাকায় নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
যেসব মানুষকে গ্রাম থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকে বলছেন, পেকে ওঠা ফসল খেতে ফেলে রেখেই তাঁদের চলে যেতে হচ্ছে। ভারতের পাঞ্জাব সরকার বলছে, ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি বা ফসলের খেত পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে তারা। সব পুলিশ সদস্যের ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের পর দুই দেশেরই সীমান্তের অনেক জায়গায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ছাড়াও পাঞ্জাব রাজ্যের বহু গ্রাম থেকে বাসিন্দারা সরে যাচ্ছেন। পাঞ্জাবে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দশ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকার গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই।
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কথিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে ভারতীয় সেনাদের ‘সার্জিক্যাল হামলার’ পরে ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতেও পাকিস্তানের পাল্টা হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাকিস্তান থেকে বিবিসির সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, সেখানেও সীমান্তের কিছু এলাকা থেকে মানুষজন সরে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ গতকাল শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, কাশ্মীর দেশবিভাগের সময় থেকে সৃষ্ট সমস্যা। এটা হুট করে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও টেলিভিশন জানিয়েছে, কাশ্মীর পরিস্থিতি ও ভারতের আক্রমণ নিয়ে আলোচনার জন্য সোমবার পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এমন সব দলের নেতাদের নিয়ে জরুরি অধিবেশন আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।
পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বার্তায় জানিয়েছে, গতকাল এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরিফ বলেছেন, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দেশের সুরক্ষায় সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত রয়েছে। বুধবার রাতের হামলার সমুচিত জবাব দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমাদের প্রতিপক্ষের যেকোনো দুঃসাহসের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।’
এদিকে হামলার সময় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য আটক হওয়া এবং আটজন সেনাসদস্য নিহত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গতকাল বলেছেন, পাকিস্তানের সেনাসদস্যদের হাতে আটক হওয়া ভারতীয় ৩৭ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ওই সদস্য চান্দু বাবুলালকে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ওই জওয়ানকে দ্রুত ছাড়িয়ে আনতে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলেছে, ওই সেনাসদস্য ভুলক্রমে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ঢুকে পড়েছেন। সেনাবাহিনীর এক বার্তায় বলা হয়েছে, চান্দু বাবুলাল ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’ অংশ নেননি।
পাকিস্তানের গণমাধ্যমে কয়েকটি মরদেহের ছবি দেখিয়ে সেগুলোকে ভারতীয় সেনাদের লাশ বলে দাবি করা হয়েছে। তবে ভারত তা উড়িয়ে দিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এনডিটিভিকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে অভিযান চালানোর পর সব সেনাসদস্যই অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছেন। পাকিস্তানের গণমাধ্যমে যে মরদেহগুলোর ছবি দেখানো হচ্ছে তা ভুয়া এবং সাজানো।
চীনের আশঙ্কা: ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকা চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস–এর বরাতে জানিয়েছে, চীন সরকারের আশঙ্কা, ভারত পাকিস্তান সীমান্তে পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান মোতায়েন করতে পারে।
বান কি মুনের অভিযোগ: এদিকে পাকিস্তানের ডন পত্রিকা জানিয়েছে, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ‘ভারতের অসহযোগিতার কারণে’ ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষণ দল যথাযথভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। গতকাল জাতিসংঘে নিযুক্ত পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি মালিহা লোধির সঙ্গে এক বৈঠকে বান কি মুন এ মন্তব্য করেন বলে ডন–এর খবরে জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, সার্ক সম্মেলন স্থগিত হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
কাশ্মীরে আরও হামলার আশঙ্কায় আতঙ্ক
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা হামলার পর সীমান্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) দুই দেশের সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সংঘাতের আশঙ্কায় কাশ্মীর ও পাঞ্জাব সীমান্তের উভয় পাশের লোকজন নিরাপদ দূরত্বে সরে যাচ্ছে।